ইবি: ফেসবুক পেজে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৭৪ ছাত্রীকে জড়িয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়াটা ‘নিছক মজা’ ছিলো বলে জানিয়েছেন পেজের অ্যাডমিন মিজান বিশ্বাস।
শনিবার (২১ আগস্ট) স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এমন কথা জানান।
মিজান বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলায়।
‘ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন, ইসলামীক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ পেজে ৭৪ জন ছাত্রীর ছবি জড়িয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বেশকিছু সূত্র ধরে পেজের অ্যাডমিন মিজান বিশ্বাসকে শনাক্ত করা হয়।
এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিষয়টি মজা করে করেছি। অনেকদিন পেজে কিছু পোস্ট করা হয় না। তাই আমি মজা করে ওই পোস্টটি করেছিলাম। কিন্তু আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। ’
এর আগে, শুক্রবার (২০ আগস্ট) আনুমানিক রাত ১টার দিকে মিজান পেজ থেকে আবারো স্ট্যাটাস দিয়ে একই কথা জানান।
স্ট্যাটাসে মিজান বলেন, ‘দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েই কনফেশন পেজ আছে। সেখানেও এভাবে সবাই কনফেশন পোস্ট করে। এটা সাধারণ ব্যাপার বলেই আমরা পাবলিকিয়ানরা মেনে থাকি। এই পেজটা বা এই ধরনের পেজ মজা করার জন্য খোলা হয়ে থাকে। সেভাবেই নিয়মিত পোস্ট হয়। এই পেজটা অনেক দিন ধরে ইনেক্টিভ ছিলো। তাই গতকাল রাতে ভাবা হয়েছিল এ পর্যন্ত কনফেশন হওয়া ছবি একবারে পোস্ট দেওয়া যাক। এতে রিস হবে পোস্টটা। পোস্ট দেওয়ার পর অনেকে আপত্তি তুললে সেটা দ্রুততার সঙ্গে রিমুভ করে দিই। ’
ক্যাপশন নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছেন যদিও এটা মজা করে দেওয়া। যেটা নিয়ে কারো কারো আপত্তি (ইমু নম্বর), কারো নম্বরই জানা নেই। কিন্তু হ্যাঁ, ক্যাপশনের ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া উচিত ছিলো। এটাকে কেউ কেউ মজা হিসেবে নাও নিতে পারে এটা প্রথমে ভাবনাতে আসেনি। কেউ খারাপভাবে নিতেই পারে এটা তার অধিকার। এটাকে ইনভ্যালিড ভাবছি না। স্পষ্ট বলছি এটা আমার ভুল। আমার আরো সচেতনভাবে মজা করা উচিত ছিলো।
তবে পেজে দেওয়া অ্যাডমিনের (মিজান) এ স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীদের মনে কোনো সহানুভূতির জায়গা পায়নি। তার স্ট্যাটাসের নিচে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার উদ্দেশ্য আক্রমণাত্মক কমেন্ট করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পেজের অ্যাডমিনকে (মিজান বিশ্বাস) দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ‘ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন’ নামে আরো যতো পেজ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে সেগুলো ব্যান করার দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে জঘন্যতম কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাকে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। এরকম অপরাধের বাসা এখনো যাদের ভেতর রয়েছে তাদের কাছে যেনো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। ’
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ছাত্রী। শনিবার বিকেলে হিউমেন রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগটি দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি আইসিটি সেলকে নির্দেশ দিয়েছি অভিযুক্তকে খুঁজে বের করতে। কে/ কারা এর সঙ্গে জড়িত খুঁজে পেলে আমি কঠোর পদক্ষেপ নিবো। তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। ’
শুক্রবার (২০ আগস্ট) আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে ‘ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন, ইসলামীক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ পেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪ ছবি জড়িয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। পরবর্তীকালে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পেজ থেকে স্ট্যাটাসটি সরিয়ে ফেলেন পেজের অ্যাডমিন। এমনকি পেজটিকেও তাৎক্ষণিক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
>>>ইবির ৭৪ ছাত্রীর ছবি দিয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২১
এনটি