ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অনশনে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক দিলেন করোনার সতর্কবার্তা!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
অনশনে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক দিলেন করোনার সতর্কবার্তা! অনশনে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রী। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) অনশনে প্রায় অচল শিক্ষার্থীদের জীবন। শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) অপসারণ।

আর সেই পণ পূরণ করতে তারা বাজি রেখেছেন জীবন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ২৪ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেছিলেন। এদের মধ্যে ১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন হাসপাতালে। অনশন শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেও তাদের মুখে কিছু দিতে পারেননি চিকিৎসকরা। কখন কার কি হয়, তা অনুমান করা মুশকিল। এমন অবস্থায় ঘাপটি মেরে বসা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ পরিস্থিতির উপসংহার কি, কেউ ধারণা দিতে পারছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে,  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বাসার ফটকে মোতায়েন করা রয়েছে পুলিশ। একপাশে ব্যানারে লেখা ভিসির অপসারণ চাই। ফটকের সামনেই শিক্ষার্থীদের অনশনের তাবু। পাশেই রাখা অ্যাম্বুলেন্স। কিছুক্ষণ পর পর বেজে ওঠে সাইরেন। সাইরেন বাজতেই বুঝতে বাকি নেই, এই বুঝি আরেকজনকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে! এমন অবস্থায় চলছে অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দিনরাত।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে অনশনস্থলের পাশেই দেখা হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরের সঙ্গে। অবশ্য তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন বা এ বিষয় সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের  নির্দেশনা রয়েছে। এ মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া ক্যাম্পাস খোলা থাকায় অনেকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ, তাই বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে এসে জড়ো না হওয়ার অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। এক্ষেত্রে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। ’

অনশনস্থলে দায়িত্বে থাকা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এখানে ২৪ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। একজনের বাবা অসুস্থ হওয়ায় তিনি চলে যান। বাকি ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাতজন অনশনস্থলে রয়েছেন। বাকিদের সিলেটের তিনটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। অনশনরতদের কারো ব্লাড প্রেসার (রক্তচাপ) ঠিক থাকতেছে না। কারো অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে।  কারো খিঁচুনি উঠেছে। এ অবস্থায় কেউ যদি খাবার গ্রহণ না করে, তাহলে কেবল স্যালাইনের মাধ্যমে তাদের বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাছাড়া একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। তাকে বিশেষভাবে পরিচর্যায় সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক ও নার্স রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। করোনা থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়ে ডা. নাজমুল বলেন, অনশনস্থলে যারা রয়েছেন, তাদের মাস্ক পরিধান করে থাকতে এবং অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছি। আর অনশনস্থলে জনাকীর্ণতা পরিহারেও সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে, দুপুর সোয়া ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে ৭২ ঘণ্টা চলমান অনশনে শিক্ষার্থীরা না খেয়েই রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাদের অবস্থা মুহূর্তের মধ্যেই পরিবর্তন হচ্ছে। এই সংখ্যা ক্রমশ; বাড়ছে। হাসপাতালে যারা আছেন, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।

অনশনরত ছাত্রী নিশাতের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা  বলেন, তার খিঁচুনি শুরু হওয়ার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ইসিজি ও অন্যান্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে।  
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শিশির চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের মুখে কিছু খাওয়ানো না গেলে অবস্থা চরম আকার ধারণ করতে পারে। আরও দুই শিক্ষার্থীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। একজনের তীব্র জ্বরের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক চলছে। আরও দুজনকে নেবোলাইজার দেওয়া হচ্ছে। এরপরও তারা অনশন ভাঙছেন না।

অনশনরত কাজল দাস বলেন, ‘অনশনের ৭২ ঘণ্টা হয়ে গেছে। শিক্ষকরা মুখে বলেন, আমরা তাদের সন্তানতুল্য। আমাদের জন্য তাদের কোনো চিন্তা নেই। একটা শিক্ষক আমাদের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করেননি। শিক্ষার্থীরা মারা যাচ্ছেন, বলতেই একজন শিক্ষক বলেন, কান্নাতো আমরাও করতে পারি, দেখেন শিক্ষকরা এতো নির্লজ্জ। আরেক শিক্ষককে ভিসির অধীনে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, আমার ছয়টি মুখে অন্ন তুলে দিতে হচ্ছে। আর যে ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে, সেটার জন্য ক্ষমাও চাওয়া হয়নি। ফলে আমি অনশন করছি, মরণ হলেও ভিসি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।