সাভার (ঢাকা): ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে দু'টি বিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিজেই সেই দুই কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন। যেখানে তার সেই দু'টি কলেজের একটিরও নেই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কোনো অনুমোদন।
মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম অনুমোদনহীন ধামরাইয়ের 'গোমগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ' ও সাভারের আমতলা 'হাজী সুলতান উদ্দীন বিএম অ্যান্ড ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই দু'টি কলেজেরই অধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ধামরাইয়ের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের প্রচেষ্টায় ২০০৪ সালে সাভারের কবিরপুর এলাকায় 'আইবিএম' নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৬ সালে কলেজটি ধামরাইয়ের আমতলা এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। এ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছিলেন ধামরাইয়ের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। ২০২০ সালে কলেজের আর্থিক অনিয়মের কারণে ম্যানেজিং কমিটি আইবিএম কলেজ থেকে শহীদুল ইসলামকে অব্যাহতি দেন। এরপর শহীদুল ইসলাম শিক্ষা বোর্ডের কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই ২০২০ সালে ধামরাইয়ের গোমগ্রাম এলাকায় 'গোমগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ' প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি নিজেই অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরও জানা গেছে, এরপর ২০২১ সালে আবার শহীদুল ইসলাম শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই আমতলায় অনুমোদনহীন আইবিএম কলেজের প্রাচীর ঘেসে অপর একটি ভবন ভাড়া নিয়ে 'হাজী সুলতান উদ্দীন বিএম অ্যান্ড ডিগ্রি কলেজ' নামে আরেকটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজেরও তিনি নিজেই অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন এবং শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেছেন।
এলাকার মানুষের অভিযোগ অনুমোদনহীন কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে তাদের অন্ধকারের দিকে ফেলে দিচ্ছেন শহিদুল ইসলাম। একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি কলেজ থেকে কমপক্ষে ৩ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রেখে করার নিয়ম। কিন্তু তিনি বোর্ডের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছেন একসঙ্গে দু'টি কলেজ। আবার নিজেই দু'টি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, শহিদুল ইসলাম একাই দুটি কলেজের অধ্যক্ষ। কিন্তু তার দু'টি কলেজই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনহীন। আগের কলেজে অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। এই কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হতে পারে।
এসব বিষয়ে কাড়িগরি শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেন বোর্ড অনুমোদিত আইবিএম কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই একাই দুটি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন ও শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হবেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিদর্শক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম শিক্ষা বোর্ড থেকে এখনো তার দুটি কলেজের কোন অনুমোদন না নেওয়ার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আইবিএম কলেজের অর্ধেক এখনো আমার নামে। তারা চক্রান্ত করে আমাকে বের করে দিয়েছে। আমি দু'টি কলেজেরই প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। আর আইবিএম কলেজের মালিকানা দ্বন্দ্বের কারণেই আমি পাশের ভবন ভাড়া নিয়ে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এতে দোষের কিছু নেই।
এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খান বলেন, কোনো কলেজের প্রাচীর ঘেসে আরেকটি কলেজ হওয়ার বিধান নাই। তাছাড়া অনুমোদিত আইবিএম কলেজের পাশের ভবনেই ভাড়া নিয়ে একই ধরনের কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেও তার অনুমোদন দেওয়া হবে না। আইবিএম কলেজের একটি অভিযোগপত্র এসেছে। আমরা অনুমোদনহীন কলেজকে বিষয়টি অবগত করে চিঠি পাঠাবো। এছাড়াও একই ব্যক্তি দুটি কলেজের অধ্যক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নাই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
এসএফ/এসআইএস