ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

দুই মাস পর সভাপতি জানলেন, তার স্বাক্ষরে হয়েছে সহ-সুপার নিয়োগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
দুই মাস পর সভাপতি জানলেন,
তার স্বাক্ষরে হয়েছে সহ-সুপার নিয়োগ

সিরাজগঞ্জ: মাদরাসার সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা দুই মাস পরে জানতে পারলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হঠাৎ মাদরাসা পরিদর্শনে গিয়ে দেখলেন নতুন সহ-সুপারিনটেনডেন্টকে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম পদ্মপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়। তার নিয়োগ কীভাবে হলো জিজ্ঞেস করলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সুপারিনটেনডেন্ট।

এমন অভিযোগ করে মঙ্গলবার (১০ মে) সন্ধ্যায় তালম পদ্মপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ফরিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সহ-সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো কাগজেই আমি স্বাক্ষর দেইনি। অথচ আমার স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ ও এমপিও করা হয়েছে। এ বিষয়ে ম্যানিজং কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।  

কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুর রহিমের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল করিম ও তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন মিলে ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে মোহাম্মদ আলী নামে একজনকে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগ দেন।  

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ কোনো সদস্যকে কিছু না জানিয়ে সবার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া মিটিং ও রেজুলেশনের মাধ্যমে ২৮/৮/২০২১ তারিখে একটি পত্রিকায় সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তারা। মূল প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর সহায়তায় আরও তিন প্রার্থীকে দিয়ে আবেদন করানো হয়।  

সুপারিনটেনডেন্ট সভাপতিকে না জানিয়ে ভুয়া নিয়োগবোর্ড গঠন করেন। তারা ডিজির প্রতিনিধিকে উপস্থিত না করে ৫/১১/২০২২ তারিখে ভুয়া নির্বাচনী বোর্ড গঠন দেখিয়ে শুধুমাত্র পেপার ওয়ার্কের মাধ্যমে নিয়োগ দেখিয়ে ঢাকায় গিয়ে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর নেন এবং ২১ নভেম্বর মোহাম্মদ আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রে সভাপতির স্বাক্ষর জাল/স্ক্যান করে অনলাইনে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হলে ওই শিক্ষকের এমপিও মঞ্জুর হয়।

এদিকে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন বিলে সভাপতির স্বাক্ষর না নেওয়ায় সন্দেহ হয় তার। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে মাদরাসায় গেলে মোহাম্মদ আলীকে দেখতে পান। তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে নিজেকে মাদরাসার সহ-সুপারনিটেনডেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন। এ বিষয়ে সুপার আব্দুল করিমকে জিজ্ঞেস করলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সভাপতিসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, সুপার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিলে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।  

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতিবাজ সুপার মাদরাসার এমপিও কপিতে শিক্ষকদের পদবি উল্লেখ না থাকার সুযোগে কৃষি শিক্ষক পদে পর পর দু’জনকে নিয়োগ দেন এবং ভুল তথ্য দিয়ে দু’জনকেই এমপিওভুক্ত করেছেন।  

এ বিষয়ে তালম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, সভাপতিসহ ম্যানেজিং কমিটিকে বাদ দিয়ে সহকারী সুপার পদে নিয়োগের ঘটনাটি আশ্চর্যজনক। ওই মাদরাসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ম হলো কৃষি শিক্ষক পদে দু’জনকে নিয়োগ ও এমপিওকরণ হয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে তালম পদ্মপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. আব্দুল করিমকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

নিয়োগ প্রক্রিয়া ফেয়ার হয়েছে উল্লেখ করে তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, নিয়োগে যাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি, তারাই অভিযোগটা করেছেন। সভাপতি ও ডিজির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। এখানে টাকা লেনদেনের কোনো বিষয় নেই। মাত্র এক হাজার টাকার কিছু বেশি বেতনের জন্য কেউ ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দেবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।  

তবে, এ পদের বেতন ২৫ হাজার টাকা স্কেলে হয় বলে অভিযোগকারীরা বলছেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ বলেন, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বরাবর অভিযোগটি করা হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।