নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরার এক কৃষকের বাড়িতে চলতি শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক শ্রেণির প্রায় দেড় হাজার পাঠ্যপুস্তক পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ছাপানো এসব পাঠ্যপুস্তক হয় বিদ্যালয়ে থাকার কথা নয়তো, অতিরিক্ত হলে ফেরত পাঠানোর কথা।
যে কৃষকের বাড়িতে এসব পাঠ্যপুস্তক পাওয়া গেছে তার নাম বকুল মিয়া (৫৫)। তিনি রায়পুরার মরজালের চারাবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্কুলটির পেছনেই ওই কৃষকের বাড়ি।
স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক বকুল মিয়ার বাড়ির গোয়াল ঘরের সঙ্গে আরেকটি ঘরের বাথরুমের পাশে বিপুল সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক পড়ে আছে।
বইগুলো চলতি শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক শাখার বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও কৃষকের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় এবং স্কুলের পেছনেই কৃষকের বাড়ি হওয়ায় এসব পাঠ্যপুস্তক অবৈধভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে সেখানে রাখা হয়েছে।
এত পাঠ্যপুস্তক আপনি কোথায় পেলেন জানতে চাইলে বকুল মিয়া জানান, এই পাঠ্যপুস্তকগুলো চারাবাগ আইডিয়াল হাইস্কুলের। প্রায় দুই মাস আগে স্কুলটির দপ্তরি জাহাঙ্গীর মিয়া আমার বাড়িতে এসে এগুলো রেখে যান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন স্যারের কথা বলায় আমি বইগুলো রাখতে দিয়েছি। এরপর থেকে আর বইগুলো নেওয়ার নাম নেই তাদের। এছাড়া বইগুলো কেন আমার এখানে রাখা হয়েছে, এই বিষয়েও আমি কিছু জানি না।
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন একটি ট্রেনিংয়ে থাকায় তিনি জেলার বাইরে আছেন। বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন তিনিও টিফিনের বিরতিতে বিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছেন। পরে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় কথা বলতে এগিয়ে আসেন ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো. মোছলেহ উদ্দিন ও সাবেক অভিভাবক সদস্য আবুল বাশার। তারা জানান, পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। তবে এই স্কুলে কোনো অনিয়ম নাই। আগের প্রধান শিক্ষক অনেক অনিয়ম করেছিলেন তাই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে কয়েকদফা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।
এছাড়া দপ্তরি জাহাঙ্গীরকে স্কুলে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য যে পরিমাণ চাহিদা পাঠানো হয়েছিল, সে পরিমাণ বই সব শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয়ে গেছে।
পাশের কক্ষে কিছু নষ্ট বই ছাড়া আমাদের কাছে অতিরিক্ত কোনো বই আর নেই। কৃষকের বাড়িতে পড়ে থাকা পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় বলছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ে কী পরিমাণ বই লাগবে সেই চাহিদামতো তালিকা করা হয়। তবে চাহিদাপত্রে আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বই বেশি চাহিদা দেওয়া হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বইগুলো আমাদের হাতে পৌঁছানোর পর থেকে আমরা বিদ্যালয়গুলোতে বিতরণ শুরু করি। চাহিদা অনুযায়ী বই বিতরণ করা হলেও শর্ত থাকে যে, উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত থাকা বই অন্যান্য বিদ্যালয়ের মাঝে সমন্বয় করতে হবে। একটি রেজিস্টার মেইনটেইন করতে হবে, সেখানে শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর দিয়ে তার বই গ্রহণ করবে। এর মাধ্যমে আমরাও জানতে পারি, কতগুলো বই ওই বিদ্যালয়ে বাড়তি থাকছে। ফেব্রুয়ারির পরপরই এসব অতিরিক্ত বই বিদ্যালয়গুলো থেকে আমরা সংগ্রহ করে ফেলি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, কৃষকের ঘরে বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ পাঠ্যপুস্তক পড়ে থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। চলতি শিক্ষাবর্ষের এতগুলো বই কোনো বিদ্যালয়ে বা অন্য কোথাও থাকার নিয়ম নেই, সে সুযোগও নেই। আমি এরই মধ্যে রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে এই বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২২
এসআইএস