খুলনা: পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচল বেড়ে যাবে।
বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ স্বাক্ষাৎকারে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পাওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এসব কথা বলেন।
খুবি উপাচার্য বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে সুন্দরবনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। একদিকে সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত আমাদের সড়ক পথ অন্যদিকে বাগেরহাট থেকে মোড়েলগঞ্জ হয়ে শরণখোলা পর্যন্ত সুন্দরবনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এর ফলে পর্যটন শিল্পে এক অবারিত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আমাদের উচিত এই সম্ভাবনাকে যথাযথ পরিকল্পণা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা।
তিনি বলেন, পর্যটক অবশ্যই আসবে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য অধিক পর্যটকের কারণে যেন নষ্ট না হয়। পর্যটকদের আমরা অবশ্যই আহ্বান করব, পাশাপাশি যথাযথ পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের অবকাঠামগত ও আইনগত বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলব, বাংলাদেশ বনবিভাগ ও সরকার রয়েছেন তারা অবশ্যই এটা নিয়ে ভাববেন। ম্যাস ট্যুরিজমের (সবার জন্য উন্মুক্ত) কথা আমরা বলি এটা না করে ইকো ট্যুরিজমের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এর ফলে আমাদের সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল যেসব জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা উপকৃত হবে এবং ইকো ট্যুরিজমেও তারা অংশ নিতে পারবে।
‘‘আমরা যখন কক্সবাজারের কথা চিন্তা করি। প্রতি বছর বিভিন্ন সময় সেখানে পর্যটকের ঢল নামে। সেই অর্থে আমাদের সুন্দরবনের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে যা দেখে বিশ্ব আকৃষ্ট হয়েছে। এছাড়া এটা প্রকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য। সেই অর্থে এখানে খুব বেশি পর্যটক আসছে না। যতটা আমরা আশা করছি। তার অন্যতম কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ’’ যোগ করেন খুবি উপাচার্য।
বরেণ্য এ শিক্ষাবিদ বলেন, যখন পর্যটক কোনো একটি জায়গায় আসে তখন সে চিন্তা করে একটি জায়গায় গিয়ে আমি কতগুলো নিদর্শন দেখতে পাব। সেই দিক বিবেচনা করলে সুন্দরবন শুধু নয়, সুন্দরবনের আশেপাশে আরও অনেক কিছু রয়েছে- বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ রয়েছে, পীর খানজাহান আলী (র.) মাজার রয়েছে, এদিকে দক্ষিণডিহি রয়েছে। আর একটি জিনিস যা উল্লেখ করার মতো সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেটা আগামীতে সরাসরি যোগাযোগের মধ্যে চলে আসবে।
দৃঢ়তার সঙ্গে প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ যে পারে সেটা দেখিয়ে দিয়েছে । পদ্মা সেতু যেভাবে দক্ষিণাঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে ঠিক সেভাবে আমাদের মনোবলকে অনেক দৃঢ় করেছে। আমি মনে করি আমাদের কোনো কিছুতেই দাবিয়ে রাখা যাবে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে তার ভাষণে বলেছেন, বাঙালিকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না, সেটারই আর একটি নিদর্শন দেখছি। আমরা যারা বাঙালি বা বাংলাদেশি আছি তারা মনে করছি বিরাট অর্জন করেছি।
পদ্মা সেতু চালুর পর অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগবে মন্তব্য করে খুবির উপাচার্য বলেন, অর্থনীতির কথা যদি বলি তাহলে আমরা ভালো করে জানি এই দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন রাজধানী ঢাকা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। আগে ঢাকায় যেতে দক্ষিণাঞ্চলের লোকদের ৮/১০ ঘণ্টা সময় লেগে যেত, সেটা এখন মাত্র ৪ ঘণ্টায় সম্ভব হবে। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি এ অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য অতি সহজে যথাযথ মূল্য পাওয়া যাবে। কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে।
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পায়নের যে গতি ছিল তা এক সময় হারিয়ে গেছে। সেটা আবারও ফিরে পাব আশা করছি। ইতোমধ্যে আমরা জানি মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক শিল্পায়নের প্রক্রিয়া চলছে এবং মোংলা বন্দরকে উন্নত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পদ্মা সেতুর সরাসরি ও পরোক্ষ সুফল পাব। অনেক অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে শুনে থাকি পদ্মা সেতুর ফলে ১ থেকে ২ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। আমার কাছে মনে হয় এর থেকে বেশি কিছু হবে, যা আমরা এখনও অনুধাবন করতে পারছি না।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এমআরএম/এসএ