শাবিপ্রবি (সিলেট): সম্প্রতি সময়ে সিলেটে ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি এলাকা থেকে উজান ও পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। বন্যায় পানির কবলে পড়ে সিলেট অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করে।
বন্যায় সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসও প্লাবিত হয়। তবে বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবং ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটর ভয়াবহ এ বন্যায় বিপাকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে পানিবন্দি হয়ে আবাসিক হলেও আটকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। বন্যায় ক্যাম্পাস পানির কবলে পড়ায় জরুরি এক সিন্ডিকেট সভায় গত ১৭জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে গত ২২জুন বন্যা পরিস্থিতির বিবেচনা করে ঈদুল আজহার ছুটির পর ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাতে বুধবার (৬ জুলাই) থেকে শনিবার (১৬ জুলাই) ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শুরু হয়ে শনিবার (১৬ জুলাই) শেষ হয়।
এদিকে রোববার (১৭ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা পুরোদমে সশরীরে শুরু হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।
তিনি জানান, ১১দিন ছুটি শেষে রোববার (১৭ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরআগে বুধবার (৬ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়। ছুটি শেষ হয় বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই)। তবে শুক্রবার ও শনিবার ( ১৫ ও ১৬ জুলাই) সাধারণ ছুটি হওয়ায় রোববার খুলছে ক্যাম্পাস।
তিনি আরও বলেন, বন্যার পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো এখন অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফারহান রেজা জানান, সিলেটে অপ্রত্যাশিত বন্যায় আমাদের ক্যাম্পাস তলিয়ে যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়। বন্যা শুরু হওয়ার পূর্বে আমাদের বিভাগে চলমান সেমিস্টারের দুই-একটি ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে অসমাপ্ত ফাইনাল পরীক্ষা ঈদের পরে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন বন্যা ও ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছি।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদাত হোসাইন জানান, সিলেটে সংঘটিত বন্যা আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থী জন্য এক দুঃস্বপ্ন বয়ে আনে। হুট করে ঘটে যাওয়া এ বন্যায় আমাদের হলে বিদ্যুৎ পানি চলে যায়, পাশাপাশি দেখা দেয় অন্যান্য সংকট। তখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো, সেটিও হঠাৎ করে স্থগিত হয়ে যায়, তাই বাড়িতে চলে যাই। এত অনিশ্চয়তা ও সংশয় কাটিয়ে দুর্যোগ ও ঈদের ছুটির পর আবার ফিরে আসলাম ক্যাম্পাসে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি যেনো আমাদের জীবনে আর না আসে সেটাই প্রত্যাশা থাকবে।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহনাজ আক্তার বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর দীর্ঘ বন্ধে এমনিতেই শিক্ষা-কার্যক্রম ব্যহত হয়। যা কাটিয়ে উঠতে অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মহামারির পর সশরীরে ক্লাস শুরুর পরে আন্দোলনের জন্য আবার ব্যাঘাত ঘটে। এতে আমরা অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছি। আমরা কেউই আর অস্থিতিশীল ক্যাম্পাস চাই না। সেশনজট চাই না, দ্রুত পাস করে বের হতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন বলেন, আমরা দুর্যোগের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়গুলোও দেখভাল করছি। আকস্মিক দুর্যোগ ও ঈদের ছুটি কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা সবাই নিজেদের ক্যাম্পাসে ফিরছে। বেশ কিছু ছুটি কাটানোর পর শিক্ষার্থীদের মনে স্বল্পকালীন একটি সংকট কাজ করছে। আশা করছি তা অচিরেই শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এনএইচআর