ঝালকাঠি: ঝালকাঠির রাজাপুরে ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক সাক্ষরতা কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক ছয় মাস মেয়াদি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় ৬৪ জেলায় ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক সাক্ষরতার একটি প্রকল্প চালু করে। ভিলেজ অ্যান্ড সিটি ডেভলপমেন্ট সোসাইটি নামে একটি এনজিও এ উপজেলায় কাজ করার দায়িত্ব পায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই প্রকল্পের সভাপতি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা ভিসিডিএসের প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান ও প্রোগ্রাম অফিসার এনজিও প্রতিনিধি মনিরউজ্জামান রেজোয়ান এ উপজেলার দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার উপজেলার ছয় ইউনিয়নে স্বস্ব চেয়ারম্যানদের নিয়ে তিনশ’ কেন্দ্রে ছয়শ’ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বিশ জন সুপারভাইজার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেন।
এরপর হঠাৎ কোভিট-১৯ শুরু হলে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত হয়। পরে কোভিট-১৯ নিয়ন্ত্রণে এলে ইউএনও মো. মোক্তার হোসেন দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সদরের বাইরে গিয়ে ৮ ডিসেম্বর আঙ্গায়িার একটি কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষণ কার্যক্রম গত ৭ জুলাই শেষ হয়। তবে কারো কাছ থেকে প্রকল্পের মোট ব্যয় সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, উদ্বোধনের পরে আর কেউ খোঁজ রাখেনি মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের। কোনো কোনো কেন্দ্রে দুয়েকদিন স্থানীয়দের ডেকে চা-বিস্কুট খাইয়ে ছবি তুলে ক্লাসের কার্যক্রম শেষ করে। কোথাও ওই সকল কেন্দ্রের জন্য বই-খাতা দেওয়া হলেও তা পড়ে আছে। কোনো কোনো এলাকায় এ কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানেন না স্থানীয়রা। কিন্তু এমন করতে করতে তিন মাস পার হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষাকার সম্মানী ভাতা নিয়ে। তিন মাসের সময় দুই মাসের সম্মানী একত্র করে আটশত টাকা কেটে রেখে দেওয়া হয় চার হাজার টাকা। এদের মধ্যে যারা এলাকায় থাকেন না তাদের দেওয়া হয় অর্ধেক টাকা। আবার নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষকের নাম পরিবর্তন করে নতুন লোক দাঁড় করিয়ে ইউএনও মোক্তার হোসেনের সময় হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। পরে ইউএনও নুসরাত জাহানের সময় শিক্ষকদের চার মাসের সম্মানী একত্র করে ইউএনওকে না জানিয়ে ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্মানী ভাতার চার হাজার ছয়’শ টাকা কেটে রেখে পাঁচ হাজার টাকা দেয় প্রকল্পের স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, মোগো এলাকার এউকা পোলা একদিন কইছে মোরা যারা বয়স্কো আছি তাদের লেখা-পড়া হরাবে। হেয়া কবে শুরু করবে মোরা জানি না।
শুক্তগড় ইউনিয়নে প্রকল্পের শিক্ষক-শিক্ষিকা মো. রাব্বি ইসলাম, ছনিয়া, জুবায়ের জানায়, ভাতা দেওয়ার কথা বলে তাদের দিয়ে কেন্দ্রগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করায়। পরে আর ভাতা প্রদান করে না। তাদের ছয় মাসের মূল সম্মানী ভাতা থেকেও ৫৪০০ টাকা কেটে রেখেছে।
গালুয়া ইউনিয়নের প্রকল্পের শিক্ষক-শিক্ষিকা মো. সুমন, হাবিবা আক্তার, মরিয়ম আক্তার জানান, তারা ছয় মাসের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তাদের সম্মানী ভাতার এক টাকাও পাননি।
প্রকল্পের শুক্তাগড় ইউনিয়ন সুপারভাইজার মো. রবিউল ইসলাম জানান, তিনি কোনো টাকা-পয়সা কর্তন করেননি। তবে শেষের চার মাসে প্রত্যেক শিক্ষককে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন বলেও রবিউল জানান।
ভিলেজ অ্যান্ড সিটি ডেভলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আব্দুল গফফার খান বলেন, রাজাপুর উপজেলায় আমাদের প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান ও প্রোগ্রাম অফিসার এনজিও প্রতিনিধি মনিরউজ্জামান রেজোয়ান রয়েছেন। ওখানে সবকিছু তারাই পরিচালনা করেন। টাকা-পয়সা নিয়ে এদিক-সেদিক করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরেও যদি হয়ে থাকে তার দায়ভার তাদের।
প্রকল্পের মোট ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
ভিলেজ অ্যান্ড সিটি ডেভলপমেন্ট সোসাইটির উপজেলা প্রতিনিধি মো. মাহমুদ হাসান বলেন, ছয় মাসের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ছয়শ’ শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে পাঁচশ’ জনকে তাদের সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়েছে। বাকি একশ’ জনের সম্মানী ভাতা পর্যাক্রমে দেওয়া হবে। সম্মানী ভাতা কেটে রাখার বিষয় জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন। পরে একধিকবার ফোন দিলেও আর রিসিভ করেননি।
ঝালকাঠি উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সহকারী পরিচালক মো. জানে-ই আলম হাওলাদার বলেন, অভিযোগের বিষয় জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন দিয়েছিলাম এখনও তার কাছে অভিযোগ জমা পড়েনি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি নুসরাত জাহান খান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২২
নিউজ ডেস্ক