শাবিপ্রবি, (সিলেট): দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের (২২) পরিবারের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২৫ জুলাই) দিনগত রাতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের কাছে এ আশা ব্যক্ত করেন উপাচার্য।
বুলবুলের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থী বুলবুলের অকাল মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত ও গভীরভাবে শোকাহত। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি এবং এর দ্রুত বিচার চাই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে বুলবুলের সৎকারের যাবতীয় খরচ এবং তার পরিবারকে একটি সন্তোষজনক অবস্থানে নিয়ে যেত সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। আমরা বুলবুলের মা, ভাই-বোন সবার সাথে কথা বলেছি, তারা এখানে আসছেন।
শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসনের সহযোগিতায় বুলবুলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করব। এক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে আশ্বস্ত করা করেছে। তাই এরূপ ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য অপরাধীদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আমাদের আর কোন ছেলে-মেয়েকে অকালে হারাতে চাই না।
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় ৩০ বছর পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্দিকে সাড়ে ৬ কিলোমিটারজুড়ে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসে সবসময় বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমরা আগে থেকে চিহ্নিত করে রেখেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে যে ঘটনা ঘটেছে তা যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয় আমরা সেই ব্যবস্থা নেবো। তাই আপনাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করে সেসব জায়গা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমরা চাই ক্যাম্পাসে একটা নিরাপত্তার বলয়সহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এসময় সিলেটের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ জানান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলবুল নামের এক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এজন্য আমরা খুবই মর্মাহত। এ হত্যাকাণ্ডে জালালাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিভিন্ন দাবি তুলে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করতে করতে স্লোগানে বলেন, আমার ভাই নিহত কেন? প্রশাসন জবাব চাই। ক্যাম্পাসে হত্যা কেন? প্রশাসন জবাব চাই। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক কিছুক্ষণ অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা
জানা যায়, সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় এক সহপাঠীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত গাজী কালুর টিলায় ঘুরতে যায় বুলবুল। পরে সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে ছিনতাইকারির ছুরিকাঘাতে আহত হন তিনি। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বুলবুল মাটিতে লুটে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। এখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, বুলবুল আহমেদ শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় (২০১৮-১৯ সেশন) বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ২১৮ নম্বর থাকতেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি নরসিংদী সদরের চিনিশপুরম থানার নন্দিপাড়ার বাসিন্দা মো. ওহাব মিয়ার ছেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
এএটি