ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সালথায় বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
সালথায় বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পুরুরা সাধুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি ঘরের আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুল কমিটির সভাপতি ইদ্রিস মোল্লা ও পিকুল হোসেন নামে এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনা নিয়ে ‘সালথায় বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র চুরি করে বিক্রির অভিযোগ’ শিরোনামে বাংলানিউজে একটি সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনা ‘ধামাচাপা’ দিতে উঠে পড়ে লাগেন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ বেশ কিছু সদস্য, অভিযুক্ত শিক্ষকসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা, উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষক নেতা ও স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। সরকারি সম্পদ চুরি করে এভাবে বিক্রির বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।  

জানা গেছে, বিদ্যালয়টির পুরাতন ঘরের ২৬ জোড়া বেঞ্চ, ২৫টি টিন, দু’টি দোলনা, বেশ কিছু লোহার অ্যাঙ্গেল (যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা) কোনো টেন্ডার কিংবা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গত ১৯ জুলাই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন সহকারী শিক্ষক পিকুল হোসেন। পরে গত ২৩ জুলাই স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন ডেকে সালিশির মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও শিক্ষকরা। কিন্তু চুরির এ ঘটনা নিয়ে বাংলানিউজসহ বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করে।  পরে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও অদৃশ্য কারণে তাও ধামাচাপা পড়ে যায়।  

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক পিকুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনা উপজেলার এক শিক্ষক নেতা মধ্যস্থকারী হিসেবে সবার সঙ্গে বসে সমাধান করেছেন। আপনি ওই শিক্ষক নেতার সঙ্গে কথা বলুন। ’ 

এর বেশি কিছু বলতে চাননি অভিযুক্ত পিকুল হোসেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের উপজেলার সুনাম নষ্ট হবে। তাই শিক্ষকদের সুনাম যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য কিছু স্থানীয় সাংবাদিক, উপজেলা শিক্ষা অফিসের কিছু কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের ম্যানেজ করে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। এ সময় সাংবাদিক ম্যানেজের জন্য তাদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানান এ শিক্ষক নেতা।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার ব্যাপারে সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সেলিম মোল্লা সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে পুরুরা সাধুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঘটনার দিন একটা জরুরি মিটিংয়ে স্কুলের বাইরে থাকায় বিষয়টি জানি না।  

এ সময় শামসুল হক দাবি করেন, তাকে না জানিয়েই আসবাবপত্রগুলো বিক্রি করা হয়েছে।  

বিষয়টি নিয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি মো. ইদ্রিস মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলে সবাইকে নিয়ে বসে রেজুলেশন করে আসবাবপত্রগুলো বিক্রি করা হয়েছে।  

সরকারি জিনিসপত্র টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই।  

ইদ্রিস মোল্লা আরও বলেন, ম্যানেজিং কমিটি, স্কুলটির সব শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার বজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি কিছু জানি না। সব উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানেন।

এদিকে সালথা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নিয়ামত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে জানানো হলে তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের কী উত্তর দিয়েছেন ওই শিক্ষক তা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।  

এছাড়া চুরি হওয়া স্কুলের আসবাবপত্র ট্রেজারিতে জমা দিতে বলেছেন বলেও জানান তিনি।

শিক্ষা অফিসার মো. নিয়ামত হোসেন বলেন, সরকারি ট্রেজারিতে চুরির টাকা জমা দিতে বলেছি। সেই শিক্ষক জমাও দিয়েছেন। এর চেয়ে আর কী শাস্তি দিতে বলেন আপনি? 

এ সময় এই প্রতিবেদক ওই শিক্ষা অফিসারকে প্রশ্ন করেন, যে স্কুলের আসবাবপত্রের চুরির টাকা ট্রেজারিতে জমা দেওয়া এটাই সরকারি স্কুলের আসবাবপত্র চুরির শাস্তি হতে পারে কিনা? জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনারাতো (সাংবাদিকরা) টাকা নিয়েছেন, এখন আমাকে ডিস্টার্ব করেন কেন?’

কে টাকা নিয়েছেন? এ প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তর না দিয়েই এ প্রতিবেদকের ফোনটি কেটে দেন। এরপর তার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।  

তবে এ শিক্ষা অফিসার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কাজ করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।  

সরকারি জিনিসপত্র টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুদিন আগে এ শিক্ষা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেছিলেন, এগুলো অল্প কিছু আসবাবপত্র ছিল, অন্যদিকে বড় ধরনের জিনিসপত্র না হলে টেন্ডার ছাড়া এটা বিক্রি করলে সমস্যা কিসের?

এসব ব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. তাসলিমা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। পরে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে আমাকে জানাননি তিনি।  তবে এ ব্যাপারে আমি পুনরায় খোঁজ নিয়ে দেখব।

ফরিদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে এখনও কেউ কোনো কিছু জানায়নি। এছাড়া সরকারি জিনিস টেন্ডার ছাড়া চুরি করে বিক্রি করা একটা অপরাধ। এটা ঠিক করেনি ওই শিক্ষক। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

>> সালথায় বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র চুরি করে বিক্রির অভিযোগ 

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।