ইবি (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালামের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সেখানে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আইয়ুব আলীর কক্ষ ভাঙচুর ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ইবি প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় উপাচার্যের কার্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালান বলে জানা গেছে।
চাকরি প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক মুজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মজীবী পরিষদের ব্যানারে বিভিন্ন সময় স্থায়ী চাকরির দাবি করে আসছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অ্যালামনাই প্রোগ্রাম শেষ করে উপাচার্যের একান্ত সহকারী আইয়ুব আলী প্রশাসন ভবনে তার কক্ষে যান। কার্যালয়ে যাওয়ার পর পরই চাকরি প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
এ সময় পিএস আইয়ুব আলী দুপুরে খাবার খাচ্ছিলেন। খাবার শেষ করে কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অস্থায়ী কর্মচারী পরিষদের সভাপতি টিটু মিজান, সাধারণ সম্পাদক রাসেল জোয়ার্দারে নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী প্রবেশ করেন। চাকরি প্রত্যাশীরা তাদের বেতন-ভাতার ফাইলের বিষয়ে পিএসের কাছে জানতে চান। পিএস আইয়ুব আলী তাদের ফাইলের বিষয়ে জানেন না বলে তাদের জানান। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে টেবিলে থাকা বিভিন্ন ফাইল ছুড়ে ফেলে দেন। সেখানে থাকা টেবিল, চেয়ার ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। পরে আইয়ুব আলী রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
অপরদিকে, চাকরি প্রত্যাশী অস্থায়ী কর্মচারীরা জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে নেমে এসে প্রশাসন ভবনের ফটকে দাঁড়ান। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরূদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান, বক্তব্য দিতে থাকে।
এ সময় তারা তাদের বেতন ভাতা দ্রুত কার্যকর না করা হলে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাঘাত ঘটাবে বলে জানান। পাশাপাশি তাদের বেতন ভাতার ফাইল পাশ না হলে ও চাকরী স্থায়ী না করা হলে ক্যাম্পাসে কোনো নিয়োগ বোর্ড হতে দিবেনা বলে জানান।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম, ড. আমজাদ হোসেন, ড. শাহেদ হাসান, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুটসহ অন্যন্য কর্মকর্তারা পিএসের কক্ষ পরিদর্শন করেন।
পিএস আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুপুরের খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে আমি ও একজন কর্মকর্তাসহ সবেমাত্র বসলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে অস্থায়ী কর্মজীবী পরিষদের নেতারা আমার কক্ষে প্রবেশ করে তাদের ফাইল সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। এ সময় তাদের বলি- বিষয়টি আমি জানি না, ভিসি স্যার বলতে পারবেন। এতে তারা রাগান্বিত হয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা শুরু করেন। পাশাপাশি আমার কক্ষ ভাঙচুর করেন। আমি সেখান থেকে বের হয়ে রেজিস্ট্রারের কক্ষে অবস্থান নেই। আমি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি, এর সঠিক বিচার দাবি করছি। '
অস্থায়ী কর্মজীবী পরিষদের সভাপতি টিটু মিজান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আমাদের বেতন ভাতার ফাইলের বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের কটাক্ষ করে কথা বলেন। আমরা সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পরিচয় দিলে তিনি ছাত্রলীগ নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। আমরা তাকে আমাদের ফাইলের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চাপ দিয়ে চলে আসি। '
পিএসের কক্ষ ভাঙচুর ও পিএসকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে টিটু মিজাম বলেন, 'আমরা উনার কক্ষ ভাঙচুর করিনি কিংবা তাকে লাঞ্ছিতও করিনি। কে এসব করেছেন তা আমরা জানি না। '
পিএসের কক্ষ ভাঙচুর ও নিন্দা জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতি এটিএম এমদাদুল হক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অফিসে হামলা করেছে একটি অপশক্তি। এই অপশক্তিকে আমাদের সবার মিলে রুখতে হবে। তারা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আমরা বিষয়টিকে কোনোভাবেই ছাড় দেব না। '
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
এসআরএস