রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বেঁধে দেওয়া সময়েও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। উপরন্তু তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ায় চাওয়া হয়েছে আরও সময়! এরই মধ্যে আরও দুইটি কমিটি গঠনেরও দাবি উঠেছে।
যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যেই কমিটির কাজ করার কথা ছিল তা করছে না বলে শোনা যাচ্ছে। ঘটনার পর রাবি ও রামেক এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবং বক্তব্যই এ কমিটি অকার্যকর হওয়ার পেছনে দায়ী বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঘটনার রাতের ওই কমিটিতে রামেক অধ্যক্ষকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু পরদিন সকালেই তিনি কমিটিতে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে আর কাউকে আহ্বায়ক করার মতো পাওয়া যায়নি। এরপর বিষয়টি নিয়ে আর কোনো কিছু খোলাসা করেও জানাননি রামেক হাসপাতালের পরিচালক। এরই মধ্যে বুধবার (২৬ অক্টোবর) রামেক হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভা হয়েছে।
এতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তদন্তের জন্য চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রামেক হাসপাতালে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়। রামেক হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ফজলে হোসেন বাদশা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, বৈঠকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপদ পরিবেশ, কর্মস্থলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। রামেক হাসপাতালে সংগঠিত রাবি শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘটনাটি উচ্চতর তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও আলাদা তদন্তের জন্য একটি চিঠি দেওয়া হবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই চিঠি পাঠানো হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা আরও পাঁচ দিনের সময় চেয়েছে বলে পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে।
ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, তাদের আজকের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সিদ্ধান্ত হলো মরদেহের ময়নাতদন্ত করা। এটি ছাড়া এ ঘটনার সত্য উদঘাটন হবে না।
পরিচালানা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় অফিস সিনিয়র সহকারী কমিশনার নিশাত আনজুম অনন্যা, বিএমএ রাজশাহীর সভাপতি ডা. এবি সিদ্দিকি।
এদিকে রাবি ও রামেক ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত দুটি কমিটি কোনটিরও প্রতিবেদন দাখিল করেনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাবির আলাদা দুটি কমিটি ও যৌথ একটি কমিটির কোনোটিই এখনও পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। যদিও তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের কথা ছিল।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, তাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। যেহেতু অনেক ইন্টার্ন ডাক্তার এর সঙ্গে যুক্ত আছে। তারা বিভিন্ন সময় ডিউটিতে থাকছেন। তাই তাদেরও সময়মতো পাচ্ছে না কমিটি। এজন্য কমিটি আরও পাঁচ কার্যদিবস বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে। তাদের আমার বলেছি- যত দ্রুত সম্ভব এটি শেষ করতে। তারা কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত প্রতিবেদন চলে আসবে।
আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের কাছ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে গেছে। তারাও চেষ্টা করছেন দোষীদের খুঁজে বের করার।
এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, রাবি প্রশাসনের ও রাবি-রামেকের যে যৌথ তদন্ত সেটি চলছে। আর কাজটি শেষ করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
এর আগে গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় সহপাঠী মারা গেছেন এমন অভিযোগে হাসপাতাল ভাঙচুর করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগে কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় পরপর দুটি কমিটি হয়েছিল। কমিটিকে পরবর্তী তিন কর্মদিবসের মধ্যে ঘটনা অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
এসএস/আরআইএস