চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ থেকে: শায়েস্তাগঞ্জ থেকে টমটমে চেপে চুনারুঘাট শহরে ঢুকতেই উত্তর বাজার এলাকায় চোখে পড়লো পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর সাদা-কালো পোস্টার। এলাকাজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে সুতোয় টাঙানো পোস্টার।
আমেজ বুঝতে শহরে ঢোকার আগে উত্তর বাজারেই নেমে পড়তে হলো। রাস্তার ডান দিকে খেতের রাস্তা ধরে মিনিট কয়েক হাঁটতে চোখে পড়লো দূরে জনাকয়েক নারী-পুরুষ ধান কাটছেন মগ্ন হয়ে।
কাছে গিয়ে আলাপ হলে তারা জানালেন, পৌরসভার ভোটার নন, চা-শ্রমিক। এখন বাগানে কাজ কম থাকায় ধান কাটার কাজ করছেন চুক্তিতে। তাদের সঙ্গে বাগানের কাজ আর ধান কাটার কাজ নিয়ে আলাপ সেরেই পা বাড়লো পৌরসভা শহরের দিকে মেঠোপথ ধরে।
মিনিট দশেক হাঁটার পর বড়াইল গ্রাম। এখানকার মাঠে খড় (ধান কেটে নেওয়ার পর থেকে যাওয়া অংশ) কাটছিলেন বড়াইলের ফজর আলী। তিনি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নাজিম উদ্দিন শামসুর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কিন্তু হালচাল বললেন, মাঠ ভালো নৌকার প্রার্থীর। তিনি কাজেরও লোক। লোকজন বলছে, নৌকাই জিতবো।
হবিগঞ্জের এ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে লড়ছেন সাইফুল আলম রুবেল। চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহেরের ভাতিজা। এখানে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের নাজিম উদ্দিন শামসু। বড় পদধারী নন, উপজেলা বিএনপির সদস্য। সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ আলীর চাচাতো ভাই ‘পরিচয়েই’ উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করে আট মাস দায়িত্ব পালন করা শামসু মাঠে নেমেছেন বলে ধারণা ভোটারদের।
ফজর আলী বলছিলেন, সাইফুল আলমের সম্ভাবনাই ভালো। এখনও প্রার্থীরা সবার কাছে না গেলেও অনেকে নৌকায়ই ভোট দেওয়ার কথা বলছে।
কোনো কোনো প্রার্থী অর্থ ঢালছেন ইঙ্গিত করে ফজর বলেন, আমরা এখনও পাইছি না। আমরার মইধ্যে ধান্দার মানুষ নাই। কিন্তু অনেকে অনেক জায়গা থেকে নিতাছে।
তার সঙ্গে আলাপ শেষে মিনিট খানেক হাঁটার পর ধানখেতেই আলাপ হলো বড়াইলের নারী বাসিন্দা আমেনা খাতুনের সঙ্গে। মাঠে ধান শুকানোর খলায় দু’পা বাড়িয়ে মাড়াচ্ছিলেন তিনি। কথা বলতে চাইলে মুখে পান দিতে দিতে আগ্রহ দেখান। বলেন, ‘এক বেডি (নারী কাউন্সিলর) খাড়াইছিলো (আগের নির্বাচনে)। তখন ভুডের (ভোট) আগে আইছিলো। এরপর আর আয় না (আসেনি)। এখন আবার আইছে। ’
তার বাড়ির পাশের এক ‘দরিদ্র’ নারী কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছেন জানিয়ে আমেনা খাতুন বলেন, ই (এই) বছর ওই বেডিরেই ভুড দিমু। এ (তিনি) আমরার জন্য কিচ্ছু না করুক, নিজে কইরা খাউক গা। ’
তবে, এখনও কোনো মেয়র প্রার্থী ভোট চাইতে আসেননি বলে জানান তিনি।
আমেনার সঙ্গে কথা বলার সময় পৌরসভার কাঁচা রাস্তা ধরে হেঁটে আসছিলেন বড়াইলের কাঠমিস্ত্রি মজিদ মিয়া। বগলে করাত আর হাতে দুই হাতে সুতো ভাঁজ করতে করতে তিনি বলছিলেন, সবাই ভুড দিতে বলতাছে। কিন্তু নৌকার প্রার্থী লুক (লোক) ভালো। ধানের ছড়ার চেয়ে লুক বেশি নৌকার।
চাপা স্বরে মজিদ বলে দেন, ধানের প্রার্থী টেকা দিতাছে হুনছি। ২শ’-৩শ’ করে। কিন্তু নৌকায় এখনও দিছে না। টেকা না দিলেও নৌকার লুকরে মানুষ এমনেই ভুড দিব।
মজিদের সঙ্গে আলাপ শেষে ফের পাকা সড়ক ধরে উত্তর বাজারে শেষ প্রান্তে মূল সড়কেই পা বাড়লো। এবার দেখা গেল পোস্টারে পোস্টারে সাজ নিয়েছে চুনারুঘাট পৌর শহর। অদূরের কোনো পয়েন্ট থেকে মাইকিংয়ের শব্দও কানে বাজছিল, ‘দেখে-শুনে ভোট দিন, ৩০ তারিখ শুভ দিন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এইচএ/এএ
** মুখ চিন্না মুরগার ডাইল
** ভেতর-বাইরের ‘খেলায়’ কোণঠাসা আ’লীগ
** ভোটের আগেই ‘খুশি’ বিলাবেন প্রার্থীরা!
** আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ
** শোর উঠেছে ধানের শীষের, ভোট পড়বে নৌকায়
** আ’লীগের ভরসা ইমেজ, বিএনপির ভরসা প্রতীক
** নৌকায় ভাঙছে বিভেদের দেয়াল
** ‘রাজা’ ‘বখত’ নয়, এবার লড়াই দলীয়
** নৌকা-ধানের শীষ নয়, লড়াই কালাম-শামছুর
** ছাতকে ‘ফ্রি চা-পানি’, মিলছে ‘টেকা-টুকা’ও
** জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা
** ওপারে শীতের চাদর, এপারে নির্বাচনী উত্তাপ
** বছর ধইরা মাঠ ঠিক করছি, এখন সরতাম কিতার লাগি
** লাখ লাখ টেকার ভুট এক হাজারে বেচিয়া কতদিন খাইবা?
** এখানে কুনো ভুটো কারচুপি অইছে না
** ডিজিটাল রেল, সময়ানুবর্তী রেল