পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে ত্রিমুখি লড়াইয়ে নেমেছেন তিন মেয়র প্রার্থী। এরইমধ্যে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ দেখা গেছে।
এ পৌরশহরের নির্বাচনী সমীকরণে দেখা গেছে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র পদে চাচা-ভাতিজা মাঠে থাকায় দু’জনেরই ঘুম হারাম হয়ে গেছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগে একক প্রার্থী হওয়ায় বেশ আরামেই রয়েছে তিনি।
পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন, বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র ও পাথরঘাটা উপজেলা শাখা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মল্লিক আইউব ও তার ভাতিজা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (আজাদ মল্লিক)।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পাথরঘাটা পৌর নির্বাচনে চাচা ভাতিজাসহ তিন প্রার্থী তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন পথসভা, উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ জোরেসোরে। প্রকাশ্যে প্রচারণা ছাড়াও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে একটি ভোট পাওয়ার জন্য ভোটারের মন জয় করার জন্য সব রকমের কৌশল অবলম্বন করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকন।
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (আজাদ মল্লিক) মহাজোটে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় লেজুরবৃত্তিক সমন্বয় করে কিছুটা প্রচারণা চালাতে পারলেও কোণঠাসায় রয়েছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান পৌর মেয়র মল্লিক আইউব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকন, জাতীয় পার্টির আজাদ মল্লিকসহ সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পোস্টার দেখা গেলেও বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক মেয়র প্রার্থী মল্লিক আইউবের কোনো পোস্টার, ব্যানার কিছুই দেখা যায়নি।
সব মিলিয়ে পাথরঘাটা পৌর নির্বাচনে এখন চাচা মল্লিক আইউব ও ভাতিজা আজাদ মল্লিক নির্ঘূম রাত কাটিয়ে টেনশনে ব্যাকুল আর আনোয়ার হোসেন আকন ফুরফুরে মেজাজে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মল্লিক আইউবসহ তার কর্মী সমর্থকদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা। কর্মীদের হুমকি ধামকি, হামলা-মামলাসহ হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আশঙ্কা প্রকাশ করে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করেন এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বিঘ্নে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন।
এরআগে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর বেশ কয়েকজন সমর্থকদের ওপর হামলা করে আহত করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এ বিষয় একাধিকবার রির্টার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অবহিত করেন মল্লিক আইউব। তবে এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করছেন আ’লীগ মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকন।
মেয়র প্রার্থী আইউব বলেন, আমাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে, আমাদের কোনো কর্মীদের মাঠে থাকতে দিবে না। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকনকে বিজয়ী করে নিবে বলেও দলের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।
অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কে বাধা দিয়েছে সেটি আমার জানা নেই।
উপজেলা রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার বলেন, লিখিত অভিযোগুলো পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব প্রার্থী যাতে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে সেজন্য শহরে পুলিশের টহল বৃদ্ধিসহ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী উপজেলা পাথরঘাটায় ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত। পাথরঘাটা পৌরসভা আস্তে আস্তে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৪২১। তার মধ্যে নারী ৫ হাজার ৭০১ ও পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৭২০জন। মেয়র পদে ৩, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এসএইচ