ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার পথে: প্রায় ২,০১৮ বর্গকিলোমিটারের মেগাসিটি মেক্সিকোর কথাই যদি বলা হয় তবে ভুল উদাহরণ হবে না। মেক্সিকো বাড়ছে দ্রুত গতিতে, বাড়ছে আমাদের ঢাকাও।
কথাগুলো জানালেন ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম। তিনি অবশ্য নারায়ণগঞ্জে থাকেন। ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে। ঢাকায় তার কিছু ব্যবসায়িক কাজ ছিল। সে কাজ সারতে সারতে সন্ধ্যা। পরে রাতে রওয়ানা দেন।
নজরুল ইসলাম বললেন, ঢাকা উন্নত হচ্ছে, এর পাশাপাশি আশেপাশের স্থান-জেলাকে নিয়েও। অচিরেই উন্নতির ছোঁয়া লাগবে ঢাকার প্রতিবেশী মুন্সীগঞ্জে- এটাই তো স্বাভাবিক।
কিছুই বোঝা গেলো না- এমন ভাব নিয়ে ফিরতি প্রশ্ন করা হলে পাশ থেকে আরেকজন বললেন- পদ্মাসেতু হচ্ছে। সেতু কিন্তু ঢাকায় না ভাই- মুন্সীগঞ্জেই। উত্তর দিলেন কবির নামে আরেক যাত্রী।
কবির বলেন, মাওয়া থেকে শুরু ব্রিজ। তো উন্নতির ছোঁয়া এখানে লাগবে- এটাই কি উচিত না! ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জে জমির দাম বাড়তে শুরু করেছে। অনেক ব্যবসায়ী এখন এই জেলায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কারণ এখানে বিনিয়োগ করলে লাভ দ্বিগুণ আসবে।
নজরুল ইসলাম জানেন ভালো। নিয়মিত পত্রিকা পড়েন। পরিসংখ্যানে বিশ্বাসী ব্যক্তি। তিনি বাংলানিউজকে বললেন আরও কিছু কথা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শহর সিওল নাকি এক সময় উন্নত ছিল না। ধীরে ধীরে শহরটি উন্নত হয়ে ওঠে। এখন যা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী। বিশ্বের ধনী শহরের তালিকায় সিওলের নাম প্রথম সারিতে। পদ্মাসেতু নির্মিত হলে মুন্সীগঞ্জও একদিন হবে সেরকম একটি শহর। তবে ওপাড়ের ফরিদপুর আরও উন্নত হবে- যোগ করেন তিনি।
‘বড় বড় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বমানের হাসপাতাল ও বিনোদন কেন্দ্র সবই প্রতিষ্ঠিত হবে মুন্সীগঞ্জে। ’
তিনি আরও যোগ করেন, সিওলের আয়তন দেশের মোট আয়তনের ০ দশমিক ৫০ শতাংশ (আসলে হবে: ০.৬১ শতাংশ)। তাও তো শহরটি মেগাসিটি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্রিজ পদ্মায় হলে ওই পাড়ের জাজিরার মতো মাওয়া এবং তার আগে জেলা শহর হয়ে যাবে উন্নতস্থান। এটি তো সময়ের ব্যাপার মাত্র। হোনসু দ্বীপের কুয়ানদো সমতল ভূমির দক্ষিণের টোকিও যদি উন্নত হতে পারে তবে আগামীতে সেতুর বদৌলতে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ জেলা কেন নয়?
এতো কথা/আড্ডা সব কিন্তু বাসে বসে। কুসুমপুর পরিবহন। ঝাঁকি ছিল রাস্তায়, আসলে লোকাল বাস তো। বাসের সামনের সিটের এক যাত্রী তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেন- এই ঝাঁকিও নাকি থাকবে না ব্রিজটি হলে! তখন ঢাকা আর ঢাকা-মাওয়া সড়কের কোনো পার্থক্য রবে না। ঠিক তেমনি ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কও হবে তাই। মাওয়া পর্যন্ত রাজধানী বর্ধিত হয়ে যাবে। এ জন্য কোনো ঘোষণা অথবা কোনো অনুমানের প্রয়োজন নেই সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট- মত তার।
মো. আলম (৪৪) নামে ওই যাত্রীর ঢাকার জুরাইনে ছোট্ট দোকান আছে। বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বনকপাড়ায়। তার কথাগুলো শুনছিলেন আর সায় দিয়ে থেকে থেকে হাসছিলেন দুই বন্ধু। নাম অতিক ও হাসান।
মেগাসিটি বলতে আসলে মেট্রোপলিটন এলাকাকে বুঝানো হয়। যেখানকার জনসংখ্যা ১ কোটি বা এর অধিক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ন্যূনতম ২০০০ জন। মেগাসিটিতে উন্নত সব রকম নাগরিক সেবা, ব্যবসায়ের কেন্দ্র, বিনিয়োগের স্থান হিসেবে উপযুক্ত পরিবেশ থাকে।
নানা কারণে বৈচিত্র্য-অনন্য ও শ্রেষ্ঠত্বের পদ্মাসেতু নির্মিত হলে প্রদীপের আলো পড়বে মুন্সীগঞ্জ এলাকায়- এমন আশাবাদ কিংবা স্বপ্ন- শুধু বাসের যাত্রীদেরই একার নয়, এই সুন্দর ভাবধারাটি বাংলাদেশের যে কারোরই। নিজের দেশ বলে কথা। স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের পথে- তাকে ঘিরে কোটি মানুষের স্বপ্নের বীজ বুননের এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গল্পই যে সামনে এগিয়ে চলতে আলোর পথ দেখায়- পথ না হারানোর প্রেরণা যোগায়- এটি ভুলে গেলে চলবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
আইএ/এমজেএফ