মুন্সীগঞ্জ সদর পৌর এলাকা থেকে: শীত নেই তেমন একটা। বলতে গেলে রাজধানী ঢাকার মতোই।
ওই দূর থেকে শব্দ ভেসে এলো কানে। ছুটে গিয়ে সময়টাকে ধরার চেষ্টা। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়েছে অনেক- বোঝাই গেলো।
যে শব্দ শুনে ছুটে যাওয়া সেটি ছিল মাঝারি টঙ দোকান বন্ধ করার সময়কার শব্দ! মো. আহসান আলী (৪০) নিজের দোকান বন্ধ করে দিলেন। পাশের দোকানিকে বললেন- যাবি না বাড়ি? মো. ইসমাইল (৩৪) নামে ওই টঙ দোকানদার তখনও গরম চা কাপে ঢেলে পরিবেশন করতে মগ্ন। চা ঢেলে ইসমাইলের উত্তর, একটা ডিম খাইয়া যাও ভাই। সেই রাতে না খাইছো, দেশে নির্বাচন; মেয়র-কাউন্সিলর কেউ খাওয়ায় না। আমিই খাওয়াই আসো।
আহসান আলী বলবেন; তার আগেই তাকে প্রশ্ন করা- কেমন চলছে নির্বাচনী আমেজ? পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, খুব নরমাল মনে হচ্ছে। রানিং মেয়র চুপচাপ। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া বিপ্লব ভাইয়ের পোস্টারিং বেশি- এই তো অবস্থা।
ইসমাইলের দোকানে চা খেতে আসা মোশাররফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি চায়ে চুমুক দিয়েই বাংলানিউজকে বললেন, এখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, তাদের প্রার্থী আছে পৌরতে। সবার আগে তাকে হতে হবে উদার- এতে সবার খেলার সুযোগ বাড়বে। ভোটের আমেজেও নতুনত্ব আসবে। মানুষের মধ্যে আরও আগ্রহের সৃষ্টি হবে।
‘এমনিতেই আগ্রহের শেষ নাই আবার নতুন করে আগ্রহ কি হইবো’ আগের কথাকে এক প্রকার উড়িয়ে দিয়ে দোকানি ইসমাইল বলেন, যখনই শুনছি নির্বাচন- সবার আগে দোকান থেইকা টিভি (টেলিভিশন) সরাইছি আমি। টিভি নিয়ে কই গেছেন? বলেন, ওইটা থাকলেই তো ক্যাচাল। এমনিতেই দিন নাই রাত নাই উমুক প্রার্থী কাল ওখানে গেছে- তো ওই খানে বইছে- এসব প্যানপ্যান। এইগুলা হয়ত কোনো কোনো বিপক্ষ লোকদের/সমর্থকের ভালো লাগে না। এতে তারা করে মুখ কালা। এমনই এখানকার রাজনীতি গো ভাইজান।
মোট নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর পৌর এলাকা গঠিত। কথা হচ্ছিল লঞ্চঘাটে, যা ৩ নং ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দুইজন। ডালিম মার্কা নিয়ে রয়েছেন মকবুল হোসেন আর উট প্র্রতীকে দ্বীন মোহাম্মাদ কোম্পানি।
পাশের মোবাইলের ব্যালেন্স রিচার্জ দোকানে বসে ছিলেন রোমান আহমেদ (২১)। তিনি এবার নতুন ভোটার। ভোট নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার কথা জানতে চাইলে বলেন, ঝামেলা না হলে ভোট দিতে যাবো। নিজের ভোট নিজে দেবো। কারো কথায় ভোটে সিল দেবো না। আমি শিক্ষিত ছেলে- অনার্সে পড়ি। আমার ভোটের মূল্য যিনি দিতে পারবেন তাকেই করবো মেয়র।
এক্ষেত্রে পছন্দ কোন পক্ষে জানতে চাইলে রোমান বলেন, পছন্দ নয়, চাই ভালো মানুষ। যার কাছে আমাদের এ পৌর এলাকা নিরাপদ- তাই ভালো মনে করি।
জেলায় (শহরে মূলত) ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালান রিয়াদ (৩০)। তিনি পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন তখন। যুক্ত করলেন বক্তব্য, মোট চার মেয়র প্রার্থী এবার। এতোদিন বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এখানে মেয়র ছিলেন (বর্তমান মেয়র)- এবার মানুষ হয়ত পরিবর্তন খুঁজবে।
এবার পালা একটু হেঁটে যাওয়ার। যেতেই বৃদ্ধ হোসেনের (৫০) চায়ের দোকান সামনে পড়লো। শীতের রাতে সেখানে গরম চা খেতে অনেক মানুষই উপস্থিত। তবে শুধু মিজানুর রহমান (২৫) বাদে অন্য কেউ ভোটার নন। মিজানুর জানান, ভোট দিতে যাবেন। এটি একটি আনন্দ তাদের কাছে।
এবার বুঝে-শুনেই সিলটা মারবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যাতে আমাদের মতো মফস্বল শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়-উন্নতিতে নির্বাচিত নতুন মেয়র শুরু থেকেই এগিয়ে আসেন- সবার আগে এটা চাই।
এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ থেকে লড়ছেন হাজি মো. ফয়সাল বিপ্লব, বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র এ কে এম ইরদত মানু। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম এবং রয়েছেন ইসলামী হেফাজতের মো. মহিউদ্দিন বেপারী।
মুন্সীগঞ্জ সদর পৌরসভার আয়তন ১০ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার ৪৫ হাজার ৪২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৯৬ এবং নারী ২২ হাজার ৩৩২ জন। ভোটকেন্দ্র- প্রাথমিক হিসেবে ২৬টি। ১৯৭২ সালে এই পৌরসভার প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৩ সালে ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার হার ৬৭ শতাংশ।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর-২০১৫ (বুধবার) দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ। এতে মেয়র পদে ৯২৩ এবং কাউন্সিলর পদে ১১ হাজার ১২২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ৭২ লাখ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্র থাকছে ৩ হাজারেরও বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
আইএ/আরএ
** মেগাসিটি হবে মুন্সীগঞ্জ!