ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৪
কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

ঢাকা: নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

বৃহস্পতিবার (৯ মে) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। এছাড়া তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনই পলাতক।  

এছাড়া খালাস পেয়েছেন সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও ফারুক আব্বাসী। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

বাংলাদেশের রহস্যময় ব্যক্তিদের তালিকা করলে তালিকার প্রথমদিকেই থাকবে যাদের নাম তাদের একজন এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই। যাকে নিয়ে আছে নানা গল্প, নানা রহস্য। আর এসব গল্পের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র জগতের নারী ও হত্যা কেন্দ্রিক।

এসব গল্পের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মুখরোচক মিথ্যা সে নিয়েও আছে নানা মত। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই তাকে ভাই বলা হয়। সাধারণত মাফিয়া ডন বা গডফাদারদের ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নামে ‘ভাই’ শব্দটি মূলত তাদের বংশপদবি। তাদের পরিবারের সবারই নামের শেষে ভাই পদবি আছে।

এমনকি নারীদের নামের সঙ্গেও ভাই দেখতে পাবেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ ভাই। মায়ের নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই।

১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। বাহাইয়ান’ কে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এ ‘বাহাই’ পরবর্তীতে ‘ভাই’ হয়ে যায়।

ধনাঢ্য এ পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়।

পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করে ব্যবসা। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার অর্থ সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। আবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। কথিত আছে, ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে নায়িকাদের রূপের মোহে নাকি কালো টাকা সাদা করতে নাকি শুধুই ব্যবসায়িক মানসিকতায় অথবা মিডিয়ার মনোযোগ কাড়তে প্রযোজনায় আসলেন- সেটা নিয়ে তর্ক করাই যায়। তবে এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেললেন। পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী সমীহ করে চলতেন তাকে। ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্ল্যামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।

এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। এরশাদ এক নারীকে পছন্দ করতেন, একই নারীর প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছিল আজিজ এর। অবশ্য দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়াতে থাকে। একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে কিন্তু সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়। তবে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৭ সালে। সেসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটাকে আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহ এর পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকাণ্ড।  পারিপার্শ্বিক আলামতেও এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই মনে হয়। আবার আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর মতো সালমানের স্ত্রী সামিরারও থাইল্যান্ডে বসবাস সন্দেহকে বাড়িয়েই দেয়।

শোনা যায় সালমান শাহ নিহত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেন আজিজ।  এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবার সামনে আজিজকে চড় মারেন সালমান। এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে। কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়া পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এ ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হয়।

তবে বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন আজিজ। আজিজ মোহাম্মদ ভাই দাবি করেন তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিডিয়াই তাকে ‘ডন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে বারবার।

২০১২ সালে মাদক ব্যবসার অপরাধে আজিজের ভাতিজা, ইয়াবা সম্রাট বলে খ্যাত আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।

বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আনন্দ ফুর্তি করে সময় কাটাতে পছন্দ করা এ লোককে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্টিতে, ক্লাবে নারীদের সঙ্গে ফুর্তিরত অবস্থায় দেখা যায়। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। পরিবারে আর আছে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।

উইকিপিডিয়া বলছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি হত্যা ও মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।