প্রাচীন বাংলার শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘গৌড়ীয় নৃত্য’ বাংলাদেশেরই নৃত্য। বিশ্বের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ১২ থেকে ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনের গৌড়ীয় নৃত্য কর্মশালা।
কর্মশালার সমাপনী উপলক্ষে ১৪ মার্চ বিকেল ৪টায় একাডেমীর জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবনের ৫ নম্ব মহড়াকক্ষে অংশগ্রহণকারী সব প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ ও নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দীন এবং কর্মশালার প্রশিক্ষক র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিস।
আয়োজকরা জানান, বহুদিন ধরে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে, বাঙালি একটি ঐতিহ্যশালী জাতি হওয়ার পরও বাংলার কোনো শাস্ত্রীয় নৃত্য নেই। সেদিক দিয়ে ‘গৌড়ীয় নৃত্য’ প্রাচীন বাংলার শাস্ত্রীয় নৃত্য। ১৯৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ‘স্কুল অব হিস্ট্রিকাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ’ শীর্ষক গৌড়ীয় নৃত্য সেমিনারে ‘শাস্ত্রীয় নৃত্য’ নামকরণটি করেছেন অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও অধ্যাপক মহুয়া মুখোপাধ্যায়।
‘গৌড়’ শব্দটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমত ‘গৌড়’ শব্দটি এসেছে ‘গুড়’ শব্দ হতে যা বাংলার অতি পরিচিত মিষ্টান্ন দ্রব্য। এ ছাড়া বৃহৎ বঙ্গের অধিপতি রাজা শশাঙ্ককে ‘গৌরাধিশ’ বলে ভ‚ষিত করা হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক বাংলার প্রথম ব্যাকরণ ‘গৌড়ীয় ব্যকরণ’, প্রাচীন মার্গীয় সঙ্গীতের রাগ, গৌড়কৈশিকী, গৌড়পঞ্চমা, গৌড়রাগ ইত্যাদি রূপসমূহ, মহাপ্রভু চৈতন্যদেব প্রণীত ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণধর্ম’, গৌড়বঙ্গে সাহিত্য রচনা রীতি ‘গৌড়ীয় রীতি’ অর্থাৎ যা কিছু গৌড়বঙ্গের শিল্পকলা তাই প্রাচীনকাল থেকে ‘গৌড়ীয়’ নামে অভিহিত হয়ে আসছে। এরই ভিত্তিতে বাংলার শাস্ত্রীয় নৃত্যের নামকরণ ‘গৌড়ীয় নৃত্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ২১০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫