২০১১ সালের পর বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের সমন পাঠাল কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক গোয়েন্দা দপ্তর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) শেয়ার অনেক কমিয়ে মরিশাসের সংস্থা সি আইল্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে বিক্রি করা হয়েছিল কি-না, সেটাই জিজ্ঞাস্য ইডির।
২০০৮ সালে মরিশাসের ওই সংস্থার কাছে নাইট রাইডার্স স্পোর্টস প্রাইভেট লিমিটেডের (কেকেআর টিমের মালিক সংস্থা) শেয়ার বিক্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসে। নাইট রাইডার্স স্পোর্টসের শেয়ার প্রায় ৮ থেকে ৯ গুণ কমিয়ে সি আইল্যান্ডকে বিক্রি করা হয়েছিল বলে অভিয়োগ। নাইট রাইডার্স স্পোর্টস হল শাহরুখ খানের রেড চিলিজের সম্পূর্ণ অধীন একটি শাখা সংস্থা। আবার, রেড চিলিজের অন্যতম মালিক হলেন জুহি চাওলা ও তার স্বামী জয় মেহতা।
ইডি তদন্ত করে দেখছে, এই দাম কমিয়ে শেয়ার বিক্রির মধ্যে কোনও আর্থিক দুর্নীতি রয়েছে কি-না। এটা যদি প্রমাণিত হয় যে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের শেয়ার প্রকৃতই উচিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে মরিশাসের সংস্থাটিকে বিক্রি করা হয়েছিল, তাহলে সেটা দেশের বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (ফেমা) লঙ্ঘনের অপরাধ বলে গণ্য হবে। ইডি তদন্ত করে দেখছে, শাহরুখ খান বা কেকেআরের অন্য প্রোমোটাররা সত্যিই ফেমা লঙ্ঘনের অপরাধ করেছেন কি-না।
আইপিএলের দ্বিতীয় অধ্যায়ে মরিশাসের মতো কয়েকটি দেশ মারফত কর ফাঁকির টাকা ভারতীয় ক্রিকেটে এসেছে বলে ইডি জানতে পেরেছে। সেই আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়েই ২০১১ সালে শাহরুখ খানকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। তখন বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে কীভাবে ১০০ কোটি টাকার একটি লেনদেন করা হয়েছিল তা নিয়েই ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এই নায়ককে। সেই সময় শাহরুখকে ইডি বলেছিল, কেকেআরের প্লেয়ারদের কিনতে কত টাকা খরচ হয়েছিল, বিজ্ঞাপন এবং অন্য সূত্র থেকে কেকেআরের কত আয় হয়েছিল এবং বিভিন্ন সময় নাইট রাইডার্স স্পোর্টসের মালিকানা নিয়েও যাবতীয় তথ্য ও নথি জমা দিতে।
ইডির এক আধিকারিক জানান, এই নিয়ে তৃতীয়বার শাহরুখকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, কারণ এই লেনদেন (শেয়ার বিক্রি) সংক্রান্ত বিশেষ কিছু তথ্য কেবল তিনিই জানেন। ইতিমধ্যে জুহি চাওলা ও জয় মেহতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বক্তব্য নথিভুক্ত করেছে ইডি। ২০০৮ সালে যখন নাইট রাইডার্স স্পোর্টস সংস্থাটি তৈরি হয়, তখন রেড চিলিজের হাতে ওই সংস্থার ৯৯০০টি শেয়ার ছিল। গত বছর একটি বহিরাগত সংস্থাকে দিয়ে ইডি মূল্যায়ন করিয়ে দেখেছে, নাইট রাইডার্স স্পোর্টসের শেয়ার যখন সি আইল্যান্ডকে বিক্রি করা হয়, তখন নাইট রাইডার্স স্পোর্টসের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে হওয়া উচিত। কিন্তু সি আইল্যান্ডকে ওই অংশীদারিত্ব বিক্রি করা হয়েছিল ১০ টাকায়।
বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, ভারতে বসবাস করেন না এমন কাউকে বা কোনও বিদেশি সংস্থাকে শেয়ার বিক্রি করতে হলে তা সেবির নির্ধারিত মূল্যবিধি মেনে (সংস্থাটি যদি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়) অথবা (সংস্থাটি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত না হলে) কোনও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে দিয়ে শেয়ারের মূল্যায়ন করিয়ে সেই উচিত মূল্যেই বিক্রি করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
বিএসকে/এসও