চট্টগ্রাম থেকে ফিরে : স্বাগত, শুভেচ্ছা, সমাপনী- সব বক্তব্যই হলো। বন্দরনগরীর তিন সন্তান সাব্বির, হৈমন্তী রক্ষিত মান এবং সমরজিৎ রায় একে একে গান গাইলেন।
তাদের নাম সিজারাজ জাহান মিমি, ফেরদৌসী হিমু ও বৃষ্টি শেখ। কারও নামই সংগীতাঙ্গনে পরিচিত নয়। তবু তাদের গান শুনে হাততালি পড়েছে। ‘ওয়ান মোর, ওয়ান মোর’ ধ্বনিও শোনা গেছে। তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন শ্রোতারা। যন্ত্রশিল্পীরা কেউই মঞ্চে ছিলেন না তখন। মাইক্রোফোন হাতে খালি গলায় গাওয়া তিনজনের গান উপভোগ করেছেন সবাই। শ্রোতা থেকে তিন তরুণীর শিল্পী হয়ে ওঠার এই মুহূর্ত দেখা গেলো চট্টগ্রামের হোটেল র্যাডিসন ব্লু’র মেজবান মিলনায়তনে। এখানে গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর পাঁচ বছর পূর্তির জমকালো অনুষ্ঠান।
যদি ধরে নেন মিমি, হিমু ও বৃষ্টি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শিল্পী তাহলে ভুল হবে। তারা থাকেন ঢাকায়। কেউই গান-বাজনার সঙ্গে যুক্ত নন। অন্য অনেকের মতোই শুধু গুনগুন পর্যন্ত তাদের সংগীত চর্চা। তারা তিনজনই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সংবাদকর্মী। কাগজ-কলম নয়তো কম্পিউটারে কি-বোর্ডে লেখালেখি করতেই অভ্যস্ত সবাই। তাদের মধ্যে মিমি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান। হিমু স্টাফ রিপোর্টার আর বৃষ্টি নিউজরুম এডিটর।
পেশাদার তিন শিল্পীর পরিবেশনা শেষে হিমু স্বেচ্ছায় গান গাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঢাকা থেকে তাদের সঙ্গে যাওয়া বাংলানিউজের অন্য কর্মীরা শুরুতে এটাকে হাসির ছলে নিয়েছিলেন। কিন্তু সত্যি সত্যি তিনি মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ফেললেন। এরপর গাইলেন- ‘কইলজার ভিতর বান্ধি রাইখুম তোয়ারে ও ননাইরে...। ’ তার সাবলীল পরিবেশনায় চমকে গেছেন সহকর্মীরা। পেশাদার শিল্পীদের চেয়ে কম কীসে! তাই আরেকটি গান গা্ওয়ার অনুরোধ এসেছে তার কাছে। নিরাশ করেননি তিনি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা ও মন জানো না’ গানটি তার কণ্ঠে শুনে শ্রোতারা আরও মুগ্ধ।
হিমুর পরিবেশনা নিঃসন্দেহে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছে। সাহস নিয়ে মঞ্চে উঠে স্বাভাবিকভাবে গাইলেই মন জয় করা যায়, এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে গিয়েছিলো সবার মধ্যে। এরপর কে যাবে? অনেকের মনে মঞ্চে ওঠার বাসনা থাকলেও জড়তা কাজ করছিলো। শেষমেষ সাহস দেখালেন মিমি। তিনি গাইলেন, ‘তুমি কি এখন দেখেছো স্বপন আমারে...। ’
এবার কার পালা? সবাই বৃষ্টিকে মঞ্চে ওঠার জন্য উৎসাহ দিচ্ছিলেন। কিন্তু কোথায় যেন ভয়! সাহস জোগাতে মঞ্চে তার সঙ্গী হলেন লাইফস্টাইল এডিটর শারমিনা ইসলাম। তাকে পাশে নিয়ে বৃষ্টি গাইলেন, ‘হামে তুমসে পেয়ার কিতনা ইয়ে হাম না জানে...। ’ অবশ্য তার গান শেষ হওয়ার আগেই মাইক্রোফোনের সংযোগ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তা না হলে উর্মি মাহবুব, জেসমিন পাপড়ি আর হ্যাপি রাংসাকে মঞ্চে উঠতে হতো অনুরোধের ঢেঁকি গিলে!
যারা গান গেয়েছেন কিংবা গান গাওয়ার অনুরোধ পাচ্ছিলেন, সবাইকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর (ইংরেজি সংস্করণ) এসএম সালাউদ্দিন, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, কান্ট্রি এডিটর শিমুল সুলতানা, চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ তপন চক্রবর্তী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাজেদুল হক নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাত, স্পোর্টস বিভাগের প্রধান মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর কালাম আজাদ বেগ, ফটো চিফ কাশেম হারুন, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট নূর, হেড অব মার্কেটিং সিরাজুল ইসলাম, ওয়েব অ্যান্ড আইটি ইনচার্জ অমিয় দত্ত ভৌমিক, ডেপুটি অ্যাডমিন ম্যনেজার সুলতানা জাহান শিমু, অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচআর নির্বাহী নাসির উদ্দীন।
মূল অনুষ্ঠান সফলভাবে শেষ হয়ে যাওয়ায় এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন একটু আগেই বেরিয়েছেন। এই সুযোগে এমন তাৎক্ষণিক গান-বাজনার পসরা বসে গেলো। তাতে শামিল হলেন চট্টগ্রাম ব্যুরোর সব কর্মী এবং ঢাকা থেকে যাওয়া সংবাদকর্মীরা। পরে তিনি এ ঘটনা জেনে আনন্দিত হলেন।
রাজধানী থেকে বারো আউলিয়ার দেশে পুণ্যভূমিতে গিয়ে নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার জানান দিলেন মিম, হিমু ও বৃষ্টি। এর মধ্য দিয়ে তাদের সাহসের পরিচয়ও পাওয়া গেলো। বাংলানিউজের আগামী আয়োজনগুলোতেও তাদের কাছে গান গাওয়ার প্রস্তাব আসতে পারে। তখন হয়তো কেউ চমকাবেন না। তারা যে ভালো গায়, সে প্রমাণ তো পাওয়া গেছেই!
বাংলাদেশ সময় : ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৫
জেএইচ