‘পবনদাস বাউল কখন গাইবে?’- মামুলি একটা প্রশ্ন। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত কিংবা শ্রুত বাক্য, শুক্রবারের লোকসংগীত উৎসবের বাস্তবতাটা এমনই।
পবন সম্পর্কে যারা অজ্ঞাত তারাও জানেন যে, তার পরিবেশনা, গায়কী, স্টাইল সবই অনবদ্য। তার সঙ্গে এবার যোগ দিয়েছেন অর্নব অ্যান্ড ফ্রেণ্ডস। তো, বাড়তি পাওনা একটা বাড়ে। এবং ব্যাপারটা চমকের চেয়ে বেশি কিছু দাঁড়ায়। সব মিলিয়ে পবনে বাউলা মধ্যরাত যেন বাতাসকে আরেকটু গতিময় করে তুলল।
শুরুতেই পরিচিত গান ধরলেন পবন। ধীরে ধীরে মোহাবিষ্ট করলেন সবাইকে। “এখন যে গানটা করছি সেটা ‘পইংখ্যা’। একটু ব্লুজভাবে করছি। ” এই গানের মধ্যে যেন নাচের সহজাত মুদ্রাগুলো ছড়িয়ে দিলেন পুরোপুরি। ঢেউয়ের মতো সেগুলো ছুঁয়ে গেলো দর্শকসারিতে। এর আগে ‘নাচো গো নাচো কালি’তে দর্শক বেশ মাতোয়ারা হয়েছেন।
“যে গানের জন্য বাংলাদেশে আমাকে ডাকে। ‘দিল কি দয়া হয় না’। এই গানটা করে আমি বিদায় নেবো। ক্ষমা করবেন...’- এর জবাবে দর্শক-ভক্তদের মধ্য থেকে তুমুল করতালি ভেসে এলো। অত:পর শুরু হলো পরিবেশনা। এই গানটির সময় শিল্পীকে একটু ক্লান্ত লেগেছিলো? একটু কাঁপা কাঁপা গলা...? মনে হতে পারে। পবন যখন মঞ্চে, অপূর্ণতা রাখবেন না। ‘তোমার দিল কি দয়া হয় না’ এই কোরাসটুকু ছেড়ে দিলেন অন্যদের ওপর। তারা সমস্বরে গাইলেন, বাদ গেলেন না দর্শকও। এ সময় ঘোড়া চালনার মতো একটা ভঙ্গি করলেন,যেন, গানটির সঙ্গে খুব প্রাসঙ্গিক।
‘জয়গুরু, আপনারা সোনার মানুষ হন। এই আমার অনুরোধ। আমাদের সংস্কৃতি কতো উন্নত! সারাবিশ্ব চেনে বাংলাদেশকে। দুটো বাংলা কিন্ত এক। ’ কথাগুলো একদমে বললেন পবন দাস। তারপর অর্নব ও অন্যান্যদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘অর্ণব আমার ভাই। ’ অর্নব এগিয়ে এসে কোলাকুলি করলেন। পবন বাউল এবার পরিচয় করিয়ে দিলেন নিজের স্ত্রীর সঙ্গে। এরপর আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুরষ্কার-সম্মাননা নিয়ে মঞ্চ ছেড়ে গেলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি এই সংগীত সাধক। মঞ্চ ছেড়ে গেলেও রেখে গেছেন সুরের ইন্দ্রজাল। তার ভক্তদের অনেকেরই তখন বাড়ির রাস্তা মাপার পালা, রাত হলো যে! কিভাবে যাবেন সেই চিন্তা কপালে, কিন্তু ঠোঁটে গান, ‘তোমার দিল কি দয়া হয় না...’
বাংলাদেশ সময়: ০৪১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
এসও