মমতাজের সুর যেন লম্বা হতে হতে অনেকগুলো রশির আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়লো স্টেডিয়াম জুড়ে। তারপর বেঁধে-টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে আনলো গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকদের।
পবনদাশ বাউল তখন গেয়ে-নাচিয়ে-মুগ্ধ করে চলে গেছেন। গোটা আর্মি স্টেডিয়াম শান্ত। ফলে শীত শীত ভাবটা আরও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গুটিসুটি মেরে তাই যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা দাঁড়িয়ে; ইতস্তত হাঁটছিলেন যারা, চলাচলে গতি কমিয়ে; আর যারা বসেই ছিলেন গ্যালারি দখল করে, তারা আরও শক্তভাবে বসে থাকলেন। মিনিট দশেক লাগবে মমতাজের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত হতে। তার গানে নাচার-মাতার জন্য একটু বিশ্রাম তো দরকারই হয়, নাকি?
এ হচ্ছে ১৩ নভেম্বর রাতের (ততক্ষণে একটি তারিখ এগিয়ে ১৪ নভেম্বর বেজে গেছে ক্যালেন্ডারে) আর্মি স্টেডিয়ামে মমতাজ গান ধরার একটু আগের অবস্থা। তিনি যখন টেনে টেনে, কণ্ঠে পর্যাপ্ত আবেগ ঢেলে, ছড়িয়ে দিলেন ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু...’। গ্যালারি থেকে সুড়সুড় করে এলোমেলো দর্শকের ভীড় নেমে আসতে থাকলো সমতলে। কি কারণে কে জানে!
কারণ জানা নেই অর্ণবের বেলায়ও। তার গানে তো মাদকতা আছেই। আস্তে ধীরে ভুলিয়ে ভালিয়ে কেমন ঘুম পাড়িয়ে দেয়! কিন্তু স্টেজে অনেকটা ভিন্ন তিনি হবেনই। বিশেষ করে যখন ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’, সঙ্গ আছে পান্থ কানাই-বুনোর। ‘সোনা দিয়া বান্ধাইয়াছি ঘর’ থেকে শুরু হয়ে, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ হয়ে, ‘এক্কেবারে মরে যা’তে গিয়ে ঠেকলো যখন; হিসেব কষে দেখা গেলো- তারা গেয়ে ফেলেছেন ছ’টা গান। এরপর তাদের বিদায়ের পালা দর্শকদের ‘আরও’ অনুরোধ সত্ত্বেও। কিচ্ছু করার নেই, সময়ের অভাব। সময় এতো তাড়াতাড়ি চলে!
এমনটা মনে হয়েছিলো বারী সিদ্দিকীর সময়ও। তার কণ্ঠ-বাঁশি যেন পুরো স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকদের চুলে হাত বুলিয়ে দিলো আলতো করে! যেন এতোদিন, এতো কোমলভাবে আদর করেনি কেউ! শুনতে চায়নি ভেতরের হাহাকার। হাজার কণ্ঠ তাই কোরাসে যোগ দেয়। টেনে টেনে সুর ছড়িয়ে দেয় শহুরে আকাশে। কীভাবে তিনি উত্তাল করে দেন ভেতরের শান্ত নদী? কোন মন্ত্রে তাতে জাগে এমন ঢেউ?
তখনও প্রবেশ মিছিল
এমন ব্যাখ্যাতিত অনেক বিষয় জমাট হয়ে ছিলো আর্মি স্টেডিয়ামের বাইরেও। রাত দশটা। তখনও আর্মি স্টেডিয়ামের সবগুলো প্রবেশপথে দর্শকসারি লম্বা হয়ে বহুদূর অব্দি দাঁড়িয়ে। লোকগানের ভক্তদের আগমন শুরু বিকেল থেকেই। আয়োজকদের হিসেব অনুযায়ী, দ্বিতীয় দিনে উৎসবে উপস্থিত দর্শক সংখ্যা ষাট হাজার! এদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রথম দিনের তুলনায় লোক সমাগম হয়েছে বেশি।
অনিবার্য কারণবশত
নূরান সিস্টার্স-এর গাওয়ার কথা ছিলো এ দিন অর্ণবের পরেই। কিন্তু হুট করে জানানো হয়, তারা গাইছেন না। কারণ হচ্ছে ‘অনিবার্য কারণবশত’। এতে খানিকটা অতৃপ্তি তো তৈরি হয়েছিলোই। শেষদিন তারা গাইবেন কিনা, সে ব্যাপারটিও পরিস্কার নয়।
শেষ দিনে
শনিবার (১৪ নভেম্বর) মেরিল নিবেদিত, মাছরাঙা টেলিভিশন এবং সান ইভেন্টস আয়োজিত প্রথম আন্তজার্তিক লোকগানের উৎসব ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’-এর শেষদিন। তিন দিনের এ উৎসবের শেষদিনে মঞ্চে থাকবেন আবিদা পারভীন, লুবনা মরিয়ম ও সাধনা ডান্স গ্রুপ, ইসলাম উদ্দিন কিসসাকার, জলের গান, নিয়াভ নি কারা, পার্বতী বাউল, ইন্ডিয়ান ওশেন, কাঙ্গালিনী সুফিয়া এবং দ্য মাঙ্গানিয়ারস।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
কেবিএন
** ‘আপনারা সবাই সোনার মানুষ হোন’
** তিল ধারণের ঠাঁই নেই
** অতিথি পাখির ডানায় ভর করে...
** নাচ দিয়ে শুরু, লালনে জমজমাট