ঢাকা: শনিবার রাত পৌনে ২ টা, রাজধানী ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম। টানা ৫ দিন ব্যাপী আয়োজনের যেখানে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম উচ্চাঙ্গ সংগীতের চতুর্থ আসর।
আয়োজনকে কেন্দ্র করে দেশ ও বিদেশ থেকে আগত খ্যাতনামা শিল্পী এবং দর্শকদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা ৩ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়েছে।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) গভীর রাতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য তরুণ-তরুণী স্টেডিয়ামের ভেতরে ভীড় জমিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে কেউ মনোযোগ দিয়ে সঙ্গীত উপভোগ করছেন, আবার কেউবা আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। অনেকে চলে এসেছেন স্বপরিবারে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে। প্রেমিক-প্রেমিকা জুটির উপস্থিতিও কম ছিলো না।
শুধু তাই নয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আসরে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোর ও তরুণ বয়সীদের উপস্থিতি যেমন রয়েছে, তেমনি ভাবে প্রবীণদের উপস্থিতিও রয়েছে। একইভাবে চোখে পড়ে বিদেশিদের উপস্থিতিও।
আসরে আসা তরুণদের মতামত জানতে চাইলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রানা মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, আগ্রহ থেকেই এসেছি। গত বছরেও এসেছিলাম। কিন্তু গতকাল আসতে পারিনি, তাই আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আগে ভালো না লাগলেও এখন ভালো লাগতে শুরু করেছে। সঙ্গে আমার বন্ধুও এসেছে।
আসর নিয়ে শিক্ষার্থী রানা মাহমুদের বন্ধু রাকিবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দু’জনেই মহাখালীর ওয়ারলেস এলাকায় থাকি। সংবাদ মাধ্যমে দেখে এবং বন্ধুর কথা শুনেই এখানে আসা।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এই আসর ভালোই লাগছে বলে জানান রানার বন্ধু রাকিবুল ইসলাম।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার মেঘলা বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক ভাবে দেখতে বা শুনতে একটু অন্যরকম লাগলেও, একটু মনোযোগী হয়ে শুনলে নিশ্চিতভাবে এটি উপভোগ্য হবে। ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতে একটু মনোযোগী হলে সেটি অর্থবহ এবং খুবই শ্রুতিমধুর হয়।
আসর চলাকালীন সময়ে সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক ইন্দ্রজিৎ সরকারের সঙ্গে দেখা হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন- এবার চতুর্থ বারের মতো উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতে আসলাম। এর আগের ৩ বছরও এসেছি। প্রতিবারেই নিয়মিত উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠে না।
তিনি আরো বলেন, এই সঙ্গীত আয়োজন ভারতীয় উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। এখানে উপমহাদেশের সব বিখ্যাত শিল্পীদের আগমন ঘটে, যা অনেক সঙ্গীতানুষ্ঠানে হয়ে ওঠে না।
আসরের আয়োজক সংশ্লিষ্ট ইভেন্ট কোর্ডিনেটর মোহাম্মদ ইবনে মুহিদ বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের আয়োজনটি আরো বৃহৎ পরিসরে সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রত্যাশা করছি বাকি ৩ দিনে উপস্থিতি আরো বাড়বে। দর্শকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ সদস্য ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ মোট ১’ হাজার সদস্য মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে অস্থায়ী ক্লিনিক, চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭ টায়, শেষ হয় ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে। এ সময় আগত দর্শকরা বাসায় ফিরতে যেন বিপাকে না পড়েন সেই জন্য বিআরটিসির ১৬ বাস রিজার্ভ করা আছে। বাসগুলো অনুষ্ঠান শেষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিনা খরচে সঙ্গীতানুরাগীদের পৌঁছে দেবে।
অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ৩ স্তরের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজ বলেন, এখানে নিরাপত্তার স্বার্থে ৫’শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন, রয়েছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ। স্টেডিয়ামের সামনেই রাখা হয়েছে একটি এপিসি কার, ওয়াটার ক্যানন বা জল কামান, এসবি সুইপিং, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড। স্টেডিয়ামে প্রবেশের প্রতিটি ফটকে রয়েছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেকটর।
দ্বিতীয় দিনের আসরে শুরুতেই ধ্রুপদ পরিবেশন করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুণ্ডু। তিনি রাগ ভূপালি পরিবেশন করেন। তাকে পাখওয়াজে সঙ্গত করেন প্রতাপ আওয়াদ। শিল্পীকে উৎসব স্মারক তুলে দেন পরম্পরা সংগীতালয়ে তার গুরু পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। সরস্বতী বীণা পরিবেশন করেন জয়ন্তী কুমারেশ। শিল্পীকে পাখওয়াজে সহযোগিতা করেন আর শংকরানারায়ণন এবং ঘটমে এস কৃষ্ণস্বামী।
আরও সঙ্গীত উপস্থাপন করেন, সুস্মিতা দেবনাথ (খেয়াল, বেঙ্গল পরম্পরা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর (ধ্রুপদ), পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার (একক তবলা), ড.বালমুরালী কৃষ্ণ (কর্ণাটকী সংগীত) ও তার সঙ্গে বাঁশিতে পণ্ডিত রণু মজুমদার, শুভায়ূ সেন মজুমদার (এস্রাজ) এবং পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর (খেয়াল) পরিবেশনা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
এনএইচএফ/আরআই