বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের ১৭০টি চলচ্চিত্র নিয়ে শুরু হচ্ছে ‘চতুর্দশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৬’। এর স্লোগান ‘বেটার ফিল্ম, বেটার অডিয়েন্স, বেটার সোসাইটি’।
ঢাকা ক্লাবের গেস্ট হাউস রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উৎসবের বিস্তারিত কর্মসূচি জানান উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। তিনি বলেন, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশের সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি চলচ্চিত্র উৎসব, যা দেশে রুচিসম্পন্ন ও ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। এই উৎসব বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের মূলধারায় পরিব্যাপ্ত অবক্ষয়, কুরুচিপূর্ণতা আর সস্তা বাণিজ্যের বিপরীতে এক বলিষ্ঠ বিরুদ্ধবাদী অভিব্যক্তি। রেইনবোর এই উৎসব তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য বহির্বিশ্বের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ধারার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম। ’
এখানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপক নাজমুল এ কলিমুল্লাহ, নির্মাতা সামিয়া জামান প্রমুখ।
কোথায় কীভাবে উদ্বোধন
১৯৯৭ ও ২০০০ সালের আয়োজন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আয়োজকরা জানান, এবারও প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে উৎসব শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সময় না পান, সে ক্ষেত্রে উৎসব উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টায়।
উদ্বোধনী চলচ্চিত্র
‘মেহেরজান’খ্যাত নির্মাতা রুবাইয়াৎ হোসেনের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ এবার উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হবে চতুর্দশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এটি ইতিমধ্যে দেশের বাইরের কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে, প্রশংসাও কুড়িয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেত্রী সাহানা গোস্বামী, ভারতীয় অভিনেতা রাহুল বোস, বাংলাদেশের শাহাদাৎ হোসেন।
ছবি দেখার স্থান
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন ও আমেরিকান ইএমকে সেন্টার মিলনায়তনে উৎসবের চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনী হবে। স্বল্পমাত্র মূল্যে টিকিট কিনে ছবিগুলো উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা।
কী কী বিভাগ
উৎসবকে ভাগ করা হয়েছে কয়েকটি বিভাগে। প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় উৎসব উপলক্ষে ঢাকায় আসবেন বেশ কয়েকজন বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা। ছবিগুলো দেখানো হবে অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া) প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগ, ট্রিবিউটস, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেনস বিভাগ, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, উইমেন ফিল্মস ও ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্মস বিভাগে।
সেমিনার ও কর্মশালা
চতুর্দশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে ‘ষষ্ঠ ঢাকা আন্তর্জাতিক সিনে ওয়ার্কশপ’ অনুষ্ঠিত হবে ১৬ থেকে ২১ জানুয়ারি। তুর্কি বংশোদ্ভূত নরওয়েজীয় চলচ্চিত্রকার নেফিসে ওজকাল লরেন্টজিনের তত্ত্বাবধানে এতে দেশি-বিদেশি ৩৫ জন নবীন চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী, সমালোচক ও সাংবাদিক অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। সহযোগিতায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউ ল্যাব)। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে উৎসবে নারীর ভূমিকা বিষয়ক সম্মেলন হবে ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি।
উৎসবে কী কী প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে
আফগানিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মী ড. সাহরা কারিমি কর্তৃক ‘উইম্যান ফিল্মমেকার অ্যাজ এ স্টোরিটেলার’, তাজিকিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ ড. শরাফত এম আরাবোভা কর্তৃক ‘এট্রিবিউটস অব ন্যারেটিভ ইন উইমেন সিনেমা’, স্কটল্যান্ডের সেন্ট এন্ড্রিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুলগেরিয়ার বংশোদ্ভূত দিনা ইয়োরদানোভা কর্তৃক ‘উইমেন অ্যান্ড ফিল্মমেকিং ইন ইস্টার্ন সেন্ট্রাল ইউরোপ অ্যান্ড দ্য বলকান কান্ট্রিস’, ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত কানাডার চলচ্চিত্রকার ও শিক্ষক জোসফিন মাসারেল্লা কর্তৃক ‘রিফ্লেকশনস অন দ্য প্রোডাকশন প্রসেস: ফিল্ম কালচার অ্যান্ড জেন্ডার’, দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী ভভানি প্রকাশ কর্তৃক ‘দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে নারী’, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার ও গবেষক রুবাইয়াৎ হোসেন কর্তৃক ‘দ্য চ্যালেঞ্জ অব ফিমেল ফিল্মমেকারস: ক্লেইমিং অ্যান অটোনোমাস ইমাজিনারি অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল ল্যান্ডস্কেপ’। চলচ্চিত্রে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাটিজের সহকারী অধ্যাপক ইশরাত খান বর্ষা।
কোন কোন দেশের ছবি
এবারের উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কিউবা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, জার্মানি, গ্রিস, গিনি-বিসাউ, হংকং, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইটালি, জাপান, কাজাখাস্তান, কসোভো, কিরগিস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মেক্সিয়া, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেইন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আরব-আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভেনেজুয়েলা, ওয়েস্টার্ন সাহারার চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বাংলাদেশের যত ছবি
উৎসবে বাংলাদের ছবি থাকছে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে আছে রূবাইয়াৎ আহমেদের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ (উদ্বোধনী ছবি), হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপূত্র কমলা’, আবু শাহেদ ইমনের ‘জালালের গল্প’, রেদওয়ানি রনির ‘চোরাবালি’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’, শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘উত্তরের সুর’, খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘জোনাকির আলো’ ও অমিত আশরাফের ‘উধাও’। এ ছাড়া স্বাগতিক দেশের কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিও দেখানো হবে উৎসবে।
মিলনমেলা
এবার কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংশ্লিষ্টরা তাদের ছবির পরিচিতির জন্য সমবেত হতে পারবেন। উৎসবে পরিচিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যেখানে দর্শক, পরিবেশক, পরিচালক, প্রযোজক ভাবনা বিনিময় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইডিয়া ও তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পায়। এদিকে চলচ্চিত্রের যাবতীয় তথ্য সমৃদ্ধ স্মরণিকা প্রকাশ হওয়ার পাশাপাশি উৎসব চলাকালীন প্রতিদিনকার সংবাদসহ একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হবে। থাকবে আকর্ষণীয় পোস্টার ও স্মরণিকা। এ ছাড়া মিট দ্য প্রেস-এ চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পীসহ দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
জুরি বোর্ডে কারা
এবার ২০ জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব উৎসবের ছবিগুলো নির্বাচন করেছেন। দু’জন ছাড়া অন্যরা সবাই বিদেশি। বাংলাদেশি দু’জন হলেন ড. জাকির হোসেন রাজু ও অ্যাডাম দৌলা। জুরি বোর্ডে আরও আছেন ইরান, নেদারল্যান্ডস, অাফগানিস্তান, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে এবং ইংল্যান্ডের চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘন্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এসও/জেএইচ