১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেসব সংগ্রামী নারী শিল্পী প্রাণের ভয় না করে বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে সংগ্রামী তেজোদ্দীপ্ত সংগীত পরিবেশন করেছেন তাদেরই একজন শিল্পী শাহীন সামাদ। তখন তার বয়স ছিলো ১৮ বছর।
গানকে হাতিয়ার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন শাহীন সামাদ। বিভিন্ন ক্যাম্পে ক্যাম্পে বাংলাদেশের তরুণ সহশিল্পীদের সঙ্গে গান গেয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছিলেন মুক্তিকামী মানুষকে।
আনন্দের খবর হলো, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক শাহীন সামাদ সংগীতে বিশেষ অবদানের সুবাদে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০১৬ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন ১৬ জন বিশিষ্টজন। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে।
শিল্পকলার মধ্যে শাহীন সামাদ ছাড়া টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনয়ে জাহানারা আহমেদ, শাস্ত্রীয় সংগীতে পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, নৃত্যে আমানুল হক ও চিত্রকলায় কাজী আনোয়ার হোসেন (মরণোত্তর) এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এ বছর অন্যান্য ক্ষেত্রে একুশে পদকের জন্য নির্বাচিতরা হলেন ভাষা আন্দোলনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া (মরণোত্তর), ডা. সাইদ হায়দার ও ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধে লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাংবাদিকতায় দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, ভাষা ও সাহিত্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী, গবেষণায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ও মংছেন চীং মংছিন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীতদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন। নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ এক লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। এবার অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে দুই লাখ টাকা।
১৯৭৬ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।
১৯৫২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় শাহীন সামাদের জন্ম। বাবা শামসুল হুদা ও মা শামসুন্নাহার রহিমা খাতুন। শৈশব থেকেই সংগীতে আগ্রহী শাহীন সামাদের সংস্কৃতিমনা বাবা-মা তাকে প্রথম তালিম দিয়েছিলেন বাড়িতে, পরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগীত শিক্ষা শুরু করেন তিনি।
শাহীন সামাদ ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন থেকে নজরুলসংগীতে পাঁচ বছরের শিক্ষাক্রম শেষ করে আরও তিন বছর বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ করেন। সমাপনী পরীক্ষায় তিনি নজরুলসংগীতে প্রথম মান পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
শাহীন সামাদ দীর্ঘকাল ধরে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনে শিক্ষকতা করে আসছেন। আজও নজরুলসংগীতের প্রচার ও প্রসারে তার আন্তরিকতা ও উদ্যম অপরিসীম। অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি, এবার তার ঘরে আসছে একুশে পদক।
বাংলাদেশ সময় : ০১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
জেএইচ