বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা ছবি হিসেবে স্বর্ণভল্লুক (গোল্ডেন বিয়ার) জিতলো ইউরোপের অভিবাসী সংকট নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ফায়ার অ্যাট সি’। এটাই উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির বার্লিনে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়। জুরি প্রধান আমেরিকান অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপের হাত থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করে ইতালিয়ান নির্মাতা রোসি বলেছেন, ‘সচেতনতা বাড়াতে আশাবাদী। ট্র্যাজেডি থেকে মুক্ত হতে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মানুষের মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ’
ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে সমুদ্র পারাপারের সময় ল্যাম্পেডুসার মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে যে অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় তা উঠে এসেছে ছবিটিতে। দুই দশক ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকার চেষ্টা করছে তারা। এ কারণে মৃত্যুবরণ করেছে হাজারও শরণার্থী। স্যামুয়েল নামের এক বালকের চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে তা। তাদেরকেই ‘ফায়ার অ্যাট সি’ উৎসর্গ করেছেন রোসি। ২০১৩ সালে অন্য একটি প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে ভেনিসের সর্বোচ্চ পুরস্কার জেতেন রোসি।
‘ফায়ার অ্যাট সি’ সেরা ছবি হওয়া প্রসঙ্গে মেরিল স্ট্রিপ বলেছেন, ‘সাহসিকতার সঙ্গে অভিবাসীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে দারুণ গল্প বলার ঢঙে। একটি প্রামাণ্যচিত্র সত্যিকার অর্থে কি করে ফেলতে পারে তা ভাবিয়েছে আমাদের। এটা জরুরি, কল্পিত ও প্রয়োজনীয় ছবি।
‘থিংস টু কাম’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে রৌপ্যভল্লুক পেয়েছেন ফরাসি নারী নির্মাতা-অভিনেত্রী মিয়া হানসেন-লাভ। ছবিটিতে মায়ের মৃত্যু ও বিয়ে বিভেদের পরিস্থিতিকে মোকাবেলা শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফরাসি অভিনেত্রী ইজাবেল হাপার্ট।
আরব বসন্ত পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রেমের ছবি ‘ইনহিবেক হেদি’তে দারুণ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হয়েছেন তিউনিসিয়ার মায়েজদ মাস্তুরা। তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার তিউনিসিয়ান বিপ্লবের শহীদদের জন্য উপহার। আমরা স্বাধীন ও সুখী থেকে ভালো শিল্পকর্ম করতে পারবো আশা করি। ’
সত্তর দশকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত থমাস ভিন্টারবার্গের ‘দ্য কমিউন’-এ নিয়মবিরুদ্ধ এক স্ত্রীর চরিত্রে জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার উঠেছে ডেনমার্কের ট্রাইন ডাইরহোমের হাতে। ব্যক্তিগত ইচ্ছা আর সংহতি ও সহিঞ্চুতার মধ্যে দ্বন্দ্বকে ঘিরেই এর গল্প।
রৌপ্যভল্লুক গ্র্যান্ড জুরি প্রাইজ পেয়েছে অস্কারজয়ী বসনিয়ান নির্মাতা দানিস তানোভিচ পরিচালিত বলকান যুদ্ধের উত্তরাধিকার বিষয়ক ছবি ‘ডেথ ইন সারায়েভো’। চার নারীর মাধ্যমে পোল্যান্ডের ১৯৮৯-৯০ সময়কে তুলে ধরা পোলিশ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার টমাজ ওয়াসিলিউস্কির ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব লাভ’ পেয়েছে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার। চিত্রগ্রহণের পুরস্কার গেছে ইয়াঙ চাও পরিচালিত চীনা ছবি ‘ক্রসকারেন্ট’-এর ঘরে। এটি পেয়েছেন মার্ক লি পিং-বিং। লাভ ডায়াজ পরিচালিত আট ঘণ্টা দীর্ঘ ফিলিপিনো ছবি ‘অ্যা লুলাবি টু দ্য সরোফুল মিস্টারি’ পেয়েছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পুরস্কার।
আরবী ভাষায় নির্মিত ইসরায়েলি-ফিলিস্তিন হিপ-হপ ছবি ‘জংশন ফোর্টি এইট’ জিতেছে দর্শক পুরস্কার। এটি পরিচালনা করেছেন ইসরায়েলের উদি আলোনি। এর অভিনয়শিল্পীদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি নাগরিক। এর গল্প ফিলিস্তিনের র্যাপ তারকা ও তার প্রেমিকাকে ঘিরে। তারা থাকে তেল আবিবের ইহুদী-ফিলিস্তিন অধ্যুষিত শহরে। মধ্যপ্রাচ্যে এ জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি মাদক চোরাচালান হয়। দর্শক পছন্দে সেরা প্রামাণ্যচিত্র হয়েছে টোমার ও বারাক হেম্যানের “হু’স গনা লাভ মি নাউ?”।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
জেএইচ