১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আল-বদরের হাতে অপহৃত হন লেখক শহীদুল্লা কায়সার। এরপর আর ফিরে আসেননি।
শমীর প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজন করে ‘অরিজিৎ সিং উইথ সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’। শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এ কনসার্ট ছিলো ভারতীয় সংগীতের বর্তমান সেনসেশন অরিজিৎ সিংকে ঘিরে।
মধ্যভাগে মঞ্চে এসে শমী তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করি, বাঙালি গান শোনে। বাঙালি নাটক দেখে। বাঙালি সংস্কৃতিকে ভালোবাসে। ’ এরপর তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটা অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো। এতো বড় একটি স্বপ্ন সফল হয়েছে এক বছর ধরে। আমাদের এই স্বপ্নকে সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ’
শমীর মুখে এ কথা শুনে বিস্মিত হন অনেকে। যার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী, তিনি হিন্দি গানের পসরা বসিয়ে নিন্দিতই হলেন বলা চলে। বিশেষ করে হিন্দি গানের কনসার্ট করা তার স্বপ্ন উল্লেখ করায় হতবাক সবাই। অরিজিৎ বলিউডের গান-বাজনায় হালের ক্রেজ ঠিকই, কিন্তু তাকে নিয়ে তো কনসার্ট আগেও ঢাকায় হয়েছে, এতে স্বপ্নের কি আছে ঠিক বোধগম্য হলো না বেশকিছু দর্শক-শ্রোতার।
তবে ব্যবসার জায়গা বা ব্যবসায়িক কৌশল থেকে ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স এমন কনসার্ট আয়োজন করতেই পারে। তাছাড়া সংগীতের কোনো সীমান্ত নেই, তাই হিন্দি গানের পসরাও তারা সাজাতে পারেন। এটা তাদের চেতনার ব্যাপার। কিন্তু বুদ্ধিজীবীর সন্তান হয়ে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার সামনে এসে শমী যেভাবে গর্ব নিয়ে এটাকে স্বপ্ন বললেন, তা দৃষ্টিকটুই লেগেছে। শমী যতোটা না ব্যবসায়ী, তার চেয়েও অভিনেত্রী ইমেজটা ইতিবাচক। দর্শকদের মধ্যে তাকে নিয়ে এখনও দূষিত কোনো মনোভাব তৈরি হয়নি। সে ক্ষেত্রে এমন বক্তব্য সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হচ্ছে।
অবশ্য কনসার্টের শুরুতে অদিত অ্যান্ড ফ্রেন্ডস বাংলা ভাষার গান গেয়েছেন। তাদের পরিবেশনায় ছিলো দেশাত্মবোধক গানও। যদিও বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে অদিতের নয়, গান গাওয়ার কথা ছিলো এলিটা ও মাহাদীর। কিন্তু প্রচারণায় অরিজিতকে প্রাধান্য দেওয়ায় তারা নিজেদেরকে সরিয়ে নেন। তাদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংগীতশিল্পীরা।
গায়িকা আলিফ আলাউদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আজ থেকে বেশ অনেক বছর আগে সালমান খান ঢাকায় এসেছিলেন। গানের তালে হাত নাড়িয়ে তারপর চলে গেলেন। সেই অনুষ্ঠানে আমারও গাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সেই একই কারণে গাইনি। আমার এসব বিষয় গায়ে লাগে। আমাদের সবারই গায়ে লাগে। ’
গেলো বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আলিফ আরও লিখেছেন, ‘বলিউড তারকা হৃতিক রোশনের পাশে লোকগানের সম্রাজ্ঞী মমতাজের ক্ষুদ্র ছবি অতিশয় বেমানান। মমতাজ যে কোনো আন্তর্জাতিক তারকার চেয়ে যখন-তখন দর্শক মাতাতে সক্ষম। আমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে পারি না। নিজেদেরকে নিয়ে লজ্জা হয়!’
প্রতিবাদ জানানোর জন্য এলিটা আর মাহাদীকে বাহবাও দিয়েছেন আলিফ। সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদ লিখেছেন, ‘যাক, অন্তত মাহাদী ও এলিটা প্রমাণ করলো এখনও কিছু সংগীতশিল্পীর আত্মসম্মানবোধ আছে। ’ দর্শক-শ্রোতাদের একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশীয় শিল্পীদেরকে হেয় করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানাতে জনসাধারণেরও উচিত এগিয়ে আসা। ’
চলতি মাসে ভারতের আরও কয়েকজন সংগীতশিল্পীর অনুষ্ঠান হবে ঢাকায়। ১৮ মার্চ মোনালি ঠাকুর আর ৩১ মার্চ আসবেন ফারহান আখতার। শুক্রবার (১১ মার্চ) বিশাল-শেখরের আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে। ভারতীয় শিল্পীদের প্রতি আয়োজকদের অতি আগ্রহে হতাশ শিল্পীসমাজ। গায়ক আসিফ আকবর তো অনেকদিন ধরেই এর বিরুদ্ধে বলে আসছেন, ফেসবুকেও লিখেছেন।
এবার মাইলস ব্যান্ডের শাফিন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কলকাতা থেকে আমার এক বন্ধু আমাকে জানালো, অরিজিৎ সিং আর্মি স্টেডিয়ামে ঢাকঢোল পিটিয়ে গান করবেন। ফারহান আখতার আসবেন ৩১ মার্চ। সেই বলিউড জোর করে শুনতেই হবে! বাংলা রক ভালো লাগে ওর। যাকে আমরা ব্যান্ড সংগীত হিসেবে উল্লেখ করি। ওপার থেকে এই বেদনা অনুভব করছে সে। ’
শাফিন যোগ করে আরও লিখেছেন, ‘আমরা মাইলসের সদস্যরা জানি, কতোটা কঠিন ও কতো বছর সংগ্রাম করে বাংলা রককে বাংলাদেশের মূলধারার সংগীতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা এখনও লড়াই করে যাচ্ছি। কিন্তু যদি নিজের দেশের মানুষই তা বুঝতে না চায় এবং নিজেদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ না নেয়, তাহলে কে নেবে? বলিউডের সংগীত ও চলচ্চিত্র তারকাদেরকে প্রতি সপ্তাহে কতো টাকা দিয়ে দিচ্ছি আমরা? সে খেয়াল আছে কারও?’
শমী কায়সার কি এসব মন্তব্য দেখছেন? অরিজিৎ সিংকে এনে তিনি নিজের স্বপ্নপূরণ তো করেছেন, এবার বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে কিছু করুন ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্স থেকে। যে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য তার বাবা শহীদ হয়েছেন। যার সবচেয়ে গর্বের পরিচয়, তিনি শহীদের সন্তান।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৬
জেএইচ/