কী একটা জীবন তাই না? এই আছি এই নেই! অভিনেত্রী দিতি রোববার (২০ মার্চ) বিকেল ৪টা ৪ মিনিট পর্যন্ত ছিলেন। কিন্তু ৪টা ৫ বাজতেই তিনি নেই! প্রয়াত নায়ক মান্না প্রযোজিত ও অভিনীত ‘লুটতরাজ’ ছবির একটা গান খুব মনে পড়ছে- ‘তুমি নাই কিছু নাই, তুমি আছো সব আছে...’।
এই গানে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন দিতি। তার চলে যাওয়ায় বিনোদন অঙ্গনে যে শুন্যতা নেমেছে, শিল্পীরা যেভাবে শোকে মুহ্যমান, তাতে মনে হচ্ছে- দিতি নাই কিছু নাই! যে চলে যায় সে ফেরে না, তিনিও আর ফিরবেন না। এই মুত্যুতে যেন আপনজন হারানোর শোক ছড়িয়েছে সারাদেশে। তাকে নিয়ে কতোজনের কতো না স্মৃতি।
দর্শকদের কাছে দিতির বড় পরিচয় ছিলো অভিনেত্রী। কিন্তু সোনারগাঁর দত্তপাড়ার কাছে তিনি শুরুতে ছিলেন গায়িকা! ১৯৮৪-৮৫ সালের কথা। তিনি তখনও রূপালি পর্দায় আসেননি। নারায়ণগঞ্জের এখানে সেখানে গান গেয়ে বেড়ান। বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠানেই গাইতেন বেশি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমে নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় আসেন দিতি। অভিনয় করে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে ব্যস্ত নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। কিছু মেয়েকে সারাজীবন মনে থাকে। ভালোবাসলেও, ভালো না বাসলেও। দিতিও তাদের মতোই। দর্শকরা তাকে ভালোবেসেছিলেন। ভালোবেসে যাবেন। দিতিকে কখনও ভুলবে না দর্শক।
দিতির ছবিগুলো বেঁচে থাকবে ভক্তদের মনে। ‘স্বামী স্ত্রী’, ‘হিরামতি’, ‘সাজানো বাগান’, ‘সহধর্মিনী’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘পাতালপুরী’, ‘চরম আঘাত’, ‘কাল সকালে’, ‘ভয়ঙ্কর সাতদিন’, ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্নেহ’, ‘চন্ডিদাস রজকিনী’, ‘আত্মবিশ্বাস’, ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ আরও কতো ছবির নামই তো বলা যায়।
কৈশোর থেকে দিতির অনেক ছবি দেখেছি। সিনেমা হলেও, টেলিভিশনেও। ‘দুই জীবন’, ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’, ‘শেষ প্রতীক্ষা’, ‘লুটতরাজ’, ‘চার সতীনের ঘর’ প্রভৃতি। পর্দায় তাকে দেখলেই মনে হতো যত্নশীল একজন নারী। দায়িত্বশীল একজন গৃহিণী। স্নেহভাজন প্রতিবেশী। মমতাময়ী মা। ব্যক্তিজীবনেও তিনি তেমন ছিলেন। তার কাছের মানুষরা স্মৃতিচারণে সেটাই জানাচ্ছেন।
দিতি কি বড় অবেলায় চলে গেলেন? অবেলাই তো! তার তো যাওয়ার কথা ছিলো না। অন্তত এতো তাড়াতাড়ি না। সেদিনও তো ‘রাজা বাবু’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এফডিসির সবার কাছে সেই স্মৃতি এখনও তাজা। শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতি, ঝরণা স্পট, কড়ইতলা, ফ্লোরগুলো তার পুরনো দিনগুলোর নিরব সাক্ষী হয়ে আছে। তার অভিনীত জনপ্রিয় গানের লাইনই এখন সবার মুখে মুখে- ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, তোমার মুখের কথা না শুনিলে, পরাণ আমার রয় না পরাণে...’!
পুরনো স্মৃতিরা এখন সবাইকে নাড়া দিচ্ছে। শোকে কারও কারও ভাষা হারিয়ে গেছে। অনেকের আফসোস আছে, শেষ দেখাটা হলো না। তারপরও বিদায় জানাতে হয়। ব্রেন টিউমার দিতির মৃত্যুর দুয়ারটা খুলে দিয়েছিলো, কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাকে নিয়ে গেলো ওই দরজার ওপারে। যেখান থেকে ফেরে না কেউ।
পুত্র-কন্যা থাকার পরেও অসুস্থ থাকাকালে দিতি একরকম নিঃসঙ্গই ছিলেন। রোগ হলে সেবা পাওয়া যায়, কিন্তু সেই সেবা কি নিঃসঙ্গতা এড়াতে পারে? দিতির বেলায়ও হয়তো তেমনই হয়েছে। জীবনটা সিনেমা না, হলে ভালো হতো। হাসপাতাল থেকে আবার হাসিমুখে ঘরে ফিরতেন দিতি!
* ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’ গানের ভিডিও :
* ‘তুমি আজ কথা দিয়েছো’ গানের ভিডিও :
* ‘তুমি নাই, কিছু নাই’ গানের ভিডিও :
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
জেএইচ
** চিরবিদায় দিতি, ফেসবুকে শোক
** দিতির প্রথম জানাজা সম্পন্ন, ১০টায় মরদেহ যাবে এফডিসিতে
** বাবার কবরের পাশে সমাহিত হবেন দিতি
** বাদ এশা দিতির প্রথম জানাজা, সোমবার দুপুরে দাফন
** চিত্রনায়িকা দিতি আর নেই