ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

চোখে জল এনে দিলো ‘জন্মসাথী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
চোখে জল এনে দিলো ‘জন্মসাথী’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ছবিটা দেখেছি, সারাক্ষণ কেঁদেছি। শুধু কেঁদেছি বললে ভুল হবে, ক্রোধেরও জন্ম হয়েছে।

আমরা কি আবার একাত্তরে ফিরে যেতে পারি না? অস্ত্র হাতে তুলে নিতে পারি না?...এই ছবিটা আমাদের চেতনায় নাড়া দিয়েছে। আঘাত করেছে। ’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘জন্মসাথী’ নামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শণী শেষে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রামাণ্যচিত্রটি উপভোগ করেছেন তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনিও ছবিটিকে মুক্তিযুদ্ধের দলিল বলে মন্তব্য করেন।

‘জন্মসাথী’ নির্মাণের পেছনের গল্পটি অন্যরকম। শবনব ফেরদৌসীর মনে হলো যে, তার জন্মের সময়টির সঙ্গে যুদ্ধশিশুদেরও জন্ম। এক কথায় ওরা তার জন্ম সাথী। তিনি মনে করেন, যুদ্ধশিশু নামকরণটি যথার্থ নয়। শবনব এই মানুষগুলোকে বিজয়শিশু বা ভিক্টোরি চাইল্ড নামে ডাকার আহবান জানান। দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনি এই প্রস্তাব রাখেন উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর। শবনম ফেরদৌসী নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনিই খেটেখুটে তৈরি করেছেন ৮৫ মিনিট ব্যাপ্তির ছবিটি।

অনুষ্ঠানে প্রামাণ্যচিত্র উপভোগ করেছেন যুদ্ধশিশু তথা বিজয় শিশু সুধীর বর্মণ। তিনি প্রামাণ্যচিত্রের পুরোটা জুড়ে আছেন। তার সঙ্গে এসেছিলেন তার একমাত্র মেয়ে জনতা বর্মণ।

শবনম ফেরদৌসী বলেন, ‘আজকে যদি আমি আপনাদের ভাষায় যুদ্ধশিশু হতাম, সুধীরের (প্রামাণ্যচিত্রটির চরিত্র) চেয়েও করুণ জীবন হতে পারতো। আমার জীবন হতে পারত ব্রোথেলে। সুধীর যদি আমার মা-বাবার ঘরে জন্ম নিতো, তাহলে সে সংসদ সদস্যও হতে পােোত। সে ভাবতেও পারে না, সুধীরের কল্পনায়ও নেই-এটি হওয়া সম্ভব। ’

শবনম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ৪৫ বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য এতো গর্ববোধ করা হলেও এই শিশুদেরই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো বিদেশে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘একাত্তরে নারীকে একটা যুদ্ধ বেশি করতে হয়েছে, সম্ভ্রম রক্ষার যুদ্ধ। সুতরাং নারীর ছিলো তিন যুদ্ধ, পুরুষের ছিলো দুই যুদ্ধ। সেদিক থেকে যে স্বাধীনতা আমরা ভোগ করছি, সেখানে নারীর অবদান একধাপ বেশি। ’

তিনি মনে করেন, সেই নারীর সন্তান যারা,  তাদেরকে মর্যাদাপূর্ণ জীবন দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন একাত্তর টেলিভিশনের সম্পাদক এবং প্রধান নির্বাহী সামিয়া জামান। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ৭১ মিডিয়া প্রযোজিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি আগামী ২৫ মার্চ প্রচার হবে ৭১ টিভিতে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সদস্য সচিব ও ট্রাস্টি তারিক আলী জানান, ‘জন্মসাথী’র সঙ্গে সম্পৃক্ততায় তারা অানন্দিত।

সুধীর বর্মণ, শামসুন্নাহার এই দুই বিজয় শিশু ও তার পরিবারের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটিতে। কিন্তু মনোয়ারা ক্লার্ককে ১৯৭২ সালে কানাডার একটি পরিবার দত্তক নিয়ে যায়। সময়ের স্রোতে জীবন এগিয়ে চললেও ৪৩ বছর বয়সে গিয়ে জগৎ সংসারের জটিলতায় তার প্রয়োজন পড়ে জন্ম সনদের। এসেছিলেন এই দেশে। আবার চলেও গেছেন। তার কথাও তুলে ধরা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটিতে। এর মধ্যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন শামসুন্নাহার। বাস্তহারা এই নারী রাষ্ট্রের কাছে কিছু চান না। কিন্তু তার জীবন এখন হুমকির মুখে। অনুষ্ঠানে তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন নির্মাতা।

এদিকে এই তিনজনের পৃথিবী যেন কিছুক্ষণের জন্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো দর্শকের সঙ্গে। তাইতো ‘জন্মসাথী’ দেখতে দেখতে চোখের কোনে জলের দেখা পেয়েছেন অনেকেই।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, অধিকারকর্মী খুশি কবির, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ, নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মোরশেদুল ইসলামসহ গণ্যমান্য অনেকেই উপভোগ করেছেন ‘জন্মসাথী’।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এসও

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।