শূন্যন থিয়েটারের দর্শক সমাদৃত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একক অভিনীত নাটক ‘লাল জমিন’ নিয়মিত প্রদর্শনীর ১০০তম সন্ধ্যার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে এর শততম প্রদর্শনী হবে।
মান্নান হীরা রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। ২০১১ সালের ১৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে ‘লাল জমিন’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। এরপর দেশের প্রায় ৩৭টি জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, লন্ডন ও নিউইয়র্কে আমন্ত্রিত হয়ে নাটকটির প্রদর্শনী হয়েছে। এতে একক অভিনয় করেছেন মোমেনা চৌধুরী। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
বাংলানিউজ : শততম রজনীতে এলো ‘লাল জমিন’। অনুভূতি কেমন?
মোমেনা চৌধুরী : সত্যি কথা বলতে, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি দারুণ আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত। আমার ৩০ বছরের থিয়েটার জীবনে একটি নাটকে একক অভিনয় নিয়ে এতোদূর আসার পেছনে যারা আমাকে এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নাটকটির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে যে সুনাম বয়ে আনতে পেরেছি, সেজন্যও সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বাংলানিউজ : ‘লাল জমিন’ মঞ্চে আসার আগে কেমন অনুভ‚তি ছিলো?
মোমেনা চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধে হত-আহত-সর্বশান্ত কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল বীর সেনানীদের প্রতি প্রণতি নিবেদনের একটি শিল্পভূমি পেয়ে সবাই উত্তেজিত ছিলাম। এই অকুণ্ঠ বাসনা পূরণের ক্ষেত্র পেয়ে যেন সবার সম্মিলিত অভিজ্ঞতার যথার্থ প্রকাশরূপ পেয়েছিল সৃজনে। এ সৃজনী অভিযাত্রা এক সন্ধ্যায় মঞ্চ-আলোয় উদ্ভাসিত হলো মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এক কিশোরীর সংগ্রামী জীবনের নাট্য প্রকাশ ‘লাল জমিন’। ‘লাল জমিন’ আমাদের মঞ্চের এক সাহসী নাদ। এ নাটকের পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি। গান গেয়েছেন বারী সিদ্দিকী, রামিজ রাজু, নীলা সাহা।
বাংলানিউজ : নাটকটির মহড়ার সময়কার কথা মনে পড়ে?
মোমেনা চৌধুরী : এই নাটকটির মহড়া যখন শুরু করি তখন একটু চিন্তিত ছিলাম। কারণ এর আগে কখনও একক নাটকে অভিনয় করিনি। তখন এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম। চমৎকার একটি নাটক লিখে দেওয়ার জন্য মান্নান হীরার কাছে কৃতজ্ঞ। নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশিত নাটক এবারই প্রথম শততম রজনীতে পড়লো।
বাংলানিউজ : ‘লাল জমিন’ নাটকের কিশোরী কন্যাকে কীভাবে দেখেন আপনি?
মোমেনা চৌধুরী : তের ডিঙিয়ে চৌদ্দ বছর ছুঁই ছুঁই এক কিশোরী কন্যার গল্প ‘লাল জমিন’। শুধু দু’টি শব্দ কিশোরীর মস্তকে আর মনে জেগে রয়, মুক্তি-স্বাধীনতা। চৌদ্দ বছরের কিশোরীর ধবধবে সাদা জমিন যুদ্ধকালীন নয় মাসে রক্তরাঙা লাল হয়ে উঠে। ‘লাল জমিন’ কিশোরীর রক্তরাঙা অভিজ্ঞতার মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্যপ্রকাশ।
বাংলানিউজ : ‘লাল জমিন’ নাটকটি এখন প্রাসঙ্গিক কেনো?
মোমেনা চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধে এক কিশোরীর অংশগ্রহণ, গল্পের অগ্রগতির সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহতা, মেয়েটির ত্যাগ- সবশেষে স্বাধীনতা অর্জন দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতা সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় ‘লালজমিন’। স্বাধীনতা অর্জনই কেবল ‘লাল জমিন’-এর সমাপ্তি দৃশ্য নয়- এরপরে যুক্ত হয়েছে গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের যুদ্ধোত্তর সেই ঘাতক দালালদের বৃত্তান্ত ও একজন মুক্তিযোদ্ধা নারীর উপলব্ধি যা দর্শকদের বর্তমানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে।
বাংলাদেশ সময় : ০১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
জেএইচ