সদ্যপ্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন সম্পর্কে অনেকের চেয়ে ভালো বলতে পারেন একজনই। তিনি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মাসুদ পারভেজ তথা সোহেল রানা।
বুধবার (৬ এপ্রিল) সন্তানতুল্য খোকনকে এভাবেই স্মৃতি হাতড়ে তুলে ধরলেন মাসুদ পারভেজ। দুপুরে নিজের বাসায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে খোকন সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য দিলেন অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ।
“আমি তখন ‘জাদুনগর’ ছবিটি তৈরি করছি। খোকন খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছিলো আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বলে। সঙ্গে ছিলো মিলন নামে আরেক বন্ধু। খোকনের মুখেই শুনেছিলাম, ওরা নাকি দু’দিন বাসার সামনে অপেক্ষা করেছিলো। মিলন সাহসের অভাবে ফিরে গেলো। কিন্তু রয়ে গেলো খোকন। ও প্রথম সাক্ষাতেই আমাকে জানিয়েছিলো চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে চায়। ওকে পরামর্শ দিয়েছিলাম পড়াশোনা শেষ করে আসার জন্য। কিন্তু নাছোড়বান্দা সুরে জানালো, সে ঘর পালানো ছেলে। আমার হাতে তখন ‘জাদুনগর’-এর চিত্রনাট্য। ওকে কিছু সংলাপের মানোন্নয়ন করার জন্য দিলাম। লক্ষ্য করলাম, ও ভালো করেছে। এরপর থেকে সে দীর্ঘদিন আমার সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। ”
খোকন দীর্ঘদিন রোগভোগের পর মারা গেছেন। এ বিষয়টা নিয়তি ছাড়া আর কিছু নয়। মাসুদ পারভেজ মনে করেন, খোকনের চিন্তাধারা ও জীবনযাপন অন্য দশজন পরিচালকের চেয়ে আলাদা ছিলো। খোকনের একটিই বদঅভ্যাস ছিলো, বেশি বেশি পান খাওয়া। মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘ও আমাকে এতোটাই মান্য করতো যে, আমার পরামর্শে সুপারি ও জর্দা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলো। আমাকে কথা দিয়েছিলো ধীরে ধীরে পান খাওয়া ত্যাগ করবে। ’
খোকনকে নিয়ে এখন অনেক ধরনের কথা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে খোকনের জন্মদিনের ভুল তারিখসহ, কিছু অসত্য ও মিথ্যা তথ্য চোখে পড়েছে মাসুদ পারভেজের। এটা তাকে ব্যথিত করেছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই অভিনেতা উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “লড়াকু ছবিটি প্রযোজনা করেছি আমি। পরিচালক খোকনকে নির্বাচন করেছি অামি। তার হাত ধরে অনেক শিল্পী চলচ্চিত্রে এসেছে, এটা ঠিক। কিন্তু অনেকেই লিখেছেন- অামার ভাইকে চলচ্চিত্রে এনেছেন খোকন! আমার কথা হলো, রুবেল আমার ভাই, ‘লড়াকু’ আমার সহকারীর (খোকন) ছবি, প্রযোজক হলাম আমি। তাহলে রুবেলকে চলচ্চিত্রে কে এনেছে?”
মাসুদ পারভেজ জানান, ‘লড়াকু’ ছবিতে রুবেল নায়ক হিসেবে আত্মপ্র্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কয়েকদিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। খুব করে চাইছিলেন পর্দায় নিজের ভাইয়ের ‘এন্ট্রি সিন’ নিয়ে। অবশেষে মাসুদ পারভেজের ‘মনের মতো’ অভিষেক হলো রুবেলের।
খোকন অর্থকষ্টে ছিলেন, এটা সত্যি নয়। তার চিকিৎসায় সরকার যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে মন্তব্য করেন মাসুদ পারভেজ। অনেক খবরে এই তথ্যটি ভালোভাবে আসেনি। মাসুদ পারভেজ জানান, খোকনের চিকিৎসায় তার কাছের মানুষরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। সবাই যে নিজের নাম প্রকাশ করবেন, এমন নয়।
মাসুদ পারভেজ-শহীদুল ইসলাম খোকন গুরু-শিষ্যের এক নজিরবিহীন উদাহরণ বলে মনে করেন একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক। আগের দিনে এমন গুরু-শিষ্যের দেখা মিলতো। খোকন এমন একজন মানুষ ছিলেন যে, মাসুদ পারভেজের কোনো ‘আদেশ’ রাখার জন্য ‘আগে-পরে’ কি আছে ভাবতেন না। অর্থাৎ কোনো জরুরি বা ঠুকনো অজুহাত দেখাতেন না খোকন।
অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবির নির্মাতা খোকন। অ্যাকশন ছবির নির্মাণ কমিয়ে দেওয়া বা নাম করার জন্য ভিন্নধারার ছবি বানোনোতে ঝুঁকে পড়া খোকনকে ভালোভাবে নেননি ওস্তাদ মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘ওর এই বদলকে আমি মেনে নিতে পারিনি। যে খোকন অ্যাকশন ছবি বানিয়ে এতো নাম কামালো, গাড়ি-বাড়ি করলো, সে কেন ওই পথে হাঁটবে? খোকন কেনো ছবি বানাতে গিয়ে বাড়ি বিক্রি করবে! অনেকের দৃষ্টিতে এটা তার যুদ্ধ হতে পারে, আমার কাছে নয়। ’
খোকনের স্ত্রী জয় ইসলাম সম্পর্কে মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এমন নারী বা স্ত্রী খুব কমই হয়। আমার মনে হয়, উপরওয়ালার কাছে এর যথার্থ পুরস্কার পাবেন খোকনের স্ত্রী। খোকনও ভাগ্যবান যে, এমন একজন সঙ্গী ওর জীবনে ছিলো। যে কি-না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাসিমুখে স্বামীকে সেবাযত্ন করেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এসও/জেএইচ