ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নাটকপাড়ায় তখন ব্যস্ত রাজ্জাক। কোনো একটা কাজে সেখানে গিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার খান।
নায়করাজের ভাষ্যে, ‘জব্বার সাহেব আমাকে তার তিন নম্বর অ্যাসিস্ট্যান্ট বানালেন। পরে অবশ্য তার তিনটি ছবিতে অভিনয় করলেও আমি তার কাছে নায়ক ছিলাম না। তিনি আমাকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। '
এমনই স্মৃতিচারণায় মুখর ছিলো শনিবারের (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা। বাংলাদেশের ‘চলচ্চিত্রের জনক’ আব্দুল জব্বার খানের জন্মশতবর্ষ উৎসবের প্রথম দিনের আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হাসান ইমামসহ আরও অনেক গুণী মানুষ।
জন্মশতবর্ষের দিনে প্রয়াত শিল্পীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সবাক চলচ্চিত্রের সফল এই নির্মাতাকে নিয়ে রাজ্জাক আরও বলেন, ‘শুরু থেকে তার সন্তানরা বড় ভাইয়ের মতো করে আমাকে দেখে। আমিও যখনই সময় পাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার পরিবারের সঙ্গে এখনও তেমনই যোগাযোগ আছে। ’
কথা বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘‘আজ জব্বার সাহেব নেই। এই উদ্যোগ যারা নিয়েছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আজ এখানে আরও শিল্পী, কলা-কুশলী থাকতে পারতেন। আব্দুল জব্বার সাহেব আমাদের মাঝেই আছেন। ’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘আব্দুল জব্বার খান জন্মশতবর্ষ উৎসব’ শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। বেলুন, ফানুস ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন নায়করাজ রাজ্জাক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। এই আয়োজন চলবে আরও পাঁচদিন।
রাজ্জাক ও হাসান ইমামসহ উপস্থিত বক্তাদের মতে, আব্দুল জব্বার খান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনক। হাসান ইমামও আব্দুল জব্বার খানের ছবির নায়ক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাকে কোনোদিন কাউকে ধমক দিতে দেখিনি। মাঝে মধ্যে উপদেশ দিতেন। তারপরও সবাই তাকে কেনো যেন ভয় পেতো, সমীহ করতো। এমনকি তার শ্যালক অভিনেতা সাইফুদ্দিনও ভয়ে ভয়ে থাকতো। এমনই ছিলো মানুষটির ব্যক্তিত্ব। ’
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন প্রযোজক একেএম জাহাঙ্গীর খান। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি তাকে চাচা বলে ডাকতাম। তার শুটিং দেখতে যেতাম। আমাকে বলতেন, ‘তোমার বাবা বকবে, এসো না। ’ চাচাকে বলতাম, চলচ্চিত্রে আমিও কিছু করতে চাই। পরে অবশ্য তার দোয়ায় অনেক ছবি প্রযোজনা করেছি এবং তার ও বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছি। ’
আব্দুল জব্বার খান জন্মশতবর্ষ উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও আব্দুল জব্বার খানের বড় পুত্র ইসমত হায়াত খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এ আয়োজনের সভাপতি হিসেবে তিনি বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, জাকির হোসেন রাজু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আব্দুল জব্বার খানের লেখা চিঠি পাঠ করে শোনান তার নাতনি। বেশ আগে লেখা চিঠির ভাষায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শক।
এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।
এদিকে আগামী ৩ আগস্ট ‘মুখ ও মুখোশ’-এর ৬০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে ‘সেলুলয়েডের অশ্বারোহী আব্দুল জব্বার খান’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আরও বড় পরিসরে চলতি বছরের ৩ আগস্ট আব্দুল জব্বার খানের স্মরণে অনুষ্ঠান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৬
এসও/জেএইচ