মার্কিন সংগীতশিল্পী প্রিন্সের জীবনের অনেক কিছুই ছিলো রহস্যময়। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় এক স্টুডিওতে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নির্ঘুম দিনরাত
গান-বাজনার বেলায় ভীষণ আন্তরিক ছিলেন প্রিন্স। স্টুডিওতে অ্যালবামের কাজ শুরু করলে কয়েকদিন না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার অভ্যাস ছিলো তার পুরনো। ১৯৮৫ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মতো আর কেউই এতোক্ষণ জেগে থাকতে পারে না। গান আমাকে জাগিয়ে রাখে। ’ তিনি সাক্ষাৎকার দিতেন কদাচিৎ। এমনকি সাংবাদিকদের প্রায়ই খেপাতেন। কারণ প্রিন্স চাইতেন তার গানেই মনোযোগী হোক অন্যরা।
যিহোবা উইটনেস অনুসারী
স্লাই অ্যান্ড দ্য ফ্যামিলি স্টোন ব্যান্ডের প্রাক্তন বেজবাদক ল্যারি গ্রাহাম ছিলেন প্রিন্সের বন্ধু ও পরামর্শদাতা। তিনিই ২০০১ সালে যিহোবা উইটনেসেস সংগঠনের সঙ্গে প্রিন্সের পরিচয় করিয়ে দেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই এই ধর্মে বিশ্বাস করেন। ২০০৮ সালে নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনকে প্রিন্স বলেছিলেন, “এটাকে ধর্মান্তরীকরণ হিসেবে দেখছি না মোটেই। ব্যাপারটা হলো উপলব্ধি। অনেকটা ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’-এর মর্ফিউস ও নিওর মতো। ”
সময়ে অবিশ্বাস
এটাকে পৌরাণিক কথা মনে হতে পারে। কিন্তু প্রিন্স বরাবরই নিজের অভিমতে উল্লেখ করেছেন সময় নিছকই একটা চাল কিংবা খেল। ১৯৯৯ সালে ডাচ টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ১৯৮৪ সালে ‘১৯৯৯’ অ্যালবামের রহস্যদঘাটন-সংক্রান্ত গানের রেকর্ডিং করার সময় এই ধারণা আবিস্কার করতে থাকেন। তার দর্শন অনেকটা এমন ছিলো যে, জন্মদিনে বিশ্বাস করেন না। তিনি বলে গেছেন, ‘আমি জন্মদিন উদযাপন করি না। তাই দিন গোনা হয় না আমার। একইভাবে সময় গোনা হয় না। ফলে দশ বছর আগে যেমন ছিলাম তেমনই থাকতে পারছি। ’ এই বিশ্বাস প্রসঙ্গে নিজের বয়স বাড়েনি দাবি করে ২০১১ সালে গার্ডিয়ানকে প্রিন্স বলেন, ‘সময় হলো মনের কল্পিত বিষয়। এটা সত্যি নয়। ’
অস্ত্রোপচারের রহস্য
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে উঁচু হিল ও অতিরঞ্জিত শার্ট পরলেও লাঠি হাতে হাঁটতে হতো প্রিন্সকে। ২০০৫ সালে এসে নিতম্বে সমস্যাটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ কারণে চুপিসারে অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০৯ সালে বিনোদন সাংবাদিক রজার ফ্রাইডম্যান জানান, দুটি নিতম্বই প্রতিস্থাপনে অস্বীকৃতি জানান প্রিন্স। কারণ যিহোবা উইটনেস অনুসারী হিসেবে রক্তদানে বিশ্বাস করতেন না তিনি। তবে পরের বছর আরেক সাংবাদিক জানান, মঞ্চে গানের সঙ্গে প্রিন্সের নাচের তৎপরতায় পরিস্কার বোঝা যায় তার নিতম্ব প্রতিস্থাপনের গুজব ভিত্তিহীন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের মতো এ বছরও তিনি ছড়ি নিয়ে চলাফেরা করায় পুনরায় এই গুঞ্জন চাউর হয়ে যায়। তাছাড়া তার পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
বেগুনি বাড়ি
প্রিন্সকে নিয়ে ভক্তদের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর সব গল্প আছে। এর মধ্যে একটিতে দাবি করা হয়, কৈশোরে নিজের ঘরটা আয়না ও খরগোশের পশম দিয়ে সাজিয়েছিলেন তিনি। কে জানে? সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে ভাড়াবাড়িটা বেগুণি রঙে এঁকেছিলেন প্রিন্স। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন বাড়িওয়ালা বাস্কেটবল তারকা কার্লোস বুজার। তার দাবি, বাড়িটির বহির্মুখ বেগুণি ফিতা ও ‘লাভ সিম্বল’ দিয়ে এঁকে ফেলেছেন প্রিন্স। সঙ্গে বসিয়েছেন মনোগ্রাম কার্পেট। কিন্তু এই সংগীতশিল্পীর আইনজীবী যুক্তি দেখান, কোনো অভিযোগ ছাড়াই ভাড়া গুনে নিয়েছেন বুজার। ফলে মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
জেএইচ