ভারতের বাংলা ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী শতাব্দী রায় কবি হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। শতাব্দীর লেখা ‘ও মেয়ে তোর বয়স কতো’ কবিতাটা ভাইরাল হয়েছে।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশে আসার সময় শতাব্দীর কাছে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কবিতা লেখালেখির খোঁজখবর নিয়েছেন। এদিন ‘বিজলী’ ছবির মহরতে অংশ নিতে ঢাকায় এসে অনুরোধে আবৃত্তি করেছেন তিনি।
সংসদে বক্তব্যের সময় সম্প্রতি একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন শতাব্দী। সেটাই পরিবেশন করলেন তিনি। তার কবিতার বিষয়বস্তু মুগ্ধ করেছে অতিথিদের। পাঁচ বছরের একটি মেয়ে তার বাবার কাছে স্বাধীনতার মানে জানতে চায়। বেড়ে ওঠার পর স্বাধীন হওয়া যায় জানালে বাবাকে মেয়েটি প্রশ্ন করে বসে তার মা কবে বড় হবে!
চিত্রনায়িকা ববির ববস্টার ফিল্মসের প্রযোজনা ও ইফতেখার চৌধুরীর পরিচালনায় ‘বিজলী’ ছবিতে ডা. জেরিনা হাসান চরিত্রে দেখা যাবে শতাব্দীকে। আবৃত্তি পরিবেশনের আগে তিনি বললেন, ‘অনেক বছর পর বাংলাদেশে আসা হলো। যৌথ প্রযোজনার বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছি। শুধু বাংলাদেশের ছবিতেও অভিনয় করেছি। ’
বহু বছর পর বাংলাদেশের ছবিতে কাজ করার কারণ জানিয়ে শতাব্দী বলেন, ‘বাংলা-উড়িয়া মিলিয়ে ৩০০ ছবিতে অভিনয় করেছি। ছবিতে কাজ করার বেলায় দারুণ চিত্রনাট্য নয়তো বেশি পয়সা, এমন অনেক কারণ থাকে। কিন্তু এ ছবির কারণ শুধুই ববি। আমার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার যে প্রকাশ দেখিয়েছে ও, সেজন্যই এ ছবিতে যুক্ত হতে সম্মতি জানিয়েছি। ওর সঙ্গে কথা বলে আমার ভালো লেগেছে। ওর মধ্যে কিছু অনুভূতি আছে যেটা ভবিষ্যতে ভালো অভিনেত্রী ও ভালো মানুষ হয়ে ওঠোর ক্ষেত্রে ওর কাজে আসবে। ’
ববির মতো তরুণীর প্রযোজক হওয়াটা শতাব্দী রায়ের কাছে চমকই বটে। তার মতে, ‘আমিই তো বহুদিন কাজ করার পর তবেই প্রযোজনার কথা ভেবেছি। সেক্ষেত্রে ওর প্রতি এখানকার শিল্পের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ও যে এমন একটা ভাবনা ভাবতে পেরেছে সেজন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে ববি। একজন অভিনেত্রী যখন প্রযোজক হয় তখন ছবিটা হিট করানোর ক্ষেত্রে সবার অনুভূতি একটু বেশি হওয়া দরকার। ববি সফল হলে এখানকার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ইতিবাচক হবে।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রযোজনা করা প্রসঙ্গে শতাব্দী বলেন, ‘আমার নিজের মনে হয় প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীর একবার প্রযোজক হওয়া দরকার। তাহলে অনুভব করতে পারবে প্রযোজকের ভূমিকা। তাহলে বোঝা যাবে ছবি করতে গেলে কি সমস্যার মুখে পড়তে হয় প্রযোজক হিসেবে। ’
এরপর অভিনয়শিল্পীর প্রযোজক হওয়া নিয়ে প্রচলিত একটা গল্প বললেন শতাব্দী। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজের সময় ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে গেলেও ডাক্তার ডাকার দরকার নেই মনে করেন। আর শুধুই অভিনয়শিল্পী হলে পায়ে সামান্য মোচড় লাগলেও হাসপাতালে যেতে চান!
ববির প্রতি আহ্বান জানিয়ে শতাব্দী বলেন, ‘শুটিং শুরু হলে প্রযোজকের ভাবনাটা ভুলে গিয়ে শুধু অভিনয়টা করো। কারণ আমি নিজে প্রযোজনা করে দেখেছি এতো হিড়িক তখন থাকে যে, কি মেকআপ করছে, কোন শিল্পী আসছে না, কার কাছে গাড়ি পৌঁছাচ্ছে না, কোন ড্রেসটা কোন শিল্পী পেলো না, তখন সব ভুলে যাওয়া হয়! পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময় ভুলে যাচ্ছি চেয়ার পাচ্ছি কি পাচ্ছি না। ’
ইফতেখার চৌধুরীকে নিয়ে শতাব্দী বলেন, ‘ইফতেখার আগে ছবি বানিয়েছেন, এখন অন্য ধরনের ছবি বানানোর পরিকল্পনা করেছেন যেটা বাংলাদেশে আগে হয়নি। তাই ভালো ছবি বানানোর জন্য তার ওপর গুরুদায়িত্ব থাকছে। ’ রসিকতার সুরে তিনি আরও বলেন, ‘ইফতেখারের আমেরিকান উচ্চারণ ও সিলেটি উচ্চারণের সম্মিলন শুনে বাংলা ছবিতে অভিনয় করাটা খুব কঠিন হবে বোঝা যাচ্ছে!’
ভারতের সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম থেকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য হন শতাব্দী। রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন সুইচ অফ-অনের সিস্টেম করে ফেলেছি বলতে পারেন। রাজনীতি করার সময় শিল্পচর্চার সুইচটা অফ করে রাখি! দু’বারের মেম্বার অব পার্লামেন্ট হয়েছি। এখন পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন চলছে। তাই গত একমাস ধরে তৃণমূলকে ভোট দিন-ভোট দিন বলছি। ভাগ্যিস এখানে এসে এটা বলে ফেলিনি এটাই অনেক! কাল (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটা অবধি এই কাজ করেছি, আবার কাল (রোববার) গিয়ে দুপুর থেকে ওটাই করবো। ’
দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের মন্থর অবস্থা প্রসঙ্গে শতাব্দী বলেছেন, ‘সিনেমা হল কিংবা ভাবনা, যে কোনো কারণে হোক আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সেটা বাংলাদেশ ও কলকাতা দুই জায়গার ছবির ক্ষেত্রেই বলা যায়। তাই ইতিবাচকভাবে যতোটা সমর্থন দেওয়া যায় ভালো। তাহলেই বাংলা ছবিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। আমাদের পরিবর্তন যেগুলো হচ্ছে, যে কনসেপ্ট বদলাচ্ছে, গল্প, কোরিওগ্রাফি, ক্যামেরা, বিদেশযাত্রা- এসব কনসেপশনের বদল হওয়ার তো দরকার নেই। এর সঙ্গে মানবিকতা, মানসিকতা এবং ভালো মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমাদের ছবি এবং বাংলাদেশের ছবি আরও এগিয়ে যাক, আরও এগিয়ে চলুক। ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে বহু ছবির কাজ করুক আগামী দিনের জন্য। ’
শতাব্দী রায়ের লেখা কবিতা
পাঁচ বছরের মেয়েটি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলো- বাবা, স্বাধীনতা মানে কি?
বাবা বলেছিলো- স্বাধীনতা মানে, এই আমরা যা কিছু বলতে পারি, যা খুশি করতে পারি, কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই, আমার ইচ্ছেতে আমি চলতে পারি।
মেয়েটি বলেছিলো- তাহলে আজ থেকে আমিও স্বাধীনতা।
বাবা বললো- না। প্রথমত স্বাধীনতা নয়, তুমি স্বাধীন। কিন্তু এখন নয়। তুমি এখন ছোট। স্বাধীনতা পেয়ে কি করবে? বড় হও। বড় হলে স্বাধীনতা আপনাআপনি আসবে। বড় হলেই তুমি স্বাধীন।
মেয়েটি বাবাকে জিজ্ঞেস করলো- বাবা, মা কবে বড় হবে?
বাংলাদেশ সময় : ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
জেএইচ