দেশের তরুণ প্রতিভাবানদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের অন্যতম একটি উদাহরণ হচ্ছে ‘বিজমায়েস্ত্রো’।
এ বছর ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ১২টি ক্যাম্পাসের পাঁচ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের মধ্য থেকে পাঁচশ’রও বেশি ছাত্রছাত্রী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে ১২টি টিম সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায়। শিক্ষার্থীদের রিয়েল লাইফ বিজনেস চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তাদেরকে বিক্রয় কেন্দ্রের রিয়েল লাইফ সিমুলেশন রান করতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয় আই.বি.এ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘টিম বুম বুম’।
বিজমায়েস্ত্রো বিজয়ী দলটি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ইউনিলিভার ফিউচার লিডারস লীগ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশর প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান পায়।
ইউনিলিভার ফিউচার লিডারস লীগ
ইউনিলিভার ফিউচার লীগ বিশ্বের একমাত্র প্রতিযোগিতা যা বিশ্বব্যাপী আয়োজন করা হয়। সেখানে সারাবিশ্বের সেরা ও সবচেয়ে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা ইউনিলিভার ওয়ার্ল্ড লিডারদের কাছে ইউনিলিভারের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহের সমস্যাগুলো, তাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাধান করে থাকে। প্রতি বছর ইউনিলিভার গর্বের সঙ্গে এই কেস প্রতিযোগিতা আয়োজন করে যেখানে ভবিষ্যতের ফিউচার লিডাররা তাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিজেদেরকে পৃথিবীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে আদর্শ লিডার হিসেবে তুলে ধরতে পারে।
স্থানীয় কেস প্রতিযোগিতা, যেমন বিজমায়েস্ত্রো’র বিজয়ীরা আন্তর্জাতিক এই প্লাটফর্মে নিজেদের দেশকে তুলে ধরার সুযোগ পায়। সারাবিশ্বে চার লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বিজমায়েস্ত্রো বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়। ইউনিলিভার ওয়ার্ল্ডের এক্সিকিউটিভ বোর্ড অব ডিরেক্টরদের সামনে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নিজেদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অভাবনীয় সুযোগ লাভ করে। বাংলাদেশ ২০১৪ সাল হতে এই প্রতিযোগিতার বৈশ্বিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে আসছে।
বিশ্ব দরবারে উড়লো বাংলাদেশের পতাকা
বাংলাদেশ দল ‘ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগ ২০১৬’-এর গ্লোবাল টাইটেল জয় করে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ২৯টি দেশের দলকে হারিয়ে ইউনিলিভার বিজমায়েস্ত্রো’র বিজয়ী সাজিদ আলম, আয়মান সাদিক এবং ইশমাম চৌধুরী এই জয় অর্জন করেন।
ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগ একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা যেখানে সারাবিশ্বের তরুণ মেধাবীরা অংশগ্রহণ করে। এই দলসমূহকে ইউনিলিভার প্রত্যেক দেশ থেকে কেস প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করে নেয়।
২০১৫ সালের অক্টোবর ইউনিলিভার বাংলাদেশ একটি রিয়েল লাইফ বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা ‘ইউনিলিভার বিজমায়েস্ত্রো ২০১৫’-এর আয়োজন করে যেখানে আইবিএ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজিদ আলম, আয়মান সাদিক এবং ইশমাম চৌধুরী বিজয়ী হন। লোকাল রাউন্ডে দলটি দেশের সেরা ৫০০টি দলকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়। বিজমায়েস্ত্রো’র চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ইউনিলিভার ফিউচার লিডারস লীগ ২০১৬-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব হাতে তুলে নেন তারা। প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় গত ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।
বিশ্বব্যাপী ১১২০টি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ লাখ অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে সেরা ৯০ জন ছাত্রছাত্রী এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে ৩০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সারাবিশ্বের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ইউনিলিভারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে এবং পৃথিবীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সাল থেকে ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগ যাত্রা শুরু করে।
এটি একমাত্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা যেখানে পৃথিবীর সেরা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরকে নিজেদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে ইউনিলিভারের স্বীকৃত ব্র্যান্ডসমূহের সমস্যাগুলোর উদ্ভাবনী সমাধান বের করে ইউনিলিভারের লিডারদের মুগ্ধ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা ইউনিলিভারের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন দেশের সমকক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক বিষয়ে বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ লাভ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। প্রতি বছর এই লাইভ কেস প্রতিযোগিতা আয়োজন করে গর্বিত ইউনিলিভার। এখানে ভবিষ্যতের লিডারদের উৎসাহিত করা হয়, তাদের মেধা বিকাশে ও আলোকিত করতে সাহায্য করা হয় এবং অন্যান্যদের রোল মডেল হিসেবে নিজের স্থান গড়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
ইউনিলিভার বিজমায়েস্ত্রো ২০১৫-এর বিজয়ী সাজিদ আলম, আয়মান সাদিক এবং ইশমাম চৌধুরী ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। প্রোডাক্ট ম্যানেজার প্রতিযোগীদের লন্ডনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে বিশেষ পরামর্শ প্রদান করেন। পুরো প্রোগ্রামটি তরুণদের মাঝে লিডারশীপ সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়। ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগের প্লাটফর্মে বাংলাদেশ দল পুরো পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বকারীদের সঙ্গে পরিচিত হন। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জন্যই এটি অত্যন্ত আনন্দের এবং চার দিনের এই আয়োজনে তারা সবাই একসঙ্গে এক অনন্য অভিজ্ঞতা উপভোগ করেন। প্রতিযোগিতাটি ১০ এপ্রিল শুরু হয় এবং বাংলাদেশের ট্রফি-২০১৬ জয়ের মধ্য দিয়ে ১৪ এপ্রিল শেষ হয়। সেমিফাইনালে প্রতিযোগীরা সানসিল্ককে কীভাবে আরও কনজ্যুমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় তার আইডিয়া দেন। বাংলাদেশ দল বিচারকদের মুগ্ধ করে ফাইনালে পৌঁছে যায়।
যখন বিজয়ী দলের নাম ঘোষণা করা হয়, সেই সময় বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ আরও অনেক দেশের সুপরিচিত প্রতিভাবানদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যারা ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায়। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিজয়ী দলটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।
ফাইনালে বাংলাদেশ চতুর্থ নম্বরে তাদের প্রেজেন্টেশন পরিবেশন করে। ৯টি শক্তিশালী দল ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, নাইজেরিয়া, কোস্টারিকা, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, মিসর, পর্তুগাল এবং ইতালিকে হারায় তারা। কোস্টারিকা সেকেন্ড রানার আপ, রাশিয়া প্রথম রানার আপ এবং বাংলাদেশ দল দারুণ পারফর্মেন্সের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ট্রফি ছিনিয়ে আনে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের লিডারশীপ ডেভেলপমেন্ট অফিসার ইপ্সিতা ফাহিম উল্লেখ করেন, ‘ইউনিলিভার বাংলাদেশ সবসময় মেধাবীদের প্রতিভা বিকশিত করা এবং তাদের মেধাকে সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টির করায় বিশ্বাসী। এই গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় আজ আমরা দেখেছি বাংলাদেশিরা কীভাবে সুউচ্চে উঠতে পারে। আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতের তরুণদের জন্য সবসময় প্লাটফর্ম তৈরি করে যাওয়া। ’
এই লক্ষ্যেই ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্রতি বছর আয়োজন করে ইউনিলিভার বিজমায়েস্ত্রো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শেষ বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা বাস্তবিক জীবনে নিজেদের প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘রিয়েল বিজনেস’-এর শিহরণ অনুভব করতে পারেন। ছাত্রছাত্রীদের ইউনিলিভারের একটি সত্যিকারের ব্র্যান্ডের কনজ্যুমার ইনসাইটের ওপর গবেষণা করতে বলা হয় এবং ব্র্যান্ডটির জন্য একটি বিজনেস প্ল্যান গঠন করে পরিবেশন করতে বলা হয়। এই বছরের বিজয়ী তিনজনকে তাদের নিজস্ব কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়েল ডিজাইন, ব্র্যান্ডের জন্য স্থায়ী আইডিয়া এবং ব্র্যান্ডের জন্য একটি ‘৩৬০ ডিগ্রি’ পরিকল্পনা সাজাতে বলা হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগীরা ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ম্যানেজারদের অধীনে প্রশিক্ষণ লাভ করার সুযোগ পান।
ইউনিলিভার বিজমায়েস্ত্রো’র বিজয়ীদের ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগে পাঠানোর পূর্বে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর তারা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের জন্য লন্ডনে পাড়ি দেন।
সাজিদ আলম বলেন, ‘ফিউচার লিডার্স লীগ সত্যিই অসাধারণ। কখনও ভাবিনি আমি এবং লিনা নায়ের গ্লোবাল সিএইচআরও একই টেবিলে বসে আলাপ করতে পারবো। গ্লোবাল লিডারদের উৎসাহ, বিনয় ও ব্যবহার দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ। আমার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তটি হচ্ছে ফলাফল ঘোষণার সময়। যখনই আমরা বাংলাদেশের নাম শুনলাম দর্শক উল্লসিত হয়ে উঠলো। তুমুল হর্ষধ্বনিতে কিছুই শোনা যাচ্ছিলো না কিছুক্ষণের জন্য। মনে হচ্ছিলো আমরা পুরো পৃথিবীর মন জয় করেছি। যেন তারা চাইছিলো বাংলাদেশ নামের দেশটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হোক। এটি দুর্লভ মুহূর্ত এবং আমি আমার ব্রিলিয়ান্ট টিমমেটদের সঙ্গে আমার দেশ এবং আমার দেশের মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুবই গর্বিত বোধ করছি। ’
ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগের গ্লোবাল প্লাটফর্মে বিজমায়েস্ত্রোর বিজয়ীরা অসাধারণ পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন। যেখানে বাংলাদেশ ২০১৪ সাল থেকে অংশগ্রহণ করে আসছে। প্রথম বছর বাংলাদেশ ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়। পরের বাংলাদেশ টিমের নুসরাত, আকিব এবং উৎসব প্রথম রানারআপ হন। অবশেষে এ বছর বাংলাদেশের পতাকা সর্বোচ্চ শিখরে উত্তোলিত হয় কাপ জয়ের মাধ্যমে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে।
ইউনিলিভার ফিউচার লিডার্স লীগের বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশ দল এ বছরের সেপ্টেম্বরে কানাডার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত ‘ওয়ান ইয়ং সামিট’-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
জেএইচ