ঢাকা: কান-কান করে রীতিমতো কান ঝালাপালা হওয়ার মতো অবস্থা! এই কান হলো কান চলচ্চিত্র উৎসব। গত কিছুদিন যেদিকেই পা বাড়িয়েছি, কানের খোঁজ-খবর নিয়েছেন সবাই।
এ আগ্রহ বেশ ইতিবাচক। কয়েক বছর আগেও এ চিত্রটা দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে উৎসবটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এ দেশে! নির্মাতা থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমগুলোও কানকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন এখন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার গিয়েছিলাম গত বছর। এবারও যাচ্ছি। এই যাওয়ার মধ্যে যে বেড়ানোর আবহ আছে তা নয়। বরং অঢেল ঝক্কি! ঝামেলার যেন শেষ নেই! এখানে বসে কান স্বপ্ন মনে হতে পারে, কিন্তু সেখানে যাওয়া অবধি যা যা করতে হয়েছে তাতে ধৈর্যধারণের বিশ্বরেকর্ডই করে ফেলেছি বলে মনে হচ্ছে!
সেই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে দিতে হয়েছে প্রস্তুতি। অবশেষে ব্যাগ গোছানোর সময় হলো। দীর্ঘ তিনমাসের ঝক্কি আর নানাবিধ পরীক্ষার পর এবার যেন একটু স্বস্তির হাওয়া অনুভব করছি। এই পরীক্ষা এসএসসি, এইচএসসি কিংবা বিসিএসের চেয়েও কঠিন!
কান উৎসব আয়োজকদের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেলেই সেটা কিছুটা বোঝা যেতে পারে।
প্রথমে কান উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হয়। তারপর তাদের নিয়ম-কানুন মেনে সম্পাদকের চিঠি, নিজের আইডি কার্ডের অনুলিপি, প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, প্রতিদিনের পাঠক সংখ্যা, মাসিক পাঠক সংখ্যা, গুগল অ্যানালিটিকসের র্যাংকিং, সম্প্রতি লেখা চলচ্চিত্র বিষয়ে নিজের তিনটি লেখার নমুনা, ওয়েবসাইটের ঠিকানা জমা দেওয়ার পর আয়োজকদের প্রেস অফিস থেকে একটি রেফারেন্স ফাইল নম্বর দেওয়া হয়।
সেই ফাইল নম্বরের সহায়তায় উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য আবেদন করতে হয়। এজন্য আটটি পৃথক পাতায় দরকারি সব তথ্য দিতে হয়েছে। আয়োজকরা সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে কিছুদিন পর ই-মেইলে আমাকে অ্যাক্রেডিটেশন দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। সঙ্গে ছিলো আমন্ত্রণপত্র। এ আমন্ত্রণপত্রই মূলত ভিসা পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ফ্রান্স দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব কাগজপত্র দিতে হয় তার চেয়ে সহজ পাহাড় ডিঙানো! পাসপোর্ট, দূতাবাসের নিয়ম-কানুন মেনে তোলা দুই কপি ছবি, পাসপোর্টের অনুলিপি, আগের ভিসার অনুলিপি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, দূতাবাস অনুমোদিত বিমা প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যবিমা, উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং দেওয়ার কাগজ, হোটেল বুকিং দেওয়ার কাগজ, ভিসা ফি (৬০ ইউরো), কান উৎসবের আমন্ত্রণপত্র, সম্পাদকের চিঠিসহ একগাদা কাগজ। সব কাগজপত্রের দুই কপি করে নিয়ে যেতে হয় দূতাবাসে।
এতোসব কাগজপত্র জমা দেওয়া এবং কান উৎসবের আমন্ত্রণপত্র পাওয়া মানেই যে ভিসা মিলবে সে নিশ্চয়তা নেই। এবার সেই চিত্রটাই দেখা গেলো। আমন্ত্রণপত্র এবং প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরেও বাংলাদেশ প্রতিদিন ও কালের কণ্ঠের পৃথক দুই বিনোদন সম্পাদক ভিসা পাননি। বাংলা ট্রিবিউন ও আমাদের অর্থনীতির দুই আলোকচিত্রীর ভিসার আবেদনও বাতিল করেছে দূতাবাস।
ধারণা করা হচ্ছে, যারা গত এক বছরে কমপক্ষে একবার হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতাভুক্ত দেশগুলোতে গিয়ে ফিরে এসেছেন, এবার শুধু তাদেরকেই ভিসা দেওয়া হয়েছে।
ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়। এবারের কান উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড প্রযোজিত ও তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ ছবি দু’টি অংশ নিচ্ছে। এ ছবি দুটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ঠিকই ভিসা পেয়েছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য সুখবর। কানের মতো বৈশ্বিক আয়োজনে নিজেদের ছবি নিয়ে যাওয়ার এ উদ্যোগ অন্য প্রযোজক-পরিচালকদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
আর মাত্র তিনদিন পরেই উৎসবের আলোয় ফের ঝলমল করে উঠবে ফ্রান্সের সমুদ্র তীরবর্তী শহর কান। প্রতি বছরের মে মাসে এ জায়গাটা হয়ে ওঠে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের তীর্থশহর। তামাম দুনিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পের রথি-মহারথিদের চোখ থাকে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের দিকে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়- বাণিজ্যিক শাখায় দু’টি ছবি এবং কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের অংশগ্রহণ সেকথাই বলছে।
আগামী বুধবার (১১ মে) প্যালেস দ্যু ফেস্টিভ্যালের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ের প্রেক্ষাগৃহে কান উৎসবের ৬৯তম আসরের উদ্বোধন হবে। চলবে ২২ মে পর্যন্ত।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং প্রভাবশালী এ আয়োজনে একদিকে যেমন থাকে শৈল্পিকভাবে সমৃদ্ধ ছবি, পাশাপাশি দেখা যায় বিখ্যাত তারকাদের জাঁকালো পোশাকের আলোয় উজ্জ্বল লাল গালিচা।
এবারও এ উৎসবের নানাবিধ খবর প্রতিদিন পাওয়া যাবে বাংলানিউজে। এ উৎসবে অংশগ্রহণ করা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর বৈশ্বিক গুরুত্ব বুঝে এবারও সরাসরি থাকছে কানে। তবে শুরু হোক কানাকানি!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
জেএইচ/এএসআর