ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আব্বাস কিয়ারোস্তামির জন্য চলচ্চিত্র দুনিয়ায় শোক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৬
আব্বাস কিয়ারোস্তামির জন্য চলচ্চিত্র দুনিয়ায় শোক আব্বাস কিয়ারোস্তামি (১৯৪০-২০১৬)

নিউইয়র্কের চলচ্চিত্র বিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ফিল্ম স্টেজ টুইটারে উল্লেখ করেছে, ‘বিশ্ব অসাধারণ একজন চলচ্চিত্রকারকে হারালো। ’ ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট টুইট করেছে, ‘এ মৃত্যু বিষাদের।

’ 

ইরানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামির মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে বিশ্ব চলচ্চিত্রে। তাকে বলা হতো চলচ্চিত্র গুরু। বিশ্ব চলচ্চিত্রে প্রভাববিস্তারকারী নির্মাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।  

‘টেস্ট অব চেরি’, ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’, ‘টেন’, ‘ক্লোজ-আপ’, ‘সার্টিফায়েড কপি’, ‘লাইক সামওয়ান ইন লাভ’- এমন হৃদয়ছোঁয়া ছবিগুলো দর্শকদের উপহার দিয়েছেন আব্বাস। সিনেম্যাটিক কবিতার এই গুরু আর নেই। ক্যান্সার নিভিয়ে দিয়েছে তার জীবনপ্রদীপ। সোমবার (৪ জুলাই) ফ্রান্সের প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর।

আব্বাসের মৃত্যুতে ইরানসহ বিশ্ব চলচ্চিত্রাঙ্গন এখন শোকে মুহ্যমান। তেহরান থেকে গার্ডিয়ান পত্রিকাকে অস্কারজয়ী ইরানি চলচ্চিত্রকার আসগর ফারহাদি বলেন, ‘খুব দুঃখজনক। এটা বিশাল ধাক্কা। ’ আজকালের মধ্যে প্যারিসে এসে আব্বাসের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার কথায়, ‘আব্বাস কিয়ারোস্তামি শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন না, চলচ্চিত্র ও ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন আধুনিক আধ্যাত্মিক মানুষ। ’

আব্বাসের সাফল্য ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে কয়েক প্রজন্ম ধরে উদ্বুদ্ধ করেছে। ‘অবশ্যই তিনি অন্যদের জন্য পথ তৈরি করে দিয়ে গেছেন। মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক প্রভাব ছিলো। শুধু বিশ্ব চলচ্চিত্রই সেরা একজন মানুষকে হারিয়েছে তা নয়, সারাবিশ্বই সত্যিকার অর্থে ভালো একজনকে হারালো। ’

ইরানের আরেক প্রখ্যাত নির্মাতা মোহসেন মাখমালবাফের কণ্ঠে শোনা গেলো, বিশ্বজুড়ে তাদের দেশের ছবির আজ যে কদর, এর মূল কৃতিত্ব আব্বাস কিয়ারোস্তামির। কিন্তু এই অর্জন খোদ তার নিজের দেশ ইরানেই বড় করে দেখা হয়নি বলে মনে করেন মোহসেন।

গার্ডিয়ানকে মোহসেন বলেন, ‘দুঃখজনক হলো তার ছবি ইরানেই খুব একটা দেখা যায়নি। বিশ্ব চলচ্চিত্রকে বদলে দিয়েছেন তিনি। হলিউডের রুক্ষতার ভিড়ে ফুরফুরে আর মানবিক করে দিয়েছিলেন সেললুয়েডকে। তিনি প্রকৃত অর্থেই দারুণ মানুষ ছিলেন। রূপালি পর্দায় জীবনের জয়গান উপস্থাপনটা উপভোগ করতেন। এজন্যই তার মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। ’

মার্কিন পরিচালক মার্টিন স্করসিস বলেন, ‘আব্বাস কিয়ারোস্তামি একেবারেই অন্যরকম মানুষ ছিলেন। শান্ত, মার্জিত, বিনয়ী, স্পষ্টভাষী এবং বেশ পর্যবেক্ষণশীল। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক ভদ্রলোক এবং সত্যিকার অর্থেই আমাদের মধ্যে দারুণ একজন শিল্পী। চলচ্চিত্রে শিল্পদক্ষতার চূড়ান্ত পর্যায় উপস্থাপন করে গেছেন তিনি। ’

নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইরানি শিক্ষার অধ্যাপক হামিদ দাবাশি বলেন, ‘তার শিল্পের অদ্ভুত ব্যাপার হলো- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শহুরে চেতনা উভয় উঠে এসেছে তার চিত্রগ্রহণে। অসাম্প্রদায়িকতায় ইরানি দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরতে পেরেছেন তিনি। ’ 

আব্বাসের ছবিগুলো বিশ্ব চলচ্চিত্রে যেন মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো- এ মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইরানি চলচ্চিত্র অধ্যাপক জামশিদ আকরামি। তার ভাষ্য, ‘ইরানের উন্নত জীবন ও সংস্কৃতির যোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। স্বর্ণপাম জেতার পর তার ছবি ও সেগুলোর বিষয়বস্তুর সঙ্গে দর্শকরা নিজেদের সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। ’

আব্বাসকে টেলিগ্রাফের চলচ্চিত্র সমালোচক রবি কলিন বলতেন, ‘জাদুকরের ছদ্মবেশে অবিশ্বাস্য কাজের মানুষ। ’ প্রখ্যাত ফরাসি-সুইস পরিচালক জ্যঁ-লুক গদার একবার বলেছিলেন, ‘চলচ্চিত্র শুরু হয় ডিডব্লিউ গ্রিফিথের সঙ্গে, শেষ হয় আব্বাস কিয়ারোস্তামির মাধ্যমে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।