‘ট্রলারে আছি এখন’- ও-প্রান্ত থেকে মাহমুদ দিদারের বয়ান। তিনি তখন মহেশখালি চ্যানেলের বাঁকখালীতে।
পান্ডুলিপিতে বৃষ্টির দৃশ্য ছিলো না। কিন্তু বসে না থেকে এমন মুহূর্তকে কাজে লাগালেন নির্মাতা। পরিকল্পনা না থাকলেও বৃষ্টিকে মিলিয়ে ফেললেন গল্পের সঙ্গে। শুধু একটি ছাতা ব্যবহার করে!
জানা গেছে, ট্রলারেই জেনারেটর দিয়ে আলো জ্বালানো হচ্ছে। আছে ট্রলি। পোশাক পরিবর্তনের জন্য টাঙানো হয়েছে ত্রিপল। ব্যাকআপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে আরেকটি ট্রলার। নদী নেমে গেছে। তাই ডিঙিতে চড়ে গিয়ে তারপর ট্রলারে উঠতে হয়েছে পুরো ইউনিটকে।
ট্রলারে কাজ করতে হচ্ছে গল্পের প্রয়োজনে। পাহাড়ী দ্বীপ আর বিস্তৃত নদীতে একটি রঙিন সাজানো ট্রলারে হারমোনিকা বাজিয়ে দিন কাটায় গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আসলাম। খুব বিচ্ছিন্ন আর একা থাকা যুবক। এই অঞ্চলে আসলাম একটা মিথের নাম। কেউ বলে সে পলাতক কয়েদী, কেউ বলে সে পাগলা কবিয়াল।
আসলাম বলে বেড়ায়- ‘নদীই পৃথিবীর ভালোবাসা, তাই আমার নদীতে ঘর। ’ বন্ধু সন্তু সপ্তাহে একবার আসলামের জন্য নৌকা বেয়ে বাজার নিয়ে আসে। সে কেবল অদ্ভুত মাতাল করা হারমোনিকার সুর শোনার জন্য এখানে আসে। আসলামের ট্রলারটা ম্যাজিক্যাল। কিছু হ্যাজাক আর চিমনির ভেতর লাল বাতিতে ভরা ঘর। রাতের বেলা এই ট্রলারকে অনেকে ভাসমান জলসা বলে। অনেকে কৌতূহল নিয়ে দেখতে এলেও আসলাম উত্তেজিত হয়ে তাদের দমিয়ে দেয়।
একদিন সান্ধ্যকালীন স্টিমারে বরযাত্রীদল নববধূকে নিয়ে উৎসবের আমেজে বাড়ি ফিরছিলো। বউ সেজে বসে আছে শিউলি। বেনারসি শাড়ির ফাঁকগলে তার চাঁদমুখ। ঢেকে রাখা পালকির ভেতর মেয়েটার বিষণ্ন মুখাবয়ব। কাঁদছে। আর বয়েসী বুড়ো বর, একটা পিতলের হুক্কার পাইপ মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে, কালো রাবারের নতুন জুতো নাড়তে নাড়তে ব্যাপক সুখী মুখ লোকবলকে দেখছে। হঠাৎ জলদস্যুরা আক্রমণ করে। লুটপাট, হামলা, নববধূর ওপর আক্রমণ, সশস্ত্র উল্লাস মিলিয়ে ত্রাসের মুহূর্তের বলি হয় নববধূ। এমন সময় একটা নারীর ভারি কান্নার শব্দ শুনে চমকে উঠে আসলাম। ট্রলারের এক পাশে নতমুখ, বিধ্বস্ত মোহিনীকে আবিষ্কার করে সে।
আসলামের ট্রলারের ভেতর একটা সাজানো ম্যানিকুইন। আছে নানা বাদ্যযন্ত্র, রঙিন পুতুল, সাদাকালো যুগের একজন নায়িকার পোস্টার। আসলাম নির্লিপ্ত। মোহিনীর গল্প আসলামকে তাড়না দেয়। সে মোহিনীকে বলে যতোদিন ইচ্ছে এই ট্রলারে যেন থেকে যায়। নদীর মালিকানা কারও হাতে নেই। বাজার থেকে মোহিনীর জন্য শাড়ি, স্নো, খুশবু তেল সব নিয়ে আসে আসলাম। একটা অদ্ভুত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মোহিনী পুরোদস্তুর মানিয়ে নেয়। তাকে আগলে রাখে আসলাম, লুকিয়ে রাখে সবার কাছ থেকে।
আসলামের জন্য গান বাঁধে মোহিনী, রান্না করে, বড়শিতে মাছ ধরে, আয়না সামনে নিয়ে লম্বা চুল আর দাড়ি কেটে দেয়। চুল সিঁথি করে দেয়। কিন্তু তাদের এই সুখসময় টিকলো না বেশিক্ষণ। একদিন নৌকায় করে মেলায় যাওয়ার পথে মোহিনীর বরের লোকজন আসলামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা মোহিনীকে ছিনিয়ে নিতে চায়। বিপক্ষ লোকজন ভাবে আসলামই হলো জলদস্যু। তারা পুলিশ ও এলাকাবাসীকে নিয়ে চারপাশ থেকে আক্রমণ করে, আসলাম কৌশলে মোহিনীকে নিয়ে ম্যানগ্রোভ বনে হারিয়ে যায়।
নাটকটিতে মোহিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’খ্যাত নীলাঞ্জনা নীলা। আসলামের ভূমিকায় দেখা যাবে ‘হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান’-এর আজাদকে। এ ছাড়াও অাছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, কুমকুম হাসান, সানজিদ খান প্রিন্স, জয়নাল জ্যাক প্রমুখ। গত দু’দিন ধরে এর দৃশ্যধারণ হচ্ছে কক্সবাজার, মহেশখালি চ্যানেল ও ফিশারি ঘাটে। সোমবারও (১৮ জুলাই) হবে। ঈদুল আজহায় চ্যানেল আইয়ে প্রচার হবে এটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
জেএইচ