একক মঞ্চ অভিনয়ে যুক্ত হলো শামছি আরা সায়েকার নাম। পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) প্রযোজনা ‘গহনযাত্রা’ নামের নতুন নাটকে প্রথমবার একক অভিনয় করেছেন তিনি।
গত ১৫ জুলাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘গহনযাত্রা’র প্রথম প্রদর্শনী হয়। দর্শকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে এটি। একক অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ও নাট্যচর্চা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বললেন শামছি আরা সায়েকা।
বাংলানিউজ : ‘গহনযাত্রা’ নাটকটি নিয়ে বলুন।
শামছি আরা সায়েকা: ‘গহনযাত্রা’ মানে হলো গহীনে যাওয়ার যাত্রা। এই নাটকের মাধ্যমে নাট্যকার রুবাইয়াৎ আহমেদ সবকিছু গভীরভাবে বোঝাতে চেয়েছেন। এখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘গহনযাত্রা’ প্রাসঙ্গিক।
নাটকে দেখানো হয়েছে, এখন আমরা কোনোকিছু গভীরে গিয়ে চিন্তা করি না। কিছু ঘটলেই আমরা জাতি ও ধর্মকে দোষারোপ করি। আমরা কোনোকিছুই এককভাবে করি না। সবাই মিলে করি। এ নাটকে সব ধর্ম ও সব জাতিকে নিয়ে বলা হয়েছে। এই যে সবাইকে নিয়ে বলা ও চিন্তা করা, এটাই গভীরে যাওয়ার যাত্রা।
বাংলানিউজ : নাটকটি মঞ্চে আনতে কতোদিন সময় লাগলো?
সায়েকা: লেখা থেকে শুরু করে নাটকের কারিগরি প্রদর্শনী পর্যন্ত সময় লেগেছে প্রায় এক বছর। সাধারণত দুই মাসের মধ্যে নতুন নাটক সাজিয়ে মঞ্চায়ন করা যায়। সেদিক থেকে ‘গহনযাত্রা’র ক্ষেত্রে সময় বেশি লেগেছে কারণ এটি অন্য একক নাটকের তুলনায় একটু বেশি কষ্টসাধ্য।
বিশেষ করে আমাকে শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়েছে প্রচুর। কারণ নাটকে পাঁচটি চরিত্রে আমি একাই অভিনয় করেছি। চরিত্রের প্রয়োজনে কণ্ঠস্বরও পরিবর্তন করতে হয়েছে আমাকে। একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি মুখোশ পরে। মুখোশে আবার চোখের জায়গাটা খোলা ছিলো না। তাই এ মুখোশ পরে অভিনয়টা আয়ত্ত্বে আনতে অনুশীলন দরকার ছিলো একটু বেশি। আর নাটকের মঞ্চটা যেহেতু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১৬ ফুট, ফলে অভিনয়ের সময় লক্ষ্য রাখতে হয়েছে আমার চলাফেরা ওই নির্দিষ্ট আয়তনের মধ্যে যেন থাকে।
বাংলানিউজ : এবারই প্রথম মঞ্চে একক অভিনয় করলেন। অনুভূতি কেমন?
সায়েকা : শুধু একক অভিনয় নয়, ‘গহনযাত্রা’য় অনেক কিছুই আমার প্রথম। এটাই দেশে প্রথম একক এরিনা নাটক। জীবনে যতো নাটকে কাজ করেছি সবটার নাট্যকার প্রয়াত! এ প্রথম জীবিত নাট্যকারের সঙ্গে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে ‘গহনযাত্রা’ আমার অভিনয় জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজ।
বাংলানিউজ : মঞ্চে একক অভিনয়ের বেলায় কারও কাজে অনুপ্রাণিত ছিলেন?
সায়েকা: দেশ-বিদেশে অনেকের নাটক দেখেছি। বেশ কয়েকজনের একক নাটক দেখে ইচ্ছে হতো একক নাটকে অভিনয় করবো। বাংলাদেশের সব একক নাটক দেখেছি। নৃত্যশিল্পী আকরাম খানের একক নাচ দেখে মঞ্চে একক অভিনয়ের অনুপ্রেরণা নিয়েছি। ভাবতাম, তিনি যদি তার নাচ দিয়ে গল্প তৈরি করতে পারেন তাহলে অামি কেনো পারবে না? এই ভাবনাটা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে। ছোটবেলা থেকেই কত্থক নাচের তালিম নিয়েছি। ‘গহনযাত্রা’ নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বেশকিছু নাচ আছে। তাই এই নাটকের মাধ্যমে আমার একক অভিনয়ের স্বপ্নটি পূরণ হয়েছে।
বাংলানিউজ : শৈশব থেকেই মঞ্চে কাজ করছেন বলা যায়। আপনার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো নিয়ে বলুন।
সায়েকা: পাঁচ বছর বয়স থেকে মঞ্চে অভিনয় করছি। আমার প্রথম নাটক নয়ন চাঁদ ঘোষের লেখা ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে ‘চন্দ্রাবতী’। এরপর মঞ্চে এসেছে পল্লীকবি জসিমউদদীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ও ‘বেদের মেয়ে’ এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’, আগাথা ক্রিস্টির মাউস্ট্রেপ।
এর মধ্যে একটি নাটক ‘বেদের মেয়ে’। এই নাটকে কাজ করার সময় বুঝেছি সমাজে আমরা মেয়েরা কতোটা অবহেলিত। আমার জন্ম কোনো বেদের পরিবারে হয়নি বলে হয়তো সম্মান পাচ্ছি। যেসব মেয়েদের জন্ম, বেড়ে ওঠা আমাদের মতো শিক্ষিত পরিবারে হয় না তাদেরকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনও নাটকটিতে অভিনয় করলে মুহূর্তের মধ্যে এতে ডুবে যাই। বলতে পারেন ‘বেদের মেয়ে’ আমার অভিনয় জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য নাটক।
বাংলানিউজ : ছোটপর্দায় কি ইচ্ছে করেই কাজ করেন না?
সায়েকা: ছোটপর্দায় কাজ করার প্রস্তাব আসে। আগে বিটিভিতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার পাশাপাশি কয়েকটি নাটকেও কাজ করেছি। এখন একসঙ্গে অনেক কাজ করছি। আমি একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করছি। পাশাপাশি অভিনয়, নাচ চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ একাডেমী অফ ফাইন আর্টস ও সিটি কর্পোরেশনের আওতায় একটি নাচের স্কুলে নাচের তালিম দিচ্ছি। একসঙ্গে এতো কিছু করে আসলে ছোটপর্দায় কাজ করার সময় হয়ে উঠছে না। তবে সময় ও ভালো কাজের প্রস্তাব পেলে অবশ্যই ছোট পর্দার জন্য কাজ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
টিএস/জেএইচ