ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

টিভি শিল্পের মন্দাবস্থা-১

অবৈধ ডাউনলিংক চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন পাচার

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৬
অবৈধ ডাউনলিংক চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন পাচার

বিদেশি চ্যানেলের নামে টাকা পাচারের অশুভ তৎপরতায় দেশের টেলিভিশন শিল্প এখন হুমকির মুখে। ভারতীয় চ্যানেলের নামে কিছু বিদেশি চ্যানেল অনুমোদনহীনভাবে বাংলাদেশে ডাউনলিংক হচ্ছে, যেগুলো না ভারতীয় চ্যানেল, না দেশি চ্যানেল।

বিদেশি চ্যানেলের নামে টাকা পাচারের অশুভ তৎপরতায় দেশের টেলিভিশন শিল্প এখন হুমকির মুখে। ভারতীয় চ্যানেলের নামে কিছু বিদেশি চ্যানেল অনুমোদনহীনভাবে বাংলাদেশে ডাউনলিংক হচ্ছে, যেগুলো না ভারতীয় চ্যানেল, না দেশি চ্যানেল।

কারণ এসব চ্যানেল নামে ভারতীয় হলেও প্রকৃতপক্ষে ভারতে এগুলো প্রদর্শিত হয় না আর অনুমোদনও নেই।  

বিদেশি নামের এসব চ্যানেল বাংলাদেশি দর্শকদের দেখানোর জন্য ভারতীয় কিছু অনুষ্ঠান এবং হিন্দিতে ডাবিং করা বাংলাদেশের কিছু নাটক মিলিয়ে আলাদা একটি ফিড তৈরি করে তা বাংলাদেশে ডাউনলিংক করছে। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন খাতের অর্থ গ্রাস করা।

মূলত এ কারণে অনুমতিবিহীন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারের সুযোগ থাকাকে দেশীয় সংস্কৃতি ও টেলিভিশন শিল্পের বর্তমান মন্দাবস্থার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে। টিভি চ্যানেল বিনিয়োগকারী ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের নতুন সংগঠন মিডিয়া ইউনিটি রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা ক্লাবে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।  

বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেল সংশ্লিষ্টদের জন্য বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হচ্ছে, আয়ের একমাত্র পথ বিজ্ঞাপনের বাজার চলে যাচ্ছে বিদেশি চ্যানেলের হাতে। মিডিয়া ইউনিটির দাবি, কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিজ্ঞাপন বিল হিসেবে একটি ‘অ্যামাউন্ট’ তৈরি করতে পেরেছে এই চক্র। এরপর বকেয়া পাওনা হিসেবে এই ‘অ্যামাউন্ট’ বিদেশি অ্যাকাউন্টে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেয় তারা। এজন্য নিজেদের সামাজিক ও ব্যবসায়িক পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিপত্র বের করে নেয় চক্রটি। গত এক বছরে এই অনুমতিপত্রের মাধ্যমে বকেয়া বিজ্ঞাপন বিলের নামে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

ভারতীয় নামে এসব বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনের বাজারকে গ্রাস করা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে বিজ্ঞাপনের রেট অতিরিক্ত দেখানোর মাধ্যমে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এটা ওভার ইনভয়েসের মতোই টাকা পাচারের আরেক কৌশল। বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো নীতিমালা না থাকায় দেশীয় চ্যানেলগুলো অস্তিত্ব টিকে রাখার লড়াইয়ে কম মূল্যে বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে দর্শকরা আরও বিরক্ত হয়ে পড়ছে।

এ ছাড়া ক্যাবল অপারেটররা দেশীয় চ্যানেলগুলোকে সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করে সিরিয়াল অনুযায়ী শুরুর দিকে না রাখায় দর্শকরা দেখার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে তাদের আগ্রহ জন্মায় রিমোটের প্রথম দিকে থাকা বিদেশি চ্যানেলের প্রতি।

সমাধানের পথ কী?

এতো সমস্যার সাগরে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকা টিভি চ্যানেলের সমাধানের পথ কী? মিডিয়া ইউনিটির দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপন চক্রটির অশুভ ইচ্ছাপূরণে সহায়ক হয়েছে। ফলে বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান তার পণ্যের বিজ্ঞাপন চাইলে বিদেশি চ্যানেলে প্রচার করতে পারবে। যেসব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দেশীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে সেগুলোর বিজ্ঞাপন দেশে সম্প্রচারে থাকা বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বন্ধ করা গেলে বর্তমান বাজার সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতারা।

মিডিয়া ইউনিটি মনে করে, টিভি চ্যানেলগুলোকে বিদেশি চ্যানেলের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সমস্ত অবৈধ ডাউনলিংক চ্যানেল বন্ধ করা, দেশীয় বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার বন্ধ করা, কোনো দেশের চ্যানেল ডাউনলিংক করলে সেই দেশের অরিজিনাল ফিড প্রচার করা এবং বিজ্ঞাপন প্রচারের নামে মানি লন্ডারিং বন্ধ করা।

কলকাতায় কেনো বাংলাদেশি চ্যানেল দেখা যায় না?
বাংলাদেশি চ্যানেল কলকাতায় ডাউনলিংক করাতে গেলে শর্তানুযায়ী পাঁচ কোটি টাকা এককালীন ডাউনলিংক ফি এবং প্রতি বছরের জন্য আড়াই কোটি টাকা রিনিউয়াল ফি দিতে হয়। এ বিপুল অংকের শর্তের কারণে বাংলাদেশের কোনো চ্যানেলই কলকাতায় তাদের সম্প্রচার নিতে পারেনি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে মাত্র তিন লাখ টাকা ফি দিয়েই ভারতীয় নামের চ্যানেলগুলো ডাউনলিংক অনুমতি পাচ্ছে।

মিডিয়া ইউনিটি মনে করে, বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মতোই বাংলাদেশেও বিদেশি চ্যানেলের জন্য পাঁচ কোটি টাকা ডাউনলিংক ফি এবং আড়াই কোটি টাকা রিনিউয়াল ফি নির্ধারণ করা। এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ আলোচনায় আসতে পারে। উভয় পক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুক্তিযুক্ত ফি নির্ধারণ করা সম্ভব বলে মনে করে সংগঠনটি। তাদের চাওয়া- প্রতিযোগিতার বাজার দুই দেশের টেলিভিশনগুলোর জন্য সমান হোক। এতে বাংলাদেশের টিভি শিল্প এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা টিকে থাকতে পারবে।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের সমস্যা ও এর থেকে উত্তরণের পথ তুলে ধরেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বাবু ও সদস্য সচিব আরিফ হাসান। তারা মনে করেন, অনুমতিবিহীন বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে শিগগিরই। টেলিভিশন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে মিডিয়া ইউনিটি।

সংগঠনটির সদস্যরা হলো বাংলাদেশ টেলিভিশন ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাটকো), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফউজে), ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইমা), টেলিভিশন প্রোগাম প্রোডিউসারস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিরেক্টর’স গিল্ড অব বাংলাদেশ, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, ক্যামেরাম্যান এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, শুটিং হাউজ ওনার্স এসোসিয়েশন, টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ (টেনাশিনাস),  টেলিভিশন মেকআপ আর্টিস্ট এসোসিয়েশন, টেলিভিশন লাইট হাউজ এসোসিয়েশন, টেলিভিশন লাইট ক্রু এসোসিয়েশন,  সহকারি পরিচালক সমিতি এবং প্রযোজনা ব্যবস্থাপক সমিতি।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।