ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

মুক্তিযোদ্ধা বাউল হুমায়ুন সাধুর দেহত্যাগ

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
মুক্তিযোদ্ধা বাউল হুমায়ুন সাধুর দেহত্যাগ বাউল হুমায়ুন সাধু (ছবি: সংগৃহীত)

লালন অনুসারী, বিশিষ্ট দম সাধক ও মুক্তিযোদ্ধা সাধু গুরু হুমায়ূন ফকির ওরফে বাউল হুমায়ুন সাধু দেহত্যাগ করেছেন। ২৬ মার্চ বিকেল ৪টায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার উত্তর মির্জানগর গ্রামে জন্মেছিলেন হুমায়ুন। জন্মস্থানে নিজের নামে আখড়া বাড়ি প্রতীষ্ঠা করেছিলেন।

সেখানে লালনভক্তদের নিয়ে হতো সাধুসঙ্গ। সিংগায় ফুঁ দেওয়ার শিরোমনি বলা হতো হুমায়ুন সাধুকে। একটানা ৮ মিনিট (মতান্তরে ২৫ মিনিট!) ফুঁ দিতেন তিনি। এই সাধকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংস্কৃতি অঙ্গনে।  

হুমায়ুন সাধুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ চলছে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যম ফেসবুকে। তাকে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখছেন ভক্তরা।  

হুমায়ুন সাধুকে নিয়ে কবি কাজল শাহনেওয়াজ লিখেছেন, “১৯৯৮ সালে আমার লালমাটিয়ার দু’রুমের ছোট্ট বাসায় একদল লালন সাধুকে সবিনয় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ভাড়া বাসায় রবীন্দ্রনাথের কুঠি বাড়ির স্পেস ছিলো না, কিন্তু সাধুরা খুব আন্তরিক ভাবেই আসলেন। সেখানে আকলিমা ছিলেন, রবিউল ছিলেন, টুনটুন বাউল ছিলেন, ছিলেন হুমায়ুন সাধু! হুমাযুন ভাইয়ের তখন কালো পর্ব! কালো লম্বা দেহে কালো কাপড়, কালো দাড়ি, কালো কুচকুচে চুল। এভারেজ বাউলদের থেকে দীর্ঘদেহি, সাপের মতো তীক্ষ্ণ চোখ, শক্ত! শুধু হাসিটা প্রাকৃতিক। বললেন, ‘আমরা তো মাছ মাংশ খাইনা। তবে ডিম চলতে পারে!’

বাউল হুমায়ুন সাধু  (ছবি: সংগৃহীত)লালন অনুসারিদের মধ্যে হুমায়ুন সাধুকে দেখেছি অন্য রকম! সারাজীবন উনি থাকলেন নিঃসঙ্গ ও পুরুষ, যেখানে এই পথটাই হল যুগল সাধনার!

হুমায়ুন সাধু গভীর দৃষ্টিতে দেখতেন। কি দেখতেন তা নিশ্চয়ই কেউ কেউ জানেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে উনি অনেক মানুষের জন্য একটা বার্তা দিতেন। অনেকের নানা রকম আরবান সাইকোসিস সম্পর্কেও উনি জানতেন। তাদের জন্য কিছু প্রাচীন সংসর্গ দিতেন।

শুনেছি, যৌবনে উনি সীমান্ত সেনা হয়ে কাজ করেছিলেন। তখন রাতের পর রাত জেগে থাকতেন। অন্যদের হয়ে তাদের ডিউটি করে দিতেন। তার একটা শক্ত কিন্তু খুবই নরম হৃদয় ছিলো। অনেকটা কবি কাজী নজরুলের মতো। ”

কাজল আরও লিখেছেন, ‘নরসিংদির কাছে খানাবাড়ি রেল স্টেশনের অনতিদূরে তার একটা ধাম আছে। ঢাকা থেকে স্থপতিরা তা ডিজাইন করেছিলেন। সেখানে গেলে দেখি, হুমায়ুন ভাই কেবল হাসেন। তার সেই ভূবন ভুলানো রহস্যময় শরীরে চমক দেয়া হাসি!

হুমায়ুন সাধু আজ (২৬ মার্চ) বিকালে পর্দার আঁড়ালে চলে গেছেন! শুধু মনে জাগছে, উনি যখন আমাদের মতো কৌতুহলী মানুষের সামনে তার দীর্ঘ দমের সেই বিখ্যাত কারিশমাটা দেখাতেন, তখন আসলে কি বলতেন?

বাউল হুমায়ুন সাধু  (ছবি: সংগৃহীত)হুমায়ুন ভাই, হে চিরতরুন! আপনাকে খুব মনে হচ্ছে! আপনি সাধন সঙ্গীনি ছাড়াই কেমন লালন সাধনা করে গেলেন!”

* গাইছেন হুমায়ুন সাধু: 

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এসও 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।