তিনি অজয় চক্রবর্তী। রক্তে যার মিশে আছে যেন সংগীত।
নেশা, পেশা, ধ্যান-জ্ঞান সবই ওই শব্দটিই-‘গান’। এ প্রজন্মের জনপ্রিয় এ শিল্পীকে অনুপ্রেরণা মেনেই গানের পৃথিবীতে উঠে আসছেন চট্টগ্রামের আরও অনেক তরুণ।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অজয় চক্রবর্তী শুনিয়েছেন তার ৩০ বছরের সংগীত জীবনের গল্প।
অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, ‘যার অনুপ্রেরণায় সংগীতাঙ্গনে আমার এ পথচলা, আমার সেই কাকার (জহর চক্রবর্তী) রক্তে যেমনি সংগীত মিশে আছে তেমনি আমারও। যেদিন আমি আর গাইতে পারব না সেদিন যেন আমার মৃত্যু হয়। কেননা, সংগীত ছাড়া আমি বাঁচব না। ’
অজয় বলেন, ‘আমার নেশা, পেশা, ধ্যান, জ্ঞান সবই গান। জানি না জীবনে কতটা সফল গায়ক হতে পারব। তবে গান শিখে যাচ্ছি, চর্চা করেই যাচ্ছি। শাস্ত্রীয় সংগীত না শিখলে আমার মনে হয় ভালো গায়ক হওয়া যায় না। সারাজীবন গান গাইতে চাইলে শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা করে যেতেই হবে। আমার বয়স এখন ৪০। তবুও গুরু ধরে গান শিখে যাচ্ছি। সংগীত গুরুমূখী বিদ্যা, সবচেয়ে কঠিনবিদ্যা। আমি সবার কাছে আমার জন্য আশীর্বাদ কামনা করি, যাতে আজীবন ভালো গান গেয়ে যেতে পারি। ’
‘২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে গানকে পেশা হিসেবে নেব ভাবিনি। দেশের স্বনামধন্য কিবোর্ডিস্ট বিনোদ রায় আমাকে সংগীতাঙ্গনে পরিচিত করেছে। কোনো চাকরিতেও যোগ দিইনি। এখন গান নিয়ে নিজের জগতে নিজেই পড়ে থাকি। এতেই আত্মতৃপ্তি পাই। ’ যোগ করেন অজয়।
এক প্রশ্নের জবাবে অজয় বলেন, ‘ভবিষ্যতে ভালো কিছু গান করে শ্রোতাদের কাছে অমর হয়ে থাকতে চাই। যদিও প্রচারের বিষয়টি আমাকে তেমনিভাবে টানে না। অ্যালবামের কাজে নামব, নামব বলে, এখনো হয়ে ওঠেনি। নিজের মনের মতো না হলে অ্যালবাম করবোই না। দুদিনের নিছক জনপ্রিয়তার জন্য যেনতেনভাবে গানের অ্যালবাম করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি না। ’
তিনি বলেন, ‘একুশে পদকপ্রাপ্ত ওস্তাদ হরিপাল ১৯৮৩ সালে যখন আমার কাকাকে গান শেখাতে বাসায় আসতেন তখন ৬ বছর বয়স আমার। কাকা যখন গান শিখতেন সেখানে আমিও বসতাম। পরবর্তীতে কাকার সাথে আমিও ওস্তাদ হরিপালের কাছে গান শেখা শুরু করি। এরপর ওস্তাদ বিচিত্রা সেন, পূরবী চক্রবর্তী, অরুণ চৌধুরীর কাছে তালিম বিভিন্ন সময়ে নিয়েছি। বর্তমানে ওস্তাদ সুরবন্ধু অশোক চৌধুরীর কাছে ক্লাসিক্যাল শিখছি। আমার মা (ভানু চক্রবর্তী) ও বাবা (মানিক লাল চক্রবর্তী) দুজনই গানপ্রিয়। উনারা নিজেরা অবসর সময়ে আমার কাছে গান শুনবেন বলেই আমাকে গান শেখাতে শুরু করেছিলেন। এখনো আমি যখন গানের চর্চা করি, পাশে আমার মা বসে থাকেন। আর পুরোনো দিনের গানগুলো গাইতে বলেন মা। মাকে গান শোনাতে পারলেই আমার অনেক তৃপ্তি লাগে। ’
পুরনো বাংলা গান গাইতে ভালো লাগার কথা জানিয়ে অজয় আরও বলেন, ‘আমি গান গাওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় মেলোডি গানকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। বিশেষ করে কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ, সুবীর সেন, কিশোর কুমার, পিন্টু, মানবেন্দ্র, সুবীর নন্দী, মাহমুদুন্নবী, শাহানাজ রহমতুল্লাহ, আব্দুল জব্বারের গানগুলো আমি বেশি প্রাধান্য দিই। যেসব গান শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় সেই গানগুলো গাইতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’
শিল্পী অজয় চক্রবর্তী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান গেয়ে শ্রোতাদের মনজয় করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের দিল্লি, সিঙ্গাপুরে সংগীত পরিবেশন করে শ্রোতাদের মনজয় করেছেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি নিজের লেখা একটি এবং অশোক চৌধুরীর লেখা ৩টি গানের সুর করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এসবি/এআর/টিসি