বাংলানিউজ: দেবের বিপরীতে তার গার্লফ্রেন্ড রুক্মিণী মৈত্রর অভিষেক হলো ‘চ্যাম্প’ দিয়ে। একটু নিজের সম্পর্কে দর্শকদের বলুন।
রুক্মিণী মৈত্র: প্রথমেই বলি আমাকে অনেকেই বাঙালি ভাবেন না। হয়তো আমার কথা বলার ধরনের জন্য। কিন্তু আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবটাই কলকাতায়। ভাত-মাছের ঝোল আমার প্রিয়। ছোটবেলায় আমি রবীন্দ্রসংগীতও শিখেছি। বলতে চাইছি, আমি পুরোপুরি বাঙালি। তবে এতোদিন যাদের আপনারা নায়িকা হিসেবে দেখেছেন তারা আমার থেকে অনেক আগে শুরু করেছেন। এখনকার বাঙালি মেয়েরা কিন্তু অনেক বদলে গিয়েছে। আমার মধ্যেও হয়তো সেই ছাপটা আছে। আমার হাইট ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। তাই হয়তো অনেকে ভাবেন আমি পাঞ্জাবি। কিন্তু আজকের বাঙালি মেয়েরাও স্বাস্থ্যসচেতন। টাটা, আইটিসি, সানসিল্ক, ভোগ, হাচ, ভোডাফোন, রিলায়েন্স-এর মতো ব্র্যাণ্ডের সঙ্গে টানা কাজ করেছি। আমি আধুনিক বাঙালি নারীকে রিপ্রেজেন্ট করছি যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট, হেলথ কনশাস, একটা শিক্ষিত পরিবার থেকে আসছে, মেয়েদের ক্ষমতায় বিশ্বাসী, নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাসী। দাদু ছিলেন চিফ জাস্টিস বি এন মৈত্র।
বাংলানিউজ: দেবের সঙ্গে আগে কাজের প্রস্তাব তো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন?
রুক্মিণী: ১০ বছর আগেই অফার এসেছিলো। মডেল হিসেবে আমার পরিচিতি আছে। আমিও এমন ছবিতে কাজ করতে চাই যাতে মেয়েদের চরিত্রকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। ‘চ্যাম্প’-এ রাজি হওয়ার সেটাই একটা কারণ।
বাংলানিউজ: তাহলে তো টেনশন নেই?
রুক্মিণী: টেনশন আছে । চ্যাম্প দেবের প্রথম প্রযোজনা, রাজ চক্রবর্তীর অন্যরকম ছবি। কিন্তু সবাই বলছে, দেখতে চাই রুক্মিনী কী করে। প্রথম ছবিতেই ফোকাস অনেকটা আমার ওপর। মেয়েটা তো মডেল, অভিনয় কী পারবে? দেবের সঙ্গে সম্পর্কের খাতিরেই কি সুযোগ পেলো? গ্ল্যামারাস মেয়ে ডিগ্ল্যামারাস লুকে কেমন লাগবে? আদৌ মানাবে? এগুলো বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিলো। আমারও তো সবে প্রথম ছবি। একটু স্পেস তো চাই। আমাকেও তো ভুল করতে হবে, না হলে শিখবো কীভাবে!
বাংলানিউজ: পড়াশোনা কি কলকাতায়?
রুক্মিণী: একদমই। স্কুল, কলেজ সবই কলকাতায়। কারমেল কনভেন্ট, তারপর লোরেটো। এমবিএ করেছি পুনের সিম্বায়োসিস থেকে।
বাংলানিউজ: মডেলিংয়ে আসা কীভাবে?
রুক্মিণী: কোনও ইচ্ছেই ছিলো না। সবাই বলে আমি মডেলিং নয়, মডেলিংই আমাকে বেছে নিয়েছে। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তাই। এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলাম। নিচের ফ্লোরে একটা স্টুডিও ছিলো। এক ফটোগ্রাফার ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেখেন। তখন আমার মাত্র ১৩ বছর বয়স। উনি এসে আমার কাকাকে বলেন, আচ্ছা ও কি মডেল? আমার জন্য একটা শ্যুট করবে? আমার ছবি তুলতে প্রচণ্ড অনীহা ছিলো। আমি ভাবতাম ছবিতে আমাকে খুব খারাপ আসে। তাই অনেকদিন অব্দি কোনও ফ্যামিলি পিকচারে আমি নেই। ফলে হঠাৎ করেই এ রকম প্রস্তাব পেয়ে রাজি হচ্ছিলাম না। মা জোর করে আমাকে পাঠায়। আমার কিন্তু এতোদিন অব্দি একটা পোর্টফোলিও ছিলো না। গতবছর মডেলিংয়ে আমি ১০ বছর পূর্ণ করেছি। তখন ইন্ডাস্ট্রি আমাকে একটা পোর্টফোলিও গিফট করেছে। সাম্প্রতিককালে বাংলা ছবিতে এমন সাড়া জাগানো অভিষেক হয়নি। এর জন্য আমি ইন্ডাস্ট্রি, আমার ইউনিট আর দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞ। সাংবাদিকদের কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ একজন ডেব্যুট্যান্টের ইন্টারভিউ অনেকেই নিতে চায় না। মডেল হিসেবে হয়তো অনেকে করতে চাইবেন, কিন্তু অভিনেত্রী হিসেবে তো আমি এখনও পর্যন্ত জিরো। তবে চারদিক থেকেই বেশ পজিটিভ ফিডব্যাক পাচ্ছি।
বাংলানিউজ: ‘চ্যাম্প’-এর জয়া কেমন?
রুক্মিণী: জয়া অনেকটাই আমার মতো। স্বাধীনচেতা, ভাবনা-চিন্তা করে কাজ করে। ঠিক-ভুল বিচার করতে পারে। খুব সাপোর্টিভ। কাছের মানুষদের প্রচণ্ড ভালোবাসে, তাদের দায়-দায়িত্ব নিতে চায়। যে কোনও পরিস্থিতিতেই নিজের পরিবারকে আগলে রাখতে চায়। একটা স্ট্রং মেয়ের চরিত্র।
বাংলানিউজ: দেবের ছবি দেখেন?
রুক্মিণী: ‘চাঁদের পাহাড়’-এর আগে আমি দেবের কোনও ছবি দেখিনি। সংগীত বাংলায় ওর কিছু গান দেখেছি। ‘বুনোহাঁস’-এ দেবের অভিনয় আমার ‘চাঁদের পাহাড়’-এর থেকে ভালো লেগেছে। কিন্তু ‘জুলফিকার’ দেখে আমি দেবকে মেসেজ করেছিলাম যে, আমি তোমার ফ্যান। আমার মনে হয় অভিনেতা হিসেবে ও নিজের সেরা ফর্মে আছে।
বাংলানিউজ: এক নম্বর নায়িকার দৌঁড়ে থাকতে চান না?
রুক্মিণী: আমাকে দেখে যেমন গ্ল্যামারাস বা এক্সট্রোভার্ট মনে হয়, আমি আসলে সে রকম নই। আমি ইন্ট্রোভার্ট। পরিবার নিয়ে সহজ সরল জীবন কাটাতে ভালোবাসি। বিখ্যাত হবো, ফ্যান হবে এ রকম কোনও উচ্চাকাঙ্খা আমার নেই। এরপরে আর ছবি নাও করতে পারি। আমাকে দর্শকের হয়তো পছন্দ হলো না, ছবি পেলামই না । তখন কী হবে! তাহলে সিনেমাও গেলো, পড়াশোনাও গেলো। আমি অ্যাম্বিশাস ছিলাম না। কিন্তু এটা মাথায় ছিলো যে, আমাকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে। ‘চ্যাম্প’ হিট করলো, দেব-রাজ অনেক নাম করলো, রুক্মিনীকে দর্শক নিলোই না। আমি আর কোনওদিন চান্সই পেলাম না। আমার ‘প্ল্যান বি’ সব সময় তৈরি।
বাংলানিউজ: পলিটিশিয়ান হিসেবে দেব কেমন?
রুক্মিনী: দেব খুব রিফ্রেশিং। চেষ্টা করে সব ম্যানেজ করার, ভালো কাজ করার। পার্লামেন্টে গিয়ে কম বক্তব্য রাখলেও মিনিংফুল বক্তব্য রাখতে চেষ্টা করে। দেবের মতো ইয়াং ব্লাড রাজনীতিতে খুব জরুরি। শিক্ষিত লোক খুব দরকার যারা সমাজটাকে বোঝে।
বাংলানিউজ: সিনেমায় দেব আপনাকে প্রপোজ করেছিলেন নাকি উল্টোটা?
রুক্মিনী: অবশ্যই জয়া (রুক্মিণী) শিবাজির (দেব) প্রেমে পড়েছিলো। আর যেহেতু শিবাজি ছেলে তাই আমাদের সমাজে প্রপোজের দায়িত্বটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেরাই নেয়।
বাংলানিউজ: তাহলে বিয়েটা কবে করছেন?
রুক্মিনী: ‘চ্যাম্প’ দেখুন। বিয়ে শুধু কেন, বাচ্চাও দেখতে পাবেন। এরপর কোনও প্রশ্ন হতে পারেনা। এরপর জিজ্ঞাসা করতে পারেন নাতি-নাতনি কবে হচ্ছে? সত্যি পারেনও বটে আপনারা।
বাংলানিউজ: সাংবাদিকদের ওপর রাগ হচ্ছে তাহলে?
রুক্মিনী: না না, তা কেন! এই প্রফেশনে না এলে আমারও ইচ্ছে ছিলো সাংবাদিক হবো। সাংবাদিকদের নিজস্ব একটা মত আছে। যদি নিজের প্রফেশনের প্রতি সৎ থাকতে হয় তাহলে তাদের কাউকে বন্ধু বানালে চলবে না (হাসি)। সাংবাদিকদের কারও বন্ধু হতে নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৭
এসএস/এসও