অবশেষে নীরবতা ভেঙেছেন রাজশ্রী। নতুনরূপে ফিরছেন শ্রোতাদের মাঝে।
অ্যালবামটিতে স্থান পেয়েছে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য গীতিকার ও সুরকারের ৩টি মৌলিক গান, ৩টি রবীন্দ্র সংগীত, কিংবদন্তী শিল্পী আশা ভোঁসলে, ফরিদা খানম ও আরতি মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় ৪টি বাংলা ও হিন্দিতে গাওয়া গান।
ভারতের গিটারিস্ট ও মিউজিক ডিরেক্টর পার্থ প্রতীম ব্যানার্জির সংগীতায়োজনে অ্যালবামটির রেকর্ড হয়েছে কলকাতার ঊষা উত্তপ ভাইব্রেশন স্টুডিওতে।
অ্যালবামে শিল্পীর মৌলিক গানের মধ্যে কলকাতার স্বনামধন্য গীতিকার অমিত গোস্বামীর কথা ও দেশের স্বনামধন্য কি-বোর্ডিস্ট বিনোদ রায়ের সুরে ‘আমার শহর থেকে দূরে’, কলকাতার টুনাই দেবাশীষ গাঙ্গুলীর কথা ও সুরে ভারতের রাড়ো অঞ্চলের ফোক গান ‘না যাম আমি তোর লগে’, কলকাতার গিরীশ চন্দ্র রায়ের কথা ও সুরে ভারতের গোয়ালপাড়িয়া অঞ্চলের ফোক গান ই-মাদল বাজিছে’ শ্রোতাদের মনে স্থান করে নিবে বলে আশাবাদী শিল্পী নিজেই।
এছাড়াও অ্যালবামে কিংবদন্তী শিল্পী আশা ভোঁসলের গাওয়া ‘জানে কেয়া বাত হে’, ফরিদা খানমের গাওয়া গজল ‘আজ জানি কি জিদ না করো’ ও আরতি মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘কত দূর আর কত দূর’ ও ‘দো নে না’ এবং রবীন্দ্র সংগীত ‘সেই ভাল সেই ভাল’, ‘চরণ ধরিতে দিও গো আমারে’, ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ গানগুলোও শ্রোতাদের কাছে অন্যরকম আনন্দ দেবে।
অ্যালবাম সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশ্রী আচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, শ্রোতারাই শিল্পীর প্রাণ। শুদ্ধ সংগীত চর্চার মাধ্যমে ভাল লাগার কিছু গান নিয়ে আমার এ নতুন ‘আমার শহর থেকে দূরে’ অ্যালবামটি সাজানো হয়েছে, যেখানে দেশের ও ভারতের বেশ কিছু গুণী শিল্পীর গান রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছি সংগীতচর্চার মাধ্যমে ভাল কিছু গান গাইতে। যাতে শ্রোতাদের কাছে অমর হয়ে বেঁচে থাকি। তারই প্রয়াস আমার এ নতুন অ্যালবামটি, যা সংগীতের এই মহাযজ্ঞে শ্রোতাদের কাছে ঠাঁই করে নিবে বলে আমি আশাবাদী।
‘অ্যালবামটিতে পার্থ প্রতীম ব্যানার্জিসহ সকল গীতিকার ও সুরকারের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। যাদের মাধ্যমে আমার থেমে যাওয়া কণ্ঠ ও সুর আবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং সংগীতের এই মহাযজ্ঞে আবারো নিজেকে সঁপে দিতে পারছি। জীবিকার তাগিদে নয় গানকে মন-প্রাণ থেকেই ভালবাসি। বিশেষ করে পুনর্জীবন ফিরে পাওয়া আমার স্বামী সমীর আচার্য্য, অসীম দাশ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সকল শোভাকাঙ্খীদের কাছে আমি আজীবন ঋণী। ’ যোগ করেন রাজশ্রী
ওস্তাদ নিরোদ বরণ বড়ুয়ার কাছে প্রথম ১৯৮৬ সালে গান শেখার মধ্য দিয়ে সংগীতে হাতেকড়ি রাজশ্রীর। এছাড়াও ওস্তাদ মিহরি লালা, জয়ন্তী লালা ও অমল কান্তি চৌধুরীর কাছে সংগীতের নানা বিষয়ে তালিম নিয়ে ১৯৯৯ সালে একক সংগীত আয়োজনের করেন রাজশ্রী। এরপর থেকে দেশের নানা প্রান্তে গান গেয়ে বেরিয়েছেন।
ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে স্বামী সমীর আচার্য্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শুদ্ধ সংগীত চর্চাকে ধারণ করে ১৯৯৯ সালে ‘কাঁদাবে তুমি’ শিরোনামে প্রথম একক অ্যালবাম রিলিজড হয় রাজশ্রীর। সাউন্টেকের ব্যানারে অ্যালবামটির কথা ও সুর করেছেন আইয়ুব বাচ্চু ও আলী আকবর রুপু। এ অ্যালবামটির ‘এভাবে কাঁদাবে তুমি, কখনো ভাবিনী আমি’ গানটি শ্রোতাদের কাছে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়।
২০০৪ সালে কিংবদন্তী শিল্পী আশা ভোঁসলের ১২টি গান নিয়ে ‘সেই পরদেশিয়া এলো’ দ্বিতীয় অ্যালবাম রিলিজড হয়। যে অ্যালবামটি দেশে সংগীতার ব্যানারে এবং কলকাতার রাগা মিউজিক থেকে বের হয়। এ অ্যালবামটিও শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়।
একই মঞ্চে স্বনামধন্য শিল্পী কুমার সানু, অনুরাধা পারোয়াল, মোহাম্মদ আসলাম, সুবীর নন্দী, আইয়ুব বাচ্ছু, তপন চৌধুরী, মনির খানসহ আরও বেশ কিছু শিল্পীর সাথে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছে রাজশ্রীর। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রাজশ্রী ইতিমধ্যে ভারত, বাহরাইন, দুবাই, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের গান শুনিয়েছেন।
রাজশ্রীর জনপ্রিয়তা যখনই শ্রোতাদের কাছে অধিক প্রিয় হয়ে ওঠতে থাকে। তখনই শিল্পী রাজশ্রীর জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে প্রাণের স্বামীর ধরা পড়ে দুরারোগ্য ব্রেইন টিউমার। যেটি রাজশ্রীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়।
শিল্পী রাজশ্রী আচার্য্য বলেন, ‘ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারানোর পর আমার স্বামীই আমাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমার সংগীত জীবনকে করেছে ধন্য। সেই স্বামীর নানান দুরারোগ্য ব্যাধি আমাকে আশাহত করেছিল। কিন্তু না, দেশ-বিদেশের নানান চিকিৎসা পেয়ে সৃষ্টিকর্তা আমার স্বামীকে সুস্থ করে দিয়েছে। আবারো খুলে দিয়েছে আমার সংগীতচর্চার দ্বার। আমি চাই, সুস্থ ধারার সংগীতচর্চার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে। তাহলেই আমার জীবন ধন্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
এসবি/টিসি