ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ভালোবাসা ফুরায় না, পাল্টে যায় শুধু মানুষটি: পাওলি দাম

স্মিতা সাহা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৭
ভালোবাসা ফুরায় না, পাল্টে যায় শুধু মানুষটি: পাওলি দাম পাওলি দাম- ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে পাওলি দাম অভিনীত ‘সত্তা’। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ছবিটি পতিতার চরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হয়েছে পাওলি। বর্তমানে টলিউডের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ভারতের এ অভিনেত্রী। আর সেই ব্যস্ততার মাঝেও বাংলানিউজকে সময় দিলেন ‘হেট স্টোরি’খ্যাত এই তারকা। যেখানে তিনি অভিনয়, প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে নিয়ে আড্ডা দিয়েছেন। চলুন পড়ে নেওয়া যাক পাওলির সাক্ষাৎকার-

বাংলানিউজ: সরাসরি জানতে চাই রূপালি পর্দায় কি ভাবে আগমন?
পাওলি দাম: আসলে আমি কিন্তু শুরুতেই অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চাইনি। কলকাতার রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে ক্যামিস্ট্রিতে গ্র্যাজুয়েশন করি।

পড়াশুনারর সাথে সাথে বিখ্যাত ভারত নাট্যম গুরু থাঙ্কুমণি কুট্টির কাছে ভারতনাট্যম শিখতাম। একটি সময়ে খেলাধুলোও করেছি সিরিয়াসলি। আমার মা খুব ভালো গান গাইতেন। কিন্তু হারমোনিয়াম নিয়ে বসার ধৈর্য ছিলো না বলে গানটা হলো না। এরপর বাংলা টেলিভিশনে প্রথম সিরিয়াল করি ‘জীবন নিয়া খেলা’ তারপর পরবর্তী কয়েক বছর ধরে টেলিভিশনের পর্দায় কাজ করেছি ‘তিথির অতিথি’ ও ‘সোনার হারিণ’ সিরিয়ালে। তো যাই হোক, গৌতমদার সঙ্গে ‘কালবেলা’ করার পর থেকে অভিনয়ের নেশাটা একটু একটু করে ধরতে শুরু করলো। ঋতুদাই প্রথম আমাকে বললো, এভাবে হবে না, একটু আধটু ওয়ার্ল্ড সিনেমাটা নিয়ে চর্চা কর। পরে বাপ্পাদাও আমাকে এব্যাপারে প্রচুর উৎসাহ দিয়েছিলেন।

বাংলানিউজ: তারপর?
পাওলি:
তারপর ওয়ার্ল্ড সিনেমার খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখলাম, ওদেশের অভিনেতারা একটি চরিত্র করতে গিয়ে জীবনের সর্বস্ব দিয়ে দেন। ততোদিনে সিনেমায় অভিনয়টা আমাকে পেয়ে বসেছে। আমিও ওই পর্যায়ের অভিনয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম।

বাংলানিউজ: কিন্তু পরপর আপনি এমন কয়েকটা ছবিতে কাজ করেছেন যেমন—‘ছত্রাক’, ‘হেট স্টোরি’, ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ যে লোকের চোখে পাওলি মানেই খোলামেলা ও বিতর্কিত কিছু দৃশ্য। ইন্টারনেটে আপনার ছবি সার্চ দিলেও সেইসব খোলামেলা ছবিই ভেসে ওঠে।
পাওলি:
একটু খুলে বলি। আপনি যে ছবিগুলোর নাম বলছেন সেগুলোর আগে কিন্তু আমি গৌতমদার (গৌতম ঘোষ) ‘কালবেলা’ ছবিতে মাধবীলতার চরিত্র করেছি, ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ ছবিতে কাজরী রায়ের চরিত্র করেছি। বাপ্পাদার (বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়) ‘কাগজের বউ’, অঞ্জন দাসের ‘বাঁশিওয়ালা’র মতো ছবিতে কাজ করেছি। ‘ছত্রাক’ আমার অনেক পরের দিকের ছবি। তবে বিমুক্তি জয়সুন্দরের ‘ছত্রাক’ ছবিটি আন্তর্জাতিক মানের একটি ছবি। কান এবং টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়াল সিলেকশন হয়েছিলো। প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছি। ‘ছত্রাক’-এর যে দৃশ্যগুলো নিয়ে হইচই হয়েছিলো, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হয়েছিলো তার অনেকগুলোই কিন্তু ইচ্ছাকৃত। ওসব দৃশ্যগুলো মোটেই ছবিতে ছিলো না। খেয়াল করে দেখবেন, ‘হেট স্টোরি’র পর কিন্তু আমি আর ওরকম ছবি করিনি। মুম্বাই থেকে প্রচুর প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি স্টিরিওটাইপড রোলে আটকে পড়তে চাই না। এখনও মুম্বাই থেকে অনেক হিন্দি ছবির প্রস্তাব আসে। কিন্তু আমার তো বাংলা ছবিও আছে। যদি পছন্দসই কোনও চরিত্র পাই তবে অবশ্যই করি।

পাওলি দাম- ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উঠলে, শোনা যায় ওনার সঙ্গেও আপনার একটা নৈকট্য তৈরি হয়েছিলো?
পাওলি:
আপনি যে অর্থে বলছেন, সে অর্থে কিন্তু কোনও সম্পর্ক হয়নি। বাপ্পাদা অসাধারণ একজন মানুষ। প্রচুর খবর রাখতেন ওয়ার্ল্ড সিনেমা সম্পর্কে। আমাকে ভীষণ সাহায্যও করেছেন। অনেক জ্ঞান। সেজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। আর আমাদের প্রফেশনে কি হয়, একটি ছবি করতে গিয়ে অনেকেদিন মিলেমিশে একসঙ্গে কাটাতে হয়। এমনিতেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। সেটা খুবই স্বাভাবিক সম্পর্ক। যেমন মানুষের সঙ্গে মানুষের হয়।

বাংলানিউজ: আপনার জীবনেতো অনেক ভালোবাসার মানুষ এসেছেন, এটা তো সত্যি। শিলাদিত্য পত্রনবীশ, তারপর বিক্রম, আর এখন?
পাওলি:
এখনও একজন আছেন।

বাংলানিউজ: তিনি কে?
পাওলি:
(হেসে) মুশকিলে ফেলে দিলেন। দেখুন এই মুহূর্তে তার পরিচয়টা আমি প্রকাশ করতে চাই না।

বাংলানিউজ: রূপালী জগতের কেউ?
পাওলি:
না। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাইরের লোক তিনি। ব্যবসায়ী। আসামের গুয়াহাটিতে থাকেন।

বাংলানিউজ: বাঙালি?
পাওলি:
হ্যাঁ বাঙালীতো, অবশ্যই।

পাওলি দাম- ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: আচ্ছা পাওলি, ভালোবাসা না থাকলে জীবনটা কেমন হতো?
পাওলি:
ওরে বাবা, আমার পক্ষে দুঃসহ। তবে জানেন, ভালোবাসা কখনও ফুরোয় না। ভালোবাসার মানুষটি হয়তো পাল্টে যায়, কিন্তু ভালোবাসাটা থেকেই যায়। আবার আমি দেখেছি যে, ভালোবাসার মানুষটির থেকে আঘাত পেয়ে কেউ সারাজীবন আর বিয়েই করলেন না। এভাবেই অনেকে হয়তো নিজেকেই শেষ করে দেন।

বাংলানিউজ: এই মুহূর্তে আপনার হাতে আর কি কি ছবি রয়েছে?
পাওলি:
প্রতীম ডি গুপ্তর ‘মাছের ঝোল’ মুক্তি পাবে এই আগস্টে। আরও দুই একটি ছবি রয়েছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলবো না। একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করছি। ইতিমধ্যে ছবিটির দৃশ্যধারণ শুরু হয়ে গেছে। সেখানে একজন অভিনেত্রীর ভূমিকায় দেখা যাবে আমাকে। তাছাড়া বিমুক্তি জয়সুন্দরের সঙ্গেও একটি ছবির কথা চলছে।

বাংলানিউজ: বিয়ে করছেন কবে?
পাওলি:
(হেসে) বিয়ে নিয়ে এখনও কিছুই ভেবে উঠতে পারিনি সেইভাবে। তবে যখনই হোক আপনারা সব জানতে পারবেন।

বাংলানিউজ: শেষ প্রশ্ন, পাওলি মানে একটা অদ্ভুত ইমেজ দর্শকের মনে তৈরি হয়ে গিয়েছে, পাওলি মানেই খোলামেলা দৃশ্য, পাওলি মানেই ‘হট অ্যান্ড সেক্সি’। আপনি কি ইচ্ছাকৃত এই ইমেজ তৈরি করেছেন?
পাওলি:
একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি নির্দিষ্ট কোনও ইমেজে বাধা থাকতে চাই না। ফলে ইচ্ছাকৃত ইমেজ তৈরি করার কোনও ব্যাপার নেই। যে চরিত্রগুলো আমাকে টানে সেগুলোতেই আমি অভিনয় করি। আর চরিত্রের প্রয়োজনে পর্দায় যে কোনও কিছু করতে রাজি। এটি করতেও সাহস লাগে। তাই হয়তো অনেকের মতো আপনারাও ‘হট অ্যান্ড সেক্সি’ লেভেল তকমা দিয়েছেন। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে যে পাওলি অভিনয়টাও জানে। তাই এখনও আছি রূপালি পর্দায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ৩১ জুলাই, ২০১৭
বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।