আলী যাকেরের পাশাপাশি এই সম্মাননা পাচ্ছেন শিল্প সমালোচক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক। ৩০ আগস্ট (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গুণীদের হাতে পদক তুলে দেওয়া হবে।
শাওন মাহমুদ বলেছেন, ‘আগের সব অনুষ্ঠান হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। এ পর্যন্ত কখনও তাদের মিলনায়তন ব্যবহারের জন্য কোনও বিনিময়মূল্য নেয়নি। তাদের কাছে আমরা ঋণী। দূরত্ব, যানজট ও দিনটি কার্যদিবস হওয়ার কারণে এবার আমরা অনুষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন বেছে নিয়েছি। এবার দু’জন গুণী মানুষের হাতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ নামাঙ্কিত পুরস্কার অর্পণ করার সুযোগ পাচ্ছি বলে আমরা গর্বিত। ’
শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন এবার এক যুগ পেরিয়ে ১৩ বছরে পা দিলো। পদকপ্রাপ্ত গুণীদেরকে একটি সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয় ও নগদ কিছু অর্থ প্রদান করা হবে। শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক ও স্মরণ অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত।
শহীদ আলতাফ মাহমুদ একাধারে ভাষা সৈনিক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সুরস্রষ্টা। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি সুর করে অমর হয়ে আছেন তিনি।
১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে জন্ম নেন আলতাফ মাহমুদ। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে কোলকাতা বোর্ডের পরীক্ষা আন্ট্রান্স (এস এস সি) পাস ও ব্রজমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে (আইচ এস সি) ভর্তি হন।
পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে যান। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই নিয়মিত গাইতেন। প্রসিদ্ধ ভায়োলিন বাদক সুরেন রায়ের কাছে প্রথম সংগীতে তালিম নেন। তবে শোতা-দর্শকের কাছে তিনি প্রিয় ও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন গণসংগীতের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সারা আরা মাহমুদকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তানের নাম শাওন মাহমুদ।
১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় ধুমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। পরে তিনি এই সংস্থাটির 'সংগীত পরিচালক' পদে আসীন হন। সে সময়ই তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত গাইতেন।
১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’তে নতুন করে সুর করেন আলতাফ মাহমুদ। তিনবার এ কাজটি করার পর নতুন সুর চূড়ান্ত করেন। গানটির প্রথম সুর করেছিলেন আব্দুল লতিফ। তাকে আলতাফ মাহমুদ নতুন সুরটি শোনান। তিনি বেশ প্রশংসা করেন নবরূপের এ গানটিকে।
১৯৫৬ সালে আলতাফ মাহমুদ করাচি বেতারে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। তিনি 'ইত্তেহাদে ম্যুসিকি' নামে দশ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পরিচালনা করতেন। করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর আলতাফ মাহমুদ ১৯টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এর মধ্যে আছে ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ক্যায়সে কাহু’, ‘কার বউ’, ‘তানহা’, ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘দুই ভাই’, ‘সংসার’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘আদর্শ ছাপাখানা’, ‘নয়নতারা’, ‘শপথ নিলাম’, ‘প্রতিশোধ’, ‘কখগঘঙ’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘সুযোরাণী দুয়োরাণী’, ‘আপন দুলাল’, ‘সপ্তডিঙ্গা’ প্রভৃতি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই শিল্পীকে নতুন পরিচয়ে পায় বাংলাদেশিরা। তিনি তখন একাধারে গানের কাজ করেছেন, পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের পরম আশ্রয় হয়ে ওঠেন। নিজে গেরিলা যোদ্ধা ও সংগঠক ছিলেন।
তার বাসায় গেরিলাদের গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী তাকে আটক করে। তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার বাসা থেকে আরও অনেক গেরিলা যোদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের অনেকের সঙ্গে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন।
পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে, যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রাণিত করেছিলো।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭৭ সালে মহান এ মানুষটিকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কারণে তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালে দেওয়া হয় স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর)।
>>> আরও পড়ুন
‘সেলিম আল দীন পদক’ পাচ্ছেন আলী যাকের
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এসও