বুধবার (১১ অক্টোবর) ৭৫তম জন্মদিনে কেক কাটবেন বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন। অন্যদিকে ১০ অক্টোবর রেখার জন্মদিন।
অমিতাভ-রেখার ভালোবাসার শুরুটা হয়েছিলো ১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ ছবির সেটে। সে সময় বিবাহিত ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেন তারা। জানা গেছে, সব সময় দেখা করার জন্য নাকি রেখার এক বান্ধবীর বাংলো ব্যবহার করতেন তারা। যাতে করে তাদের গোপন প্রেম ও বিয়ের কথা কেউ কোনোদিন জানতে না পারেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু মাঝে ঘটে গেলো এক দুর্ঘটনা।
১৯৭৮ সালে ‘গঙ্গা কি সুগন্ধ’ ছবিতে দৃশ্যধারণের সময় এক সহশিল্পী রেখার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। সে সময় নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন বিগ বি। তখনই লাইমলাইট ও মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের গোপন প্রেমের গুঞ্জন। পরে বিষয়টি অস্বীকার করেন দু’জনই। কিন্তু তারা যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিলেন এটি পরিস্কার ছিলো। এমনকি ‘সিলসিলা’ ছবির পরিচালক যশ চোপড়া নিজেও অমিতাভ-রেখার প্রেমের খবরটি নিশ্চিত করেছিলেন।
আগে থেকেই গুঞ্জন ছিলো চুপিচুপি বিয়ে করেছেন অমিতাভ বচ্চন ও রেখা। কিন্তু সে গুঞ্জন আরও জোরালো হলো ঋষি কাপুর ও নিতু সিংয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে। এ সময় প্রথমবার মাথায় সিঁদুর ও মঙ্গলসূত্র পরে জনসম্মুখে হাজির হয়েছিলেন রেখা। যা দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছিলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথি। তাদের সবার নজর ‘বিবাহিত’ রেখার দিকে। সে সময় কেউ কেউ নাকি বলিউডের এই অভিনেত্রীকে প্রশ্নও করেছিলেন কবে বিয়ে করেছেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়, বিয়ের অনুষ্ঠানে নাকি অমিতাভের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন রেখা। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর অনুষ্ঠান থেকে চলে যান তিনি। কিন্তু রেখে যান অসংখ্য প্রশ্ন। এমন সময় অমিতাভপত্নি জয়ার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিলো? এ প্রসঙ্গে জয়ার একটি ঘনিষ্ঠসূত্র বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে চোখের পানি ফেলতেই হলো। ”
ওই ঘটনার পর রেখাকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জয়া বচ্চন। সেটি গ্রহণ করেছিলেন রেখা। নৈশভোজে যাওয়ার পর জয়া নাকি রেখাকে বলেছিলেন যতো কিছুই হয়ে যাক না কেনো তিনি তার স্বামীকে কোনোদিন ছাড়বেন না। এই ওয়াদা রেখেছেন জয়া আজও পর্যন্ত একসঙ্গে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন-জয়া বচ্চন দম্পতি। কিন্তু মিসেস বচ্চন হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো রেখার।
১৯৮৪ সালে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেখা বলেছিলেন, ‘কেনো তিনি (অমিতাভ বচ্চন) এটি করবেন না? তিনি তার ক্যারিয়ার, পরিবার ও সন্তানদের রক্ষার জন্য এমনটি করেছেন। তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও আমার প্রতি তার ভালোবাসা কেনো সাধারণ জনগণকে জানাতে হবে? আমি তাকে ভালোবাসি তিনিও আমাকে ভালোবাসেন এটি সত্যি। ’
যোগ করে রেখা আরও বলেছিলেন, ‘মিস্টার বচ্চন এখনও আদি যুগের মানুষ। তিনি কখনও কাউকে কষ্ট দিতে চান না। তাহলে কেনো তার স্ত্রীকে তিনি কষ্ট দেবেন?’
১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিলসিলা’ ছিলো এই জুটির শেষ কাজ। শেষবারের মতো এই ছবিতে দেখা গেছে তাদের। কিন্তু ছবিটিতে কাজ করার আগে থেকেই তাদের মধ্যে প্রেম চলছিলো। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক যশ চোপড়া বলেছিলেন, ‘সিলসিলা’ ছবির দৃশ্যধারণের সময় আমি অনিশ্চয়তা ও ভয়ের মধ্যে থাকতাম। কেননা এক বাস্তব জীবনের গল্প তুলে ধরা হবে রূপালি পর্দায়। বাস্তব জীবনের মতোই জয়া থাকবেন অমিতাভের স্ত্রী ও রেখা থাকবেন প্রেমিকা। কিন্তু যাই হোক না কেনো তারা ছবিটির কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ করেছিলেন। ”
‘সিলসিলা’ ছবির কাজ শেষেই ফাটল ধরলো অমিতাভ-রেখার সম্পর্কে। অমিতাভ বচ্চনকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন রেখা। কেননা তিনি অন্য নারী হয়ে থাকতে চাননি বলিউডের এই অভিনেতার জীবনে। এ ছাড়া তিনি এটিও বুঝতে পেরেছিলেন বিগ বি তার স্ত্রী জয়াকে কোনোদিন ত্যাগ করবেন না। কিন্তু রেখার এই সিদ্ধান্তে হয়তো আপত্তি ছিলো অমিতাভের। আর এরই মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে তাদের বাস্তব ও রূপালি পর্দার প্রেম।
তবু তারপরও, এখনও অমিতাভের নামে কপালে সিঁদুর পরেন রেখা! এ এক বিস্ময়কর প্রেম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
বিএসকে/এসও