ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

গুরুতর অসুস্থ লতা মঙ্গেশকর, হাসপাতালে ভর্তি

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
গুরুতর অসুস্থ লতা মঙ্গেশকর, হাসপাতালে ভর্তি

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর গুরুতর অসুস্থ। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে রোববার (১০ নভেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে তাকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তবে বর্তমানে প্রবীণ এই গায়িকার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা যায়।

রোববার দিনগত রাতে লতা মঙ্গেশকরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও এই সুর সাম্রাজ্ঞির অসুস্থতার খবর প্রকাশ পায় সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায়।

হাসপাতালের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, রোববার রাত দেড়টা নাগাদ লতা মঙ্গেশকরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বর্তমানে তিনি শীর্ষ মেডিক্যাল অ্যাডভাইজর ডা. ফারুক ই উদওয়াদিয়ারের তত্বাবধানে আইসিইউ-তে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি লতা মঙ্গেশকরের নিউমোনিয়া এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়েছে।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ইন্দোরে মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। এরপর ৭০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গান ও সুরের ইন্দ্রজালে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। চলতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর তার বয়স ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে।  

লতার বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন শাস্ত্রীয়সংগীত শিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা। মা শেবন্তী ছিলেন গৃহিণী। লতার তিন ছোট বোন আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও মীনা মঙ্গেশকর এবং ছোট ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

১৯৪২ সালে লতার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ১৩ বছর বয়সী লতাকে পরিবারের আয়ের জন্য হাল ধরতে হয়। এজন্য গান গাওয়া ও অভিনয়ের পথে পা বাড়ান তিনি।

লতা মঙ্গেশকর প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি সিনেমা ‘কিতি হাসাল’-এর (১৯৪২) জন্য। এরপর ‘মজবুর’ (১৯৪৮) সিনেমায় ‘দিল মেরা তোড়া’ শিরোনামের একটি গানে কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। তবে তার প্রথম তুমুল জনপ্রিয় গান হলো ‘মহল’ (১৯৪৯) সিনেমার ‘আয়েগা আনেওয়ালা’। এতে অভিনয় করেন প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেত্রী মধুবালা।

পঞ্চাশের দশকে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন লতা মঙ্গেশকর। তখন থেকেই তার ক্যারিয়ার ক্রমে উঁচুতে উঠেছে। তবে পঞ্চাশের দশকে শচীন দেব বর্মণের সঙ্গে দ্বৈরথের কারণে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে কাজ করেননি।

শচীন দেব বর্মণের পুত্র রাহুল দেব বর্মণের সুরে অনেক গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘পরিচয়’ (১৯৭২) সিনেমার ‘বীতি না বিতাই’। এর জন্য ১৯৭৩ সালে সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

১৯৭৪ সালে সবচেয়ে বেশি গানের শিল্পী হিসেবে গিনেস বুকে স্থান পান লতা মঙ্গেশকর। নব্বই দশকে এ আর রাহমান ও প্রয়াত গজল সম্রাট জগজিৎ সিংয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। প্রয়াত যশ চোপড়ার প্রায় সিনেমার গানেই কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

গান গেয়ে অনেক বহু সম্মাননা অর্জন করেছেন লতা মঙ্গেশকর। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মভূষণ (১৯৬৯), দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯), ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৩), পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯), এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ (২০০১)। সর্বশেষ চলতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি ‘ডটার অব দ্য ন্যাশন’ উপাধি লাভ করেন।

১৯৯০ সালে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েন লতা মঙ্গেশকর। তার প্রযোজিত সিনেমা ‘লেকিন’ (১৯৯০) পরিচালনা করেন গুলজার। এতে ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ গানের জন্য তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান লতা। এটি সুর করেন তার ছোট ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

৯০ বছর বয়সেও তার জাদুকরী গায়কি নিয়ে সঙ্গীতজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই রয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।