১৯৬৫ সালের ১৪ মার্চ জন্ম নেন আমির খান। অর্থাৎ ৫৫ বছর হলো তার বয়স।
মাত্র আট বছর বয়সে নাসির হোসেন পরিচালিত ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ (১৯৭৩) সিনেমায় একটি তুমুল জনপ্রিয় গানে প্রথমবার বড় পর্দায় দেখা যায় আমির খানকে। এরপর বাবা ও চাচার হাত ধরে বিভিন্ন সিনেমায় অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা ঘিরেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি।
ষোল বছর বয়সে বন্ধু আদিত্য ভট্টাচার্য ৪০ মিনিটের একটি মৌন চলচ্চিত্র বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাতে মূল চরিত্রে রাখা হয় আমির খানকে। কিন্তু আমিরের মা-বাবার ইচ্ছা ছিল তিনি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হবেন। চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়ুক আমির, এটা তারা চেয়েছিলেন না। যা হোক, ‘পরনোইয়া’ নামের ওই মৌন চলচ্চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমিরকে চলচ্চিত্রেই ক্যারিয়ার গড়ার জন্য উৎসাহিত করে। ওই চলচ্চিত্রে নীনা গুপ্তা এবং ভিক্টর ব্যানার্জিও অভিনয় করেছিলেন।
‘অবান্তর’ নামের একটি থিয়েটারে কাজ করেছিলেন আমির খান। এ সূত্রেই মঞ্চে তার অভিষেক হয়।
হাই স্কুলের পড়াশুনা শেষ করার পর আর পড়তে চাননি আমির খান। বরং চাচা নাসির হোসেনের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ‘মঞ্জিল মঞ্জিল’ (১৯৮৪) এবং ‘জবরদস্ত’ (১৯৮৫) ছিল তার প্রাথমিক কাজ।
আমির খান অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘হোলি’ (১৯৮৪) ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। এর চার বছর পর তাকে বড় পর্দায় আনেন চাচাত ভাই মনসুর। মনসুর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ছিল ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ (১৯৮৮)। জুহি চাওলার বিপরীতে আমির খানের এই সিনেমাটি দারুণ সাফল্য পায়। এর মধ্য দিয়েই তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আমির খান ও জুহি চাওলা দু’জনেই।
১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দুর্দান্ত সফল ক্যারিয়ার ছিল আমির খানের। এ সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘দিল’, ‘দিল হ্যায় কি মন্ত নেহিঁ’, ‘রঙ্গীলা’, ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘লগান’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’ ইত্যাদি।
২০০১ সালে স্ত্রী রীনা দত্তের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর চলচ্চিত্র থেকে কিছুকালের বিরতি নেন আমির খান। ২০০৫ সালে ‘মঙ্গল পাণ্ডে’ সিনেমার মধ্য দিয়ে আবার বড় পর্দায় ফেরেন তিনি। ২০০৬ সালে বিখ্যাত ‘রঙ দে বাসন্তি’ অনেক পুরস্কার এনে দেয় তাকে। একই বছর সাফল্য আনে ‘ফানা’ও। এরপর ‘তেরে জমিন পর’ (২০০৭) পুরস্কারে পুরস্কারে ঝুলি ভরে দেয় আমিরের। ‘রঙ দে বাসন্তি’ ও ‘তেরে জামিন পর’ দু’টি সিনেমাই অস্কারের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিল।
সিনেমার পাশাপাশি টেলিভিশনে ‘সত্যমেব জয়তে’ নামের একটি অনুষ্ঠানেও দারুণ সাফল্য ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আমির খান। এছাড়া মাঝেমধ্যেই ছোটপর্দায় উপস্থিত হন বিভিন্ন উপলক্ষে।
২০০৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আমির খান। ‘ঘজিনি’র পর ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়।
আমিরের বাবা তাহির হোসেন ‘কারাভান’ (১৯৭১) সিনেমার মধ্য দিয়ে আগেই চীনের বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। বাজারটি দীর্ঘদিনের পরিচিত তার। তাই নিজের ছেলেকে তিনি নতুন চীনের কাছে পরিচয় করে দেন। ‘থ্রি ইডিয়টস’র মধ্য দিয়ে চীনের বাজারে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন ও দারুণ সাফল্য পান আমির খান। এরপর আমিরের আরও সিনেমা মুক্তি পেয়েছে চীনে। তার সর্বকালের ব্লকবাস্টার ‘দঙ্গল’ (২০১৬) চীনে দারুণ ব্যবসা করে।
বলিউডের সর্বকালের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টার ‘দঙ্গল’র পর ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ (২০১৭) এবং ‘থাগস অব হিন্দুস্তান’ (২০১৮) অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি।
২০১৯ সালের ১৪ মার্চ, আমির খান তার ৫৪তম জন্মদিনে ঘোষণা করেন তার আগামী সিনেমা হবে ‘লাল সিং চাড্ডা’। এটি হলিউডের বিখ্যাত ‘ফরেস্ট গাম্প’ সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক। ২০২০ সালেই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা।
আমির খান তার অভিনয়, চিত্রপ্রযোজনা, পরিচালনা, টিভি উপস্থাপনা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে লাখো ভক্তের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। তার কাছ থেকে এরকম আরও অনেক চমৎকার কাজ সবসময়ই প্রত্যাশা করেন তার ভক্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২০
এমকেআর