কিন্তু চাইলে অনায়েসে বাবার শেষকৃত্যে যোগ দিতে পারতেন মিঠুন চক্রবর্তী। কারণ তিনি ছিলেন ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য, ফলে ভিভিআইপি বন্দোবস্ত তার প্রাপ্য।
এই কিংবদন্তি বলেছিলেন, যেখানে সাধারণ থেকে শুরু করে গরীব মানুষ সংকটে। এই সংকটের সময় আমি এমন কোনো বাড়তি সুবিধা নিতে রাজি নই। অনেকেরই আমার মত ভিনরাজ্যে পরিবারে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। তারা যখন লকডাউনের নিয়ম মেনে চলছেন তাহলে আমি নিয়ম ভাঙবো কেন?
আর সে কারণেই তার বড় ছেলে মিমোই শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছিলেন।
আপাতত কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালোরে বসবাস করলেও, লকডাউনে বিধ্বস্ত পশ্চিম বাংলাবাসীদের কথা কখনোই ভোলেনি মিঠুন। যে কারণে ওখানে বসেই পরিকল্পনামাফিক করোনা ত্রাণের কাজে সহযোগিতা করছেন তিনি।
২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার এমপি হয়েছিলেন মিঠুন। তারপর আড়াই বছরের একটু বেশি সময় তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, বিশ হাজার কোটি রুপির আর্থিক কেলেঙ্কারি ‘সারদা কাণ্ড’-এ তার নাম জড়ানোর পর তিনি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি সারদার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে যে ২০ কোটি অর্থ উপার্জন করেছিলে তাও ফেরত দিয়ে দেন সরকারকে। এরপরই বঙ্গবাসীর থেকে অভিমানে অন্তরাল চলে যান মিঠুন। এরপর শেষ কলকাতায় এসেছিলেন ২০১৮ সালে। কলকাতায় শুটিং করেছিলেন সোহম আর শ্রাবন্তীর সঙ্গে ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ রিয়েলিটি শো’তে।
এরপর তার এ বছর মার্চে কলকাতায় আরও একটা সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই ছবি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে।
অভিনেত্রী শ্রাবন্তী বলেন, আমি শৈশবে থেকেই দাদার ভক্ত। দাদাকে খুব মিস করি। উনি এমনভাবে সবার সঙ্গে কথা বলেন, যেন উনি তাদের পরিবারেরই মানুষ। কলকাতাকে দাদা খুব ভালোবাসেন।
মিঠুনকে নিয়ে সোহমের কথা, যখনই মিঠুন আঙ্কেলের নামে কিছু অশুভ খবর শুনি, বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। একবার শুনেছিলাম, তার শরীর খুব খারাপ। কোমরে এত ব্যথা যে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেন না। কিছুদিন বাদে শুনলাম দেশের বাইরে চলে গিয়েছেন। তারপর শুনলাম ভারতে ফিরেছেন। ভালো-মন্দ যে কোনো খবর আমার কানে আসে। কিন্তু সরাসরি খবর নিতে পারি না কারণ মিঠুন আঙ্কেল মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না।
সেই অভিমানী মিঠুন ফের পশ্চিমবাংলায় অর্থসাহায্য চালু করলেন করোনা সংকটকালে। তার ত্রাণ অসহায়দের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সমাজসেবী ‘ভারতী’ নামে একটি এনজিওর মাধ্যমে। যা পাঠানো হচ্ছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে।
মিঠুন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তাকে সবাই পাচ্ছেন কিভাবে? এমন প্রশ্ন সবার মধ্যেই ছিল। কিন্তু জানা যায়, অসহায়দের মধ্যে কেউ কেউ মিঠুনের স্ত্রী যোগিতা চক্রবর্তীর ফোন নাম্বার জোগাড় করে সেখানে অনুরোধ পাঠাচ্ছেন। সেই অনুরোধের উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত মনে হলে মিঠুন অনলাইনে পেমেন্ট করে দিচ্ছেন। এনজিও পরিচালকদের সঙ্গে তার এখনোও কোনও বাক্য আলাপই হয়নি বলেও জানা যায়।
মিঠুন যে এই করোনাকালে সহযোগিতা করছে তা নয়। দীর্ঘ কুড়ি পঁচিশ বছর ধরে মিঠুন পশ্চিমবঙ্গে দুর্গতদের হয়ে কাজ করে আসছেন। হিসেব বলছে, কখনো নিজের থেকে, কখন সংগ্রহ করে, সব মিলিয়ে দুর্গতদের জন্য এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কোটি রুপি সহযোগিতা করেছেন তিনি। কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবাংলায় মিঠুনের না আছে কোন জমি, না আছে কোনো বাড়ি-গাড়ি।
কিন্তু এখনো পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ সহযোগিতা চাইলে না করেন না মিঠুন। আর সে কারণে এ রাজ্যে মিঠুনের গোপন নাম ‘ফাদার তেরেসা’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২০
ভিএস/জেআইএম